রেললাইন অবরোধ করে বিক্ষোভে শামিল শ্রমিকরা

শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন, তাদের ট্রেনের মধ্যে পশুর খাওয়ার অযোগ্য খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। তাদের যাত্রার জন্য দেড় হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে।

Written by SNS Lucknow | May 24, 2020 3:08 pm

শ্রমিক স্পেশাল ট্রেন (Photo by NARINDER NANU / AFP)

পরিযায়ী শ্রমিকদের ঘরে ফিরিয়ে দেওয়ার নামে কেন্দ্রীয় সরকার ও রেলওয়ে তাদের সঙ্গে চূড়ান্ত অমানবিক ব্যবহার করছে। এর প্রতিবাদে শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের যাত্রী পরিযায়ী শ্রমিকরা তাদের যাত্রাপথে বার বার রেললাইনে নেমে অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান।

শ্রমিকরা অভিযোগ করেছেন, তাদের ট্রেনের মধ্যে পশুর খাওয়ার অযোগ্য খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে। তাদের যাত্রার জন্য দেড় হাজার টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। আর সম্পূর্ণ গরু ছাগলের মতো গাদাগাদি করে ট্রেনে চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে শ্রমিকদের। শৌচালয়গুলিতে জল থাকছে না। তার ওপর বারো চৌদ্দ ঘন্টা বিলম্বে চলছে ট্রেনগুলি। ফলে শ্রমিকদের কষ্ট শতগুণ বাড়ছে। ফলে বহু শ্রমিক তার গন্তব্যের কাছাকাছি পৌঁছতেই ট্রেন থেকে নেমে হাঁটতে শুরু করছেন। কারণ তারা আর ট্রেনের মধ্যে দমবন্ধকরা অবস্থায় থাকতে পারছেন না।

অন্ধ্রপ্রদেশের বিশাখাপত্তনম থেকে বিহারের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়া এমনই এক শ্রমিক স্পেশালের সওয়ার পরিযায়ী শ্রমিকদের ট্রেনটি দীন দয়াল উপাধ্যায় (পূর্বর্তন মুঘল সরাই) জংশনে দশ ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। ফলে অধৈৰ্য্য শ্রমিকরা রেল লাইন অবরোধ করে মুখ্যমন্ত্রী নীতিশ কুমারের বিরুদ্ধে শ্লোগান দিতে থাকেন।

ধীরেন রাই নামে এক পরিযায়ী শ্রমিক জানান, আগের দিন রাত এগারোটার সময় দীন দয়াল উপাধ্যায় স্টেশনে এসে পৌঁছানো সত্ত্বেও ট্রেনটি দশ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে কেন রাখা হল তা বুঝতে পারছি না। এর ওপর দু’দিন ধরে আমাদের কোনও খাবার নেই। আমাদের ট্রেনে আসার জন্য দেড় হাজার টাকা করে নেওয়া হয়েছে।

মহারাষ্ট্রের পানভেল থেকে অন্য একটি ট্রেন উত্তরপ্রদেশের জুনপুরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়। ট্রেনটিকে বারাণসীর কাছে দশ ঘণ্টার বেশি সময় আটকে রাখা হয়। তারাও রেল লাইনে বসে পড়েন এবং বিক্ষোভ দেখাতে শুরু করেন। পরে রেল পুলিশের পক্ষে খাবার দেওয়ার পর তারা অবরোধ মুক্ত করে এবং ট্রেনটি গন্তব্যের দিকে রওনা হতে পারে।

অন্য একটি শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের যাত্রী পরিযায়ী শ্রমিকদের পচা খাবার পরিবেশন করা হয় বলে অভিযোগ করে। তারা কানপুর জংশন স্টেশনে সমুদয় খাবার ফেলে দেন। সাত ঘণ্টা দাঁড় করিয়ে রাখা অন্য একটি শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের যাত্রীরা জনান, মহারাষ্ট্রে তাদের খাবার দেওয়া হয়েছিল, কিন্তু নিজরাজ্যে তারা দু’দিন ধরে অভুক্ত।

গুজরাত থেকে বিহারের পথে যাওয়ার অন্য একটি শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনের যাত্রীরাও তাদের পচা খাবার পরিবেশনের অভিযোগে তা কানপুর স্টেশনে ফেলে দেন। ট্রেনের মধ্যে শৌচালয়ে জল না থাকার ফলে এক পুতিগন্ধময় অবস্থার মধ্যে দিয়ে শ্রমিকদের যাত্রা করতে হচ্ছে বলে অভিযোগ। পানীয় জল ছিল না।

বেঙ্গালুরু থেকে বিহারের পথে রওনা হওয়া অন্য একটি ট্রেন উন্নাও স্টেশনে আচমকা দাঁড়িয়ে যায়। কিন্তু সেখানে কোনও পানীয় জল বা খাবারের কোনও ব্যবস্থাই ছিল না। ফলে বিক্ষুব্ধ যাত্রীরা স্টেশনের কাচের জানালা, দরজা সব ভেঙে তছনছ করে দেন। এর পর উন্নাও জেলা শাসক জানান, শ্রমিকদের জন্য যথাযথ ব্যবস্থা রাখা হবে। সকল স্টেশন মাস্টারকে পর্যাপ্ত পানীয় জল ও অন্যান্য খাবারের ব্যবস্থা রাখার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

এপর্যন্ত ৯৩০ টি শ্রমিক স্পেশাল ট্রেনে উত্তর প্রদেশেই ১২.৩৩ লাখ শ্রমিককে ফেরত নিয়ে আসা হয়েছে বলে শুক্রবার উত্তরপ্রদেশ সরকারের পক্ষে জানানো হয়েছে। লকডাউনের সময়ে উত্তরপ্রদেশে ১৮.২৪ লাখ শ্রমিক অন্য রাজ্য থেকে উত্তরপ্রদেশে ফিরে গেছে বলে জানানো হয়েছে।

উত্তরপ্রদেশ স্বরাষ্ট্র দফতরের অতিরিক্ত সচিব অবনিশ অবতি জানিয়েছেন, পরিযায়ী শ্রমিকদের ফেরাতে রাজ্য সরকার ১১৯৯ ট্রেনের ব্যবস্থা করেছে। রেলওয়ের পক্ষে ২৩১৭ শ্রমিক স্পেশালের মাধ্যমে ১ মে থেকে এপর্যন্ত ৩১ লাখ পরিযায়ী শ্রমিককে বহন করেছে বলে জানানো হয়েছে।