বিশ্ব পরিবেশ দিবসে ঐতিহাসিক সম্মান অর্জন করল কলকাতা। দেশের মধ্যে পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ অবদানের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে সেরার স্বীকৃতি পেল কলকাতা পুরসভা। শুধু স্বীকৃতি নয়, পুরসভাকে ২০০ কোটি টাকার অনুদানও দিয়েছে কেন্দ্র। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে এদিন সমাজ মাধ্যমে শুভেচ্ছা জানান রাজ্যবাসীকে।
কলকাতার মেয়র তথা রাজ্যের পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম জানান, কেন্দ্রের এই অনুদানের মধ্যে ১৮৩ কোটি টাকা খরচ করা হবে পরিবেশ সংক্রান্ত উন্নয়ন প্রকল্পে, এবং বাকি ১৭ কোটি টাকা পুরসভার কর্মীদের উৎসাহ ভাতা হিসেবে বরাদ্দ করা হবে। এই অর্থ গাছ লাগানো, কঠিন বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, নিকাশি ব্যবস্থার উন্নয়ন, জলাধার সংস্কার, এবং বায়ুর গুণমান বৃদ্ধি করতে কাজে লাগানো হবে।
টাউন হলে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে মেয়র বলেন, ‘এটা শুধু পুরস্কার নয়, এটা আমাদের একটা বড় দায়িত্বের প্রতীক। আজকের দিনে পরিবেশ রক্ষা শুধুমাত্র সরকারের কাজ নয়। শহরের প্রতিটি নাগরিককেও এগিয়ে আসতে হবে।’ তাঁর কথায়, ‘আজ যেখানে জমির আকাল, সেখানে গাছ লাগানোর জায়গাও কমে গিয়েছে। তাই ছাদে, বারান্দায়, এমনকি একটা টব পেলেও তাতে গাছ লাগান। যে যতটুকু পারেন, ততটুকু করুন। সবুজই আমাদের ভবিষ্যৎ।’ দীর্ঘদিন ধরে বিরোধীদের অভিযোগ ছিল, কলকাতায় দূষণের মাত্রা বাড়ছে, পরিবেশ নিয়ে তেমন কাজ হচ্ছে না। কিন্তু এবার কেন্দ্র নিজেই কলকাতার পরিবেশ রক্ষার কাজের স্বীকৃতি দিল, যা নিয়ে বিরোধীদের কটাক্ষ করতে ছাড়েনি শাসকদল।
একইদিনে কলকাতা পুরসভা চালু করেছে ‘ক্লাইমেট অ্যাকশন প্ল্যান’, যা দেশের মধ্যে প্রথম। এই পরিকল্পনার মাধ্যমে শহরের দরিদ্র, প্রান্তিক এবং ঝুঁকিপূর্ণ মানুষদের জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে রক্ষা করতে একটি দীর্ঘমেয়াদি কাঠামো তৈরি করা হবে। মেয়র বলেন, ‘শহরের পরিবেশ খারাপ হলে সবচেয়ে বেশি ভোগে গরিব মানুষ। তাই এই কর্মপরিকল্পনা শুধু পরিবেশ বাঁচানোর জন্য নয়, সামাজিক ন্যায়ের জন্যও।’ তিনি জানান, এই পরিকল্পনার মাধ্যমে স্কুল-কলেজ, হাউজিং কমপ্লেক্স, বাজার, হাসপাতাল—সব জায়গায় সচেতনতা ছড়ানো হবে।
কলকাতা পুরসভার তরফে জানানো হয়েছে, এক মাসব্যাপী পরিবেশ সচেতনতামূলক কর্মসূচি চলবে। বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে এদিন শহরের নানা জায়গায় গাছ লাগানো হয়। পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে শুরু হয় অনুষ্ঠান। স্কুলের ছাত্রছাত্রী ও বিভিন্ন ক্লাবের সদস্যদের অংশগ্রহণে কলেজ স্কয়ার পর্যন্ত এক বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রাও হয় । হাতে প্ল্যাকার্ড, সবুজের বার্তা নিয়ে তাঁরা হাঁটেন শহরের প্রাণকেন্দ্রে। পুরসভার এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চেয়ারপার্সন মালা রায়, মেয়র ফিরহাদ হাকিম, দেবাশিস কুমার, স্বপন সমাদ্দার-সহ একাধিক বোরো চেয়ারম্যান, কাউন্সিলর এবং পরিবেশ কর্মীরা।
মেয়র পারিষদ স্বপন সমাদ্দার জানিয়েছেন, দেশের মধ্যে কলকাতা প্রথম শহর যেখানে মানুষ হাতে-কলমে শিখবে কার্বন ক্রেডিট কী, দূষণ কীভাবে মাপা হয়, এবং কীভাবে নিজেদের ভূমিকা নিতে হবে। তিনি বলেন, ‘এটা শুধু শহরের জন্য নয়, দেশের পরিবেশ শিক্ষা ক্ষেত্রেও নতুন দৃষ্টান্ত।’