বেঁচে থাকা কখনও কখনও অলৌকিক মনে হয়। দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমার অশ্বিনী মাইতির খেয়াঘাটে শনিবার সকালে ঘটে গেল তেমনই এক ঘটনা। নদীতে কাঁকড়া ধরতে নেমে কুমিরের ভয়াবহ আক্রমণের মুখে পড়ে ঘণ্টাখানেকের রক্তাক্ত লড়াই শেষে প্রাণে বাঁচলেন প্রণতি প্রামাণিক।
জানা গিয়েছে, বছর ৩৭-এর প্রণতি পেশায় মৎস্যজীবী। সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় অবস্থা। স্বামী গৌতম প্রামাণিক পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে রাজ্যের বাইরে কাজ করেন। গ্রামের বাড়িতে দুই কন্যা— একজন একাদশে, অন্যজন দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছে। মেয়েদের পড়াশোনা চালাতে প্রতিদিনই নদীতে নেমে কাঁকড়া আর মাছ ধরেন প্রণতি। সেই রুটিন মতোই শনিবার সকালে অশ্বিনী মাইতির খেয়াঘাটের ধারে নদীতে নামেন তিনি।
Advertisement
নদীর জলে ছাঁকনি নামিয়ে মাছ খোঁজার সময়ই অজান্তে পিছন থেকে হামলা চালায় এক প্রকাণ্ড কুমির। মুহূর্তের মধ্যে প্রণতির কোমর জড়িয়ে ধরে তাঁকে জলে টেনে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। হঠাৎ আক্রমণে প্রথমে দিশেহারা হয়ে পড়লেও হার মানেননি তিনি। প্রাণে বাঁচতে মরিয়া হয়ে নদীর ধারে এক গাছের ডাল চোখে পড়তেই সর্বশক্তি দিয়ে সেটিকে আঁকড়ে ধরেন। পরনের কাপড় গাছের সঙ্গে জড়িয়ে ফেলেন। যেন জলের টানে কুমির তাঁকে টেনে নিয়ে যেতে না পারে।
Advertisement
এদিকে কুমিরও থেমে থাকেনি। একের পর এক কামড় আর লেজের আঘাতে রক্তাক্ত করে তোলে প্রণতির শরীর। কিন্তু প্রাণপণ লড়াই চালিয়ে যান তিনি। প্রায় এক ঘণ্টা ধরে চলতে থাকে কুমির ও মানুষের এই ভয়াবহ লড়াই। নদীর ধারে তাঁর আর্ত চিৎকারে ছুটে আসেন স্থানীয় বাসিন্দারা। লাঠিসোঁটা নিয়ে তাঁরা কুমিরটিকে তাড়ানোর চেষ্টা করেন। শেষপর্যন্ত বেগতিক বুঝে প্রাণ বাঁচাতে শিকার ছেড়ে দেয়। ফিরে যায় নদীর গভীরে।
রক্তাক্ত অবস্থায় প্রণতিকে উদ্ধার করে স্থানীয়রা পাথরপ্রতিমা গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যান। চিকিৎসকরা জানান, তাঁর শরীরের একাধিক জায়গায় গভীর ক্ষতচিহ্ন রয়েছে। তবে বিপদ আপাতত কেটে গিয়েছে।
গ্রামের মানুষ প্রণতির এই সাহসিকতায় মুগ্ধ। কারও কথায়, ‘ওই সাহস না থাকলে আজ হয়তো তাঁকে আমরা হারাতাম।’ কেউ বলছেন, ‘ও সত্যিই মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছে।’
জীবনের সঙ্গে এই যুদ্ধের পর হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে প্রণতির একটাই কথা, ‘মেয়েদের মুখটা চোখে ভেসে উঠেছিল। তাই মরতে পারিনি।’ আতঙ্ক পিছু না ছাড়লেও সুন্দরবনের এই বীর নারীর সাহসিকতা আজ গোটা এলাকায় এক অনুপ্রেরণার গল্প হয়ে উঠেছে।
Advertisement



