মনে পড়ে যাচ্ছিল বিখ্যাত সুরকার সলিল চৌধুরীর সেই বিখ্যাত ‘উজ্জ্বল এক ঝাঁক পায়রা, সূর্যের উজ্জ্বল রৌদ্রে, চঞ্চল পাখনায় উড়ছে’ গানের লাইনগুলো। সাদা ধবধবে পোশাকে একঝাঁক তরুণী। তাঁরা অংশ নিতে এসেছেন দ্য স্টেটসম্যান এবং দৈনিক স্টেটসম্যান আয়োজিত ‘বেস্ট ফেস, বেস্ট ড্রেস’ প্রতিযোগিতার প্রাথমিক পর্বে। বুধবারের মঞ্চে নিজেদের যোগ্যতার পরিচয় দেওয়ার পাশাপাশি তাঁরা নিজের নিজের ক্ষেত্রে কতটা আত্মবিশ্বাসী, তাও তুলে ধরলেন। শুধু তাই নয়, অংশগ্রহণকারী প্রতিযোগীরা প্রত্যেকে তাঁদের অভ্যন্তরীণ সৌন্দর্যকে মঞ্চে তুলে ধরার প্রাথমিক পাঠও নিয়েছেন। রপ্ত করেছেন আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে
হাঁটা-চলা, নিজের পরিচয় দেওয়া, নিজের প্রতিভাকে স্ব-মহিমায় প্রতিষ্ঠিত করার নানান টিপস্।
দ্য স্টেটসম্যান এবং দৈনিক স্টেটসম্যান সংবাদপত্রের উদ্যোগে এবারও ‘বেস্ট ফেস, বেস্ট ড্রেস’ প্রতিযোগিতার প্রাথমিক পর্বের নির্বাচন হয়ে গেল রাসবিহারীর ‘কেয়া শেঠ এক্সক্লুসিভ’ নামে পোশাক বিপণির অডিটোরিয়ামে। চতুর্থতম এই সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছিলেন মোট ৪৫ জন প্রতিযোগী। এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণের জন্য স্টেটসম্যান সংবাদপত্রের দপ্তরে মোট আবেদন জমা পড়ে ৭৫৬টি। তার মধ্যে থেকে বিচারকরা বাছাই করে নেন ৪৫টি আবেদন। প্রাথমিক পর্বে এই ৪৫ জনের মধ্যে থেকে বেছে নেওয়া হয়েছে ১২ জন প্রতিযোগীকে। আগামী ১৪ নভেম্বর এঁদের মধ্যে থেকেই চূড়ান্ত হবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে উত্তীর্ণ প্রতিযোগীদের নাম। বিচারকদের আসনে ছিলেন স্টেটসম্যান সংবাদপত্রের কলকাতা শাখার প্রধান গোবিন্দ মুখার্জি, রূপচর্চা বিশেষজ্ঞ এবং এই প্রতিযোগিতার গ্রুমিং পার্টনার কেয়া শেঠ ও তাঁর মেয়ে আত্রেয়ী শেঠ, যিনি মিষ্টি নামে বেশি পরিচিত। উপস্থিত ছিলেন ফ্যাশন ডিজাইনার এবং সেলিব্রিটি স্টাইলিস্ট অনুপম চ্যাটার্জি।
Advertisement
স্টেটসম্যান-এর কলকাতা শাখার প্রধান গোবিন্দ মুখার্জি জানালেন, যেসব প্রতিযোগীরা বিজয়ী হবেন তাঁদের হাতে তুলে দেওয়া হবে শংসাপত্র ও পুরস্কার। সংবাদপত্রে তাঁদের ছবি-সহ নাম প্রকাশ করা হবে। বুধবার যেসব প্রতিযোগীর নাম চূড়ান্ত পর্বের জন্য মনোনীত করা হয়েছে তাঁরা হলেন, আকৃতি সিং, অঞ্জলি সিং, গায়ত্রী দাস, জয়তী ভড়, জয়িতা মাইতি, রাজশ্রী সরকার, রাজিতা দেব, রিধিমা চ্যাটার্জি, ঋষিতা মৈত্র, শর্মিষ্ঠা মাইতি, আয়ুশী বিশ্বাস এবং ঈশিকা সিং।
Advertisement
অংশগ্রহণের জন্য প্রাথমিক শর্ত ছিল প্রতিযোগীর ১৮ বছর বা তার বেশি বয়স হতে হবে। স্বাভাবিকভাবেই এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছেন মেধাদীপ্ত, ঝকঝকে, কলেজ বা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরতা তরুণীরা। তাঁদের দু-চোখে স্বপ্ন অনেক বড় হওয়ার। মডেলিংয়ের পাশাপাশি কেউ সাংবাদিকতা, কেই বা সাহিত্য, কেউ বিজ্ঞান শাখার পড়ুয়া। তবে ব্যতিক্রমীও আছেন। স্টেটসম্যান নামের সঙ্গে যে ঐতিহ্য জড়িয়ে রয়েছে, এই নামের সঙ্গে যে শিক্ষা ও সংস্কৃতি জড়িয়ে রয়েছে, এই নামের আড়ালে যে বিশালতা লুকিয়ে রয়েছে, সেসবই তাঁদের অনুপ্রাণিত করেছে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে, এমনটাই জানিয়েছেন।
প্রতিযোগীদের মধ্যে রয়েছেন ১৮ বছরের তরুণী, যিনি ভবানীপুর এডুশেকন সোসাইটিতে জার্নালিজম নিয়ে পড়ছেন। জানালেন, জীবনে কোনওদিন মেকআপ নেননি। বাড়িতে মাকেও কখনও মেকআপ নিতে দেখেননি। তবে এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করার তাগিদটা এসেছে শুধুমাত্র স্টেটসম্যান আয়োজিত প্রতিযোগিতা বলেই। তাঁর আশা, এখানে সৌন্দর্যের মাপকাঠির বিচার হবে শিক্ষা, সংস্কৃতি, দৃষ্টিভঙ্গি দিয়ে, মেকআপ দিয়ে নয়। অংশ নিয়েছেন এক ঝাঁক তরুণী যাঁদের কেউ সাহিত্যে এমএ করছেন, কেউ-বা বিজ্ঞান, কেউ-বা বিএড, আবার কেউ মডেলিং বা ফ্যাশন ডিজাইনিং নিয়ে পড়াশুনো করছেন। পড়াশুনোর চাপ, সারাদিনের হাজার ব্যস্ততার মধ্যেও চলছে নিজেদের গ্রুমিং-এর কাজ।
এই প্রতিযোগিতায় যেমন অংশ নিয়েছেন ব্যস্ত চিকিৎসক, কিংবা শিক্ষক, তেমনই অংশ নিয়েছেন সরকারি সংস্থার আধিকারিকরা। তাঁদের ব্যস্ত কর্মজীবনের বাইরেও তাঁরা আগ্রহী হয়েছেন এই প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে। তাঁদের কথায়, নিজেকে ভালো রাখা, নিজের কিছু ইচ্ছেকে প্রাধান্য দেওয়ার তাগিদ থেকেই এই অংশগ্রহণ। এত ব্যস্ততার মাঝেও আগ্রহী হয়েছেন দ্য স্টেটসম্যান এবং দৈনিক স্টেটসম্যান আয়োজিত প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে।
বুধবার সৌন্দর্যের প্রাথমিক পাঠ দেন বিউটিশিয়ান কেয়া শেঠ। তিনি জানালেন, ‘আমরা সবাই যে নিখুঁত সুন্দর তা নই। কিন্তু আমাদের প্রত্যেকের মধ্যেই কিছু না কিছু সুন্দর আছে। সেটাকেই তুলে ধরতে হবে। প্রত্যেকের মধ্যেই কিছু না কিছু প্রতিভা লুকিয়ে রয়েছে, তা পরিস্ফুট করতে হবে। যেমন, কারও হয়তো হাসি সুন্দর, কারও বা কথা বলার ভঙ্গিমা সুন্দর। তবে সৌন্দর্যের মাপকাঠি শুধু বাহ্যিক নয়, নিজের প্রতিভাকে সুন্দরভাবে এবং আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তুলে ধরার কৌশল আয়ত্ত করতে হবে। ‘বেস্ট ফেস, বেস্ট ড্রেস’ মানে শুধু ভালো পোশাক আর সুন্দর মুখের জয় নয়। মঞ্চ থেকে সবাই প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় হন না। যাঁরা এগিয়ে গেলেন তাঁরা যেমন অনুপ্রাণিত হবেন, তেমনই যাঁরা প্রথম তিনজনের মধ্যে থাকতে পারলেন না, তাঁরা নিজেদের খামতিগুলো চিহ্নিত করে আরও এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন।’
পোশাকও এই প্রতিযোগিতায় খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে জানালেন ফ্যাশন ডিজাইনার এবং সেলিব্রিটি স্টাইলিস্ট অনুপম চ্যাটার্জি। প্রত্যেকের শারীরিক উচ্চতা, তাদের শারীরিক সৌন্দর্য দেখেই দৈনিক স্টেটসম্যান আয়োজিত এই প্রতিযোগিতার পোশাক নির্বাচন করা হবে বলে জানালেন তিনি। কালার স্টোরিও এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ। তাই পোশাকের রঙেও থাকবে ভিন্ন ভিন্ন মাত্রা। এককথায় অনুষ্ঠানের সঙ্গে সাযুজ্য রেখেই পোশাক নির্বাচন করা হবে বলে জানালেন ফ্যাশন ডিজাইনার।
আগামী ১৪ নভেম্বর রোটারি সদনে অনুষ্ঠিত হবে এই প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব। ভারতীয় এবং পাশ্চাত্য পোষাকে নিজেদের বাহ্যিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি বুদ্ধিমত্তা, মেধা, সামাজিকতা, ব্যক্তিত্ব এবং আত্মবিশ্বাসের সুবাস ছড়াবেন এদিনের প্রতিযোগীরা।
Advertisement



