গেরুয়া শিবিরকে রেড রোডে হনুমান জয়ন্তীর শোভাযাত্রার অনুমতি দিল না কলকাতা হাইকোর্টের সিঙ্গল বেঞ্চ। বিষয়টি নিয়ে প্রধান বিচারপতির দ্বারস্থ হল হিন্দু সেবা দল। এ বিষয়ে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ জানিয়েছেন, শোভাযাত্রার জেরে কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। সেজন্য এই সিদ্ধান্ত। তবে এই রায় মানতে নারাজ আবেদনকারী হিন্দু সেবা দল নামে সংগঠনটি। তাঁরা বিচারপতি ঘোষের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে প্রধান বিচারপতি টিএস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয়। কিন্তু সেখানেও ধাক্কা খেল সংগঠনটি। ডিভিশন বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, হিন্দু সেবা দল চাইলে রাজ্যের প্রস্তাবিত দুটি বিকল্প জায়গা – আর আর অ্যাভিনিউ কিংবা শহিদ মিনারে কর্মসূচি করতে পারে। তবে রেড রোডে এই কর্মসূচি করা যাবে না।
শুক্রবার সকালে প্রথমে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে এই মামলার শুনানি হয়। তিনি জানতে চান, রেড রোডে হনুমান জয়ন্তী করার কারণ কী? সেসব উত্তর দেওয়ার আগেই সিঙ্গল বেঞ্চের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চের দ্বারস্থ হয় হিন্দু সেবা দল। মামলার অনুমতিও দেয় প্রধান বিচারপতির ডিভিশন বেঞ্চ। জরুরি ভিত্তিতে শুনানির আর্জিও মঞ্জুর হয়। শুক্রবার সিঙ্গল বেঞ্চের পর যথাসময়ে ডিভিশন বেঞ্চেও মামলার শুনানি হয়। সেই শুনানিতে আবেদনকারী অতীতে রেড রোডে একাধিক অনুষ্ঠানের খতিয়ান তুলে ধরেন। মামলাকারী দাবি করেন, কলকাতা পুলিশের ম্যারাথন এই রোডেই হয়েছিল। তাতে অংশগ্রহণ করেছিলেন অন্তত ২৫ হাজার। আবার কেন্দ্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করার জন্য এই রেড রোডেই দু’দিন মঞ্চ বেঁধে অবস্থান করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। তবে একথা শোনার পরেও আদালত রেড রোডে এই অনুষ্ঠানের অনুমতি না দিয়ে শহরের অন্য কোনও স্থান বেছে নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছে।
Advertisement
এদিন হাইকোর্টের ডিভিশন বেঞ্চের তরফে জানানো হয়েছে, হিন্দু সেবা দল চাইলে রাজ্যের প্রস্তাবিত দুটি বিকল্প জায়গা – আর আর অ্যাভিনিউ কিংবা শহিদ মিনারে কর্মসূচি করতে পারে। তবে রেড রোডে এই কর্মসূচি করা যাবে না। ফলে সিঙ্গল বেঞ্চের পর ডিভিশন বেঞ্চেও ধাক্কা খেল আবেদনকারী হিন্দু সেবা দল। এর আগে শুক্রবার শুভেন্দু অধিকারীকে হনুমান জয়ন্তী পালনের অনুমতি দেয় হাইকোর্ট। তবে সেই অনুমতিতে বেশ কয়েকটি শর্ত বেঁধে দেওয়া হয়।
Advertisement
উল্লেখ্য, গত ১লা এপ্রিল রেড রোডে হনুমান জয়ন্তী পালনের অনুমতি চেয়ে কলকাতা পুলিশের দ্বারস্থ হয়েছিল হিন্দু সেবা দল। তার আগে সেনার পক্ষ থেকে অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু কলকাতা পুলিশের পক্ষ থেকে অনুমতি না পেয়ে বিষয়টি নিয়ে হাইকোর্টে পৌঁছয় তারা। শুক্রবার বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের এজলাসে মামলাটি উঠলে তিনি অনুমতি দিতে নাকচ করেন। তখন তারা প্রশ্ন করে, আগামীকাল হনুমান জয়ন্তী, সমস্ত প্রস্তুতি হয়ে গিয়েছে। আর্মির জায়গা ওটা। তাদের কোনও সমস্যা নেই। তাহলে সমস্যা কোথায়? হিন্দু সেবা দলের আইনজীবী আদালতে আরও বলেন, রেড রোডে অন্য সম্প্রদায়কে ধর্মীয় অনুষ্ঠান পালন করতে দেওয়া হয়। বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে রাস্তা বন্ধ করে চলে ধর্মীয় আচার ও শুভেচ্ছা বিনিময়। তাহলে তাদের কেন অনুমতি দেওয়া হল না?
এই প্রশ্নের জবাবে বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষ পাল্টা প্রশ্ন করেন। তিনি নির্দিষ্ট করে রেড রোডে এই অনুষ্ঠান করার কারণ জানতে চান। এরপর বিচারপতি হিন্দু সেবা দলের আইনজীবীর উদ্দেশে বলেন, প্রায় ১০০ বছরেরও বেশি সময় ধরে, অর্থাৎ ‘খিলফাৎ আন্দোলনের সময় থেকে রেড রোডে একটি নির্দিষ্ট ধর্মের মানুষ অনুষ্ঠান করে আসছেন। আপনারা বলুন আগে এই আয়োজন করেছিলেন, আজ পুলিশ অনুমতি দিচ্ছে না। তাহলে আমি দেখছি।’ তিনি জানান, হলফনামা আদান প্রদানের প্রয়োজন রয়েছে। রাজ্যকে ৬ সপ্তাহের মধ্যে হলফনামা দিতে হবে। তার ২ সপ্তাহের মধ্যে উত্তর দেবেন মামলাকারী। আগামী জুলাই মাসে এই মামলার পরবর্তী শুনানি।
এদিন আদালতে শুনানি পর্বে দুর্গাপুজোর কার্নিভাল নিয়েও প্রশ্ন ওঠে। তার জবাবে বিচারপতি ঘোষ বলেন, ইউনেসকো থেকে মানুষ আসেন, সেটার সঙ্গে হনুমান জয়ন্তীর কোন যোগ নেই। তিনি আরও বলেন, যেকোনও ধর্মের মানুষজন যেকোনও জায়গায় নিজ নিজ ধর্মের প্রচার করতে পারেন। তাতে কারও কোনও সমস্যা নেই কিন্তু আইনশৃঙ্খলার বিষয়টা সম্পূর্ণ পুলিশ দেখবে।
Advertisement



