হিন্দুত্বের জিগির তুলে আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে রাজ্য সরকারকে বিঁধলেন যোগী

পশ্চিমবঙ্গে হস্তক্ষেপের প্রয়ােজন,জানালেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যােগী আদিত্যনাথ।

Written by SNS Kolkata | May 16, 2019 4:50 pm

যোগি আদিত্যনাথ (Photo: IANS)

একদিকে হিন্দুত্ব ও অন্যদিকে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার অবনতি এই দুই ইস্যুতে তৃণমূল সরকারকে বিঁধে বারাসত কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী মৃণালকান্তি দেবনাথের সমর্থনে প্রচারে ঝড় তুললেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যােগী আদিত্যনাথ। বুধবার হাবড়ায় জনসভায় উপস্থিত হন।এই বিতর্কিত বিজেপি নেতা। মঞ্চ থেকে হিন্দুত্ব ও আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে রাজ্যের তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে একের পর এক বােমা ফাটাতে শুরু করেন যােগী।

এদিন হাবড়ার জাগ্রত সংঘের মাঠে আয়ােজিত এই জনসভায় শুরুতেই যােগী আদিত্যনাথ তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিতে হিন্দুত্বের জিগির তুলে একের পর এক প্রশ্নে তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে আক্রমণ শানান।এরই মাঝে তিনি কার্যত ধর্ম অবমাননার অভিযােগ তােলেন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে।তাঁর কথায়,বাংলায় এখন ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনিতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে।একই সঙ্গে দুর্গাপুজো বন্ধেরও যড়যন্ত্র চলছে বলে অভিযােগ তাঁর।এরই পাশাপাশি বাঙালি জাতীয়তাবাদকে উস্কে দিয়ে রবীন্দ্রনাথ,বঙ্কিমচন্দ্র,নেতাজিকে স্মরণ করে তৃণমূল সরকারের প্রতি আক্রমণ করে তিনি বলেন,রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর,নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসু,বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের মতাে মনীষীদের সারা ভারত সম্মান করে।আমরা তাদের সম্মানার্থে মুর্তি নির্মাণ করি।অথচ তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা সেই মূর্তি ভেঙে ফেলে।’রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ব্যাখ্যা,মঙ্গলবার কলকাতায় অমিত শাহর রােড শােকে কেন্দ্র করে গণ্ডগােলের জেরে বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা পড়ে।যার দায় সম্পূর্ণরূপে এসে পড়ে বিজেপির উপর।যে কারণে যথেষ্ট অস্বস্তিতে গেরুয়া শিবির।এবার সেই দায় এড়াতেই যােগীর মুখে মুর্তি ভাঙার প্রসঙ্গ উঠে আসে।

আদিত্যনাথের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন বারাসত কেন্দ্রের প্রার্থী মৃণালকান্তি দেবনাথ,কেন্দ্রীয় সম্পাদক  অরবিন্দ মেনন,রাজ্যের সহসভাপতি বিশ্বপ্রিয় রায়চৌধুরী,মহিলা যুব মাের্চার নেত্রী মৌসুমি বিশ্বাস,বারাসত সাংগঠনিক জেলা সভাপতি প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়,তাপস মিত্র প্রমুখ।প্রকাশ,যােগী সবথেকে বেশি সােচ্চার ছিলেন রাজ্যের আইনশৃঙ্খলার প্রশ্নে।বক্তব্যের বেশির ভাগ সময় জুড়েই তিনি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তৃণমূলের সরকারের সঙ্গে উত্তরপ্রদেশের সরকারের তুলনা টেনে আনেন।তাঁর বক্তব্য,রাজ্যে বর্তমানে গুন্ডাদের শাসন কায়েম হয়েছে।যুক্তি হিসাবে তিনি মঙ্গলবারের অমিত শাহের রোড-শাের প্রসঙ্গ টেনে আনেন।তিনি বলেন,গণতান্ত্রিক রোড- শােয়ে তৃণমূল যেভাবে হামলা চালাচ্ছে তা গণতন্ত্রের  কালাে অধ্যায়।আর এই হামলা এবারের নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিরাশাকে তুলে ধরছে বলে তাঁর দাবি।
এরপরই হুমকির সরে গোবলয়ের রাজ্যের এই নেতা  বলেন , ভােট গণনার পর বাংলায় জাতীয়তাবাদী সরকার কায়েম হবে।তারপরে রাজ্যের গুন্ডারা মাথা লুকোনোর জায়গা পাবে না।তাঁর এই বক্তব্য যে কেবল কথার কথা নয় তার প্রমাণ দিতে উত্তরপ্রদেশের উদাহরণ টেনে তিনি বলেন,উত্তরপ্রদেশেও এক সময় এখানকার মতাে গুন্ডা ছিল।কিন্তু বিজেপি সরকার ক্ষমতায় আসার পর তাদের অনেকেই জেলে নতুবা ‘রাম নাম সত্য হ্যায়’ হয়ে গেছে।আর যারা বাইরে আছে তারা বলছে ছেড়ে দাও ঠেলা চালিয়ে দিন গুজরান করব,আর গুন্ডামি করব না। একথা বলার পরেই যােগীর আশ্বাস,বাংলাতেও উত্তরপ্রদেশের মতাে সরকার হবে।সেখানে আর মানুষকে গুন্ডা ট্যাক্স দিতে হবে না।তবে এসবের মধ্যেও হিন্দুত্বের রক্ষক হিসেবে নিজের কৃতিত্বের কথা তুলে ধরতে ভােলেননি গেরুয়া বসনধারী যােগী।তিনি বলেন,উত্তরপ্রদেশে তিনি মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে আর একটিও দাঙ্গা হয়নি আর এই দাঙ্গা না হওয়ার কারণ হিসেবে তিনি তাঁর সরকারের কড়া অবস্থানের কথাই তুলে ধরেন।তিনি বলেন,এই প্রদেশে একই দিনে দুর্গাপুজো ও মহরম অনুষ্ঠিত হয়েছিল।কিন্তু আমি সাফ বলে দিই মহরমের জন্য দুর্গাপুজোর দিন পরিবর্তন হবে না।পারলে মহরমের দিন পরিবর্তন করা হােক।তিনি হুমকি দিয়ে বলেন , মহরমের মিছিল থেকে কোনওরকম অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটলে তা হবে শেষ শােভাযাত্রা।
পশ্চিমবঙ্গে হস্তক্ষেপের প্রয়ােজন,জানালেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যােগী আদিত্যনাথ।তবে এই হত্নক্ষেপকার হবে? সে বিষয়ে আলােকপাত করেননি তিনি।
অমিত শাহের রােড শাে-কে কেন্দ্র করে তৈরি হওয়া বিশঙ্খলার জন্য রাজ্য প্রশাসনকেই দুষছে রাজ্য বিজেপি।যদিও রাজ্য নেতাদের ভূমিকায় তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে কেন্দ্রীয় বিজেপি নেতৃত্ব,গেরুয়া শিবিরের অন্দরে গুঞ্জন এমনটাই।বুধবার রাজ্য বিজেপির সদর  দফতরে সাংবাদিক বৈঠক করে যােগী আদিত্যনাথ দাবি করেন,উত্তর কলকাতার প্রার্থী রাহুল সিনহার সমর্থনে তাঁর একটি সভা করার কথা ছিল এদিন।কিন্তু সেই সভা করতে দেওয়া হয়নি, এমনটাও দাবি করেন তিনি।পাশাপাশি রাজ্য প্রশাসনের ভূমিকার সমালােচনা করে যােগী।বলেন , উত্তরপ্রদেশে ৮০টি লোকসভা কেন্দ্র রয়েছে।কিন্তু বিগত দফাগুলির ভােটে কোথাও সামান্য সমস্যা হয়নি।তবে পশ্চিমবঙ্গে কেন হিংসার পরিবেশ তৈরি হয়েছে?এই প্রশ্নও তােলেন তিনি।
পাশাপাশি বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তৃণমূলই এই ঘটনার সঙ্গে যুক্ত।পুরো ঘটনার সিসিটিভি ফুটেজ সামনে আনার দাবিও তুলেছেন যোগী।