যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে তৃণমূলপন্থী শিক্ষক-অধ্যাপক সংগঠন ওয়েবকুপার বার্ষিক সাধারণ সভার আগে উত্তেজনা। বৈঠক সেরে বেরনোর সময় পড়ুয়াদের বিক্ষোভের মুখে পড়লেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। অতি বাম ছাত্র সংগঠনের হাতে হতে হয় চরম হেনস্থা। তাঁর গাড়ির চাকার হাওয়া খুলে দেওয়া থেকে শুরু করে ভাঙচুর পর্যন্ত চালানো হয়। ভেঙে দেওয়া হয় গাড়ির ‘লুকিং গ্লাস’। শুধু তাই নয়, মন্ত্রীর সঙ্গে থাকা পাইলট কারেও ভাঙচুর চালানো হয়। ইটের আঘাতে আহত হয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এমনকি শিক্ষামন্ত্রী গাড়ি থেকে নেমে ছাত্রদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তাঁকে ‘চোর চোর’ এবং ‘গো ব্যাক’ স্লোগান দেন বিক্ষোভকারী ছাত্ররা। তাঁর গাড়ির বনেটে লিখে দেওয়া হয় ‘ব্রাত্য বসু চোর‘!
বিক্ষোভকারী পড়ুয়াদের হাত থেকে নিস্তার পাননি অধ্যাপকরাও। তাঁদের সঙ্গে পড়ুয়াদের রীতিমতো ধ্বস্তাধ্বস্তি শুরু হয়ে যায়। লাঠি হাতে তাড়া করেন যাদবপুরের অধ্যাপক তথা ওয়েবকুপার সদস্য ওমপ্রকাশ মিশ্রকে। বাম ও অতি বাম ছাত্র সংগঠনের কয়েকজন পড়ুয়া এই কার্যকলাপের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বলে অভিযোগ। এই ঘটনার জেরে এক পড়ুয়ার মাথা ফেটে গিয়েছে।
Advertisement
এদিকে শিক্ষামন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পরেও বিশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আসেনি। অভিযোগ, বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে তৃণমূল প্রভাবিত কর্মচারী সংগঠনের অফিসে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেওয়া হয়। অন্যদিকে বাম ছাত্র সংগঠন এসএফআই-এর পড়ুয়ারা যাদবপুর এইট বি মোড়ে রাস্তা অবরোধ করেন। অবরোধকারীদের অভিযোগ, শিক্ষামন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরনোর সময় গাড়ির ধাক্কায় মাথা ফেটেছে এক পড়ুয়ার। ছাত্র-ছাত্রীদের বক্তব্য, ‘একজন শিক্ষামন্ত্রীকে ঘিরে বিক্ষোভ দেখানো হচ্ছিল। তাই বলে গাড়ি চাপা দিয়ে চলে যাবেন তিনি? এটা কি কাম্য?’ যদিও পরে নিত্যযাত্রীদের চাপে ছাত্র ছাত্রীরা সেই অবরোধ তুলতে বাধ্য হন। শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর ওপর নজিরবিহীন হেনস্থার প্রতিবাদে পথে নেমেছেন তৃণমূলের নেতা, কর্মী ও জনপ্রতিনিধিরা।
Advertisement
প্রসঙ্গত শিক্ষামন্ত্রীর গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখানোর চেষ্টা করেন বিক্ষোভকারী ছাত্ররা। তখনই দেখা যায় ব্রাত্য বসুর গাড়ির ধাক্কায় ছিটকে গিয়েছেন এক ছাত্র। তাতেই মাথা ফেটে যায় তাঁর। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে উদ্ধার করেন ছাত্র-ছাত্রীরা।
ঘটনার পর জখম শিক্ষামন্ত্রীকে চিকিৎসার জন্য এসএসকেএম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখান থেকে বেরিয়ে ব্রাত্য বলেন, গাড়ির কাচ ভেঙে তার টুকরো হাতে-মুখে লেগেছে। হাতে এক্স-রে করা হয়েছে। ব্রাত্যকে দেখতে এসএসকেএম চত্বরে পৌঁছে যান তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, ‘আমাদের ধৈর্য এবং সহনশীলতাকে কেউ যেন দুর্বলতা ভেবে না নেয়। আমরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল করি। হামলাকারীদের গণতান্ত্রিক ভাবেই জবাব দেওয়া হবে।’
জানা গিয়েছে, এদিন ওয়েবকুপা অর্থাৎ তৃণমূলপন্থী শিক্ষক-অধ্যাপক সংগঠনের বার্ষিক সাধারণ সভা ছিল। সেই সভা চলাকালীন সকাল থেকেই অশান্তির পরিবেশ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে। সভা শুরু হতেই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। অভিযোগ, শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুর ভাষণ চলাকালীন পিছনের দরজা দিয়ে ঢুকে পড়েন বাম-সমর্থিত ছাত্র সংগঠনের কয়েকজন সদস্য। পোস্টার হাতে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন বাম ছাত্ররা। পালটা তৃণমূলের তরফে স্লোগান দেওয়া হয়। ধস্তাধস্তিও হয় একপ্রস্থ। এরপর চেয়ার ভাঙচুর ও ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়ে যায়। এভাবে ওয়েবকুপা-এসএফআইয়ের হাতাহাতিতে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় রণক্ষেত্রের আকার ধারন করে। এমন ধুন্ধুমার পরিস্থিতিতে প্রেক্ষাগৃহের মধ্যেই অসুস্থ হয়ে পড়েন বেশ কয়েকজন অধ্যাপক। এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখে শিক্ষামন্ত্রী বিক্ষোভরত বাম ছাত্র সংগঠনকে লক্ষ্য করে সরাসরি একাধিক প্রশ্ন ছুঁড়ে দেন।
শিক্ষামন্ত্রী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরনোর আগে বলেন, ‘এই গুন্ডামি চলতে পারে না। পড়ুয়াদের চার জন প্রতিনিধির সঙ্গে কথা বলতে পারি। কিন্তু সবাই মিলে গুন্ডামি করলে মুশকিল। তবে আমি কোনও প্ররোচনায় পা দেব না। যাঁরা এগুলি করছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে উপাচার্য পদক্ষেপ করবেন।’
এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সম্পর্কে ব্রাত্য বলেন, ‘এটা যদি উত্তরপ্রদেশে হত, কোনও ছাত্র সংগঠন এই কাজ করতে পারত? আজকের যে ঘটনা, আমরা চাইলেই পুলিশ ডাকতে পারতম। কিন্তু আমি বারণ করেছি, শিক্ষাঙ্গনে যেন এক জনও পুলিশ না প্রবেশ করে।’ শিক্ষামন্ত্রী আন্দোলনরত বাম ছাত্র সংগঠনকে নিশানা করে আরও বলেন, যাঁরা আজ অধ্যাপকদের উপর আক্রমণ করছেন, তাঁরা শিক্ষাক্ষেত্রে গৈরিকীকরণের বিরুদ্ধে ক’টা পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন? তাঁরা তৃণমূলের অধ্যাপকদের উপর আঘাত করতে চান, কিন্তু বিজেপির ব্যাপারে তাঁরা নিশ্চুপ থাকেন।
উল্লেখ্য, এদিন বৈঠক শুরু হওয়ার আগেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র সংসদ-এর নির্বাচনের দাবিতে স্লোগান দিতে থাকে বামপন্থী ছাত্র সংগঠন এসএফআই, আইসা ও ডিএসএফ-এর সদস্যরা। আন্দোলনকারীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২ নম্বর গেট আটকে বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পাল্টা মানববন্ধনে সামিল হন তৃণমূল ছাত্র পরিষদের সদস্যরা। কিন্তু বৈঠকে যোগ দিতে এসেই বিক্ষোভকারীদের বাধার সম্মুখীন হন ব্রাত্য বসু। যার জেরে তাঁকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩ নম্বর গেট দিয়ে প্রবেশ করিয়ে ওপেন এয়ার থিয়েটারের পিছন দিয়ে মঞ্চে তোলা হয়।
Advertisement



