দেশের বিচারব্যবস্থা নিয়ে উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড়ের মন্তব্যের পালটা তোপ দেগে রাজ্যসভার সাংসদ কপিল সিব্বলের প্রশ্ন, ‘কারা দেশের রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা খর্ব করছে?’ উল্লেখ্য, বৃহস্পতিবার উপরাষ্ট্রপতি জগদীপ ধনখড় বিলে সই করতে রাষ্ট্রপতিকে ‘ডেডলাইন’ বেঁধে দেওয়ার সুপ্রিম কোর্টের রায়ে মন্তব্য করেন, সুপ্রিম কোর্ট যেভাবে রাষ্ট্রপতিকে কোনও কিছু নিয়ে নির্দেশ দিচ্ছে, এমন একটা পরিস্থিতি মেনে নেওয়া যায় না। এখন যা পরিস্থিতি তাতে বিচারপতিরাই আইন তৈরি করছেন। তাঁরাই নির্দেশ কার্যকর করছেন। এই বিচারপতিরাই সুপার পার্লামেন্ট হিসাবে কাজ করছেন।’
এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে উপরাষ্ট্রপতিকে কটাক্ষ করে শুক্রবার সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে সিব্বলের মন্তব্য, ‘আমার মনে হয় যখন বিচারব্যবস্থার সিদ্ধান্ত সরকারের পছন্দ হয় না তখনই এই ধরনের অভিযোগ তোলা হয়। যখন তাঁদের পক্ষে সিদ্ধান্ত যায়, তখন সব ঠিক থাকে। যেমন রামমন্দির ও ৩৭০ ধারা প্রত্যাহারের ক্ষেত্রে ঘটেছিল।” এরপরই ধনখড়ের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে তিনি বলেন, “কীভাবে রাষ্ট্রপতির ক্ষমতা খর্ব করা হচ্ছে? কারা রাষ্ট্রপতির অধিকার খর্ব করছে, আমাকে একটু বুঝিয়ে বলবেন কী? আমি তো জানি, যখন রাষ্ট্রপতি কোনও সিদ্ধান্ত নেন তা ক্যাবিনেটের পরামর্শ মতো নেন। একইভাবে রাজ্যপালের কাছে বিধানসভায় পাশ হওয়া বিল যায়। সংবিধান রাজ্যপালকে অধিকার দিয়েছে সেই বিল ফেরত পাঠানোর। তবে তা দ্বিতীয়বার তাঁর কাছে এলে তিনি সাক্ষর করতে বাধ্য। রাষ্ট্রপতি বা রাজ্যপাল এক্ষেত্রে ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত নিতে পারেন না, এটা মাননীয় ধনকড় মহাশয়ের জানা উচিত।’
Advertisement
তিনি আরও বলেন, ‘উনি কীভাবে বলতে পারেন সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১৪২কে পরমাণু ক্ষেপণাস্ত্রের মতো ব্যবহার করা হচ্ছে? আপনি জানেন সুপ্রিম কোর্টকে অনুচ্ছেদ ১৪২ প্রয়োগের ক্ষমতা সংবিধান দিয়েছে যাতে আইনি জটিলতা পেরিয়ে মানুষ ন্যায়বিচার পান। একইসঙ্গে পালটা তাঁর প্রশ্ন, “উনি তো উলটো কথা বলছেন। সংবিধানে পাশ হওয়া কোনও বিল কী রাষ্ট্রপতি ফেলে রাখতে পারেন?’
Advertisement
উল্লেখ্য, গত ১১ এপ্রিল আইনসভায় পাশ হওয়া বিল নিয়ে ঐতিহাসিক মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্ট। শীর্ষ আদালতের পর্যবেক্ষণ ছিল, আইনসভা থেকে পাশ হয়ে আসা বিল অনন্তকাল আটকে রাখতে পারেন না রাষ্ট্রপতি। বিচারপতি জে বি পার্দিওয়ালা ও বিচারপতি আর মহাদেবনের বেঞ্চ জানিয়ে দেয়, তিনমাসের মধ্যে তাঁকে মতামত জানিয়ে দিতে হবে। যদি তিনমাসের মধ্যে তা সম্ভব না হয়, তাহলে দেরি হওয়ার যথাযথ কারণ জানাতে হবে সংশ্লিষ্ট রাজ্যকে। রাজ্যপালদের জন্যও ওই একই নির্দেশ দেয় শীর্ষ আদালত।
রাষ্ট্রপতিকে ডেডলাইন বেঁধে দেওয়াটা কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছেন না উপরাষ্ট্রপতি। তাঁর প্রশ্ন, ‘কোন পথে এগোচ্ছে আমাদের দেশ। এ দেশে হচ্ছেটা কী? আমরা গণতন্ত্রের সঙ্গে কোনওদিন আপস করিনি। আজকের দিনটা দেখার জন্য তো এত সংগ্রাম করিনি। এখন দেখা যাচ্ছে, ভারতের রাষ্ট্রপতিকেও একটা বিল নিয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ডেডলাইন বেঁধে দেওয়া হচ্ছে। বিচারব্যবস্থা সংবিধানের ১৪২ ধারাকে নিউক্লিয়ার মিসাইলের মতো ব্যবহার করছে। এই বিচারপতিরাই সুপার পার্লামেন্ট হিসাবে কাজ করছেন।’
Advertisement



