• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

কেন্দ্রের আশ্বাস সত্ত্বেও দেশে বেকারত্ব বেড়েই চলেছে: যুবতীরাই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত

শহরাঞ্চলে বেকারত্বের হার টানা চার মাস ধরে বৃদ্ধি পাচ্ছে যুব বেকারত্বের হার জুলাই মাসে দাঁড়াল ১৪.৯ শতাংশ, নারীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত।

মিছিলে চাকরিহারারা। নিজস্ব চিত্র

শহরাঞ্চলে বেকারত্বের হার টানা চার মাস ধরে বৃদ্ধি পাচ্ছে যুব বেকারত্বের হার জুলাই মাসে দাঁড়াল ১৪.৯ শতাংশ, নারীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত। ভারতের শহরাঞ্চলে বেকারত্বের হার টানা চার মাস ধরে বৃদ্ধি পেয়ে জুলাই ২০২৫-এ ৭.২ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা এপ্রিলের ৬.৫ শতাংশ থেকে বেশি। মে মাসে এটি বেড়ে হয়েছিল ৬.৯ শতাংশ এবং জুনে ৭.১ শতাংশ (কারেন্ট উইকলি স্ট্যাটাস অনুযায়ী)। শহরাঞ্চলে নারীদের বেকারত্বের হার জুলাই মাসে ছিল ৮.৭ শতাংশ, যা এপ্রিল মাসের সমান স্তরে বজায় রয়েছে।

জুলাই ২০২৫-এর পিরিওডিক লেবার ফোর্স সার্ভে (PLFS)-এর মাসিক বুলেটিনে দেখা গেছে, ১৫–২৯ বছর বয়সী যুবসমাজের মধ্যে বেকারত্বের হার ১৪.৯ শতাংশে পৌঁছেছে (CWS অনুযায়ী)। এর মধ্যে যুবতী নারীদের বেকারত্বের হার ছিল ১৬.৭ শতাংশ, যেখানে যুব পুরুষদের মধ্যে এই হার ১৪.৩ শতাংশ।

Advertisement

গ্রামীণ ও শহরাঞ্চলের বেকারত্বের হারে বড় পার্থক্য রয়েছে। গ্রামীণ অঞ্চলে বেকারত্বের হার ছিল ৪.৪ শতাংশ, আর শহরে ছিল ৭.২ শতাংশ। ফলে গ্রাম ও শহর মিলিয়ে সার্বিক বেকারত্বের হার দাঁড়িয়েছে ৫.২ শতাংশে, যা এপ্রিল মাসে ছিল ৫.১ শতাংশ। গ্রামে ১৫ বছর বা তার ঊর্ধ্ব পুরুষদের মধ্যে জুলাই ২০২৫-এ বেকারত্বের হার ছিল ৪.৬ শতাংশ। একই বয়সী নারীদের মধ্যে এটি ছিল ৩.৯ শতাংশ। শহরাঞ্চলে একই বয়সী নারীদের বেকারত্বের হার ছিল ৮.৭ শতাংশ, যেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি ছিল ৬.৬ শতাংশ।

Advertisement

শ্রমশক্তি অংশগ্রহণ হার (Labour Force Participation Rate – LFPR) জুলাই ২০২৫-এ ১৫ বছর বা তার ঊর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে দাঁড়িয়েছে ৫৪.৯ শতাংশে (CWS অনুযায়ী)। গ্রামে এটি ছিল ৫৬.৯ শতাংশ এবং শহরে ছিল ৫০.৭ শতাংশ। গ্রামীণ পুরুষদের ক্ষেত্রে এই হার ছিল ৭৮.১ শতাংশ, আর গ্রামীণ নারীদের মধ্যে ছিল মাত্র ৩৬.৯ শতাংশ। শহরাঞ্চলে ১৫ বছর বা তার ঊর্ধ্ব নারীদের LFPR ছিল ২৫.৮ শতাংশ, যেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে ছিল ৭৫.১ শতাংশ।

১৫–২৯ বছর বয়সীদের মধ্যে LFPR জুলাই ২০২৫-এ দাঁড়িয়েছে ৪১.২ শতাংশে। এর মধ্যে পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি ছিল ৬০.৯ শতাংশ, আর নারীদের মধ্যে মাত্র ২১.১ শতাংশ। অর্থাৎ, যুবতী নারীরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, যা স্পষ্ট করে যে সরকারের নীতিগুলো এখনো নারীদের জন্য যথেষ্ট সহায়ক নয়, যদিও সরকার বারবার যুব ও নারী-শক্তিকরণের কথা বলে থাকে।

কৃষি কার্যকলাপ বেড়ে যাওয়ার পরেও খরিফ মরসুমে গ্রামীণ অঞ্চলের LFPR এপ্রিলের ৫৮ শতাংশ থেকে কমে জুলাইয়ে ৫৬.৯ শতাংশে নেমে এসেছে। নারীদের LFPR এপ্রিল মাসের ৩৮.২ শতাংশ থেকে আরও কমে জুলাইয়ে হয়েছে ৩৬.৯ শতাংশ। পুরুষ ও নারীর মধ্যে বিশাল ব্যবধান রয়ে গেছে। জুলাই মাসে পুরুষদের LFPR দাঁড়িয়েছে ৭৮.১ শতাংশে, যা এপ্রিলের ৭৯ শতাংশ থেকে কিছুটা কমেছে।

শহরাঞ্চলেও LFPR নিয়ে উদ্বেগজনক অবস্থা দেখা যাচ্ছে। এপ্রিলের মতোই জুলাইয়েও এটি স্থির আছে ৫০.৭ শতাংশে। তবে লিঙ্গ বৈষম্য এখানে গ্রামাঞ্চলের চেয়েও বেশি। শহরে নারীদের LFPR জুলাইয়ে ছিল ২৫.৮ শতাংশ, যা এপ্রিলের ২৫.৭ শতাংশ থেকে সামান্যই বেড়েছে। পুরুষদের ক্ষেত্রে LFPR এপ্রিল মাসে ছিল ৭৫.৩ শতাংশ, আর জুলাইয়ে হয়েছে ৭৫.১ শতাংশ।

সার্বিকভাবে দেশে নারী-পুরুষের মধ্যে LFPR-এ ব্যাপক ফারাক রয়েছে। জুলাইয়ে নারীদের LFPR ছিল ৩৩.৩ শতাংশ, আর পুরুষদের ক্ষেত্রে ছিল ৭৭.১ শতাংশ, যা এপ্রিলের তুলনায় কিছুটা কম (এপ্রিল মাসে যথাক্রমে ৩৪.২ শতাংশ ও ৭৭.৭ শতাংশ ছিল)।

শ্রমশক্তির মধ্যে কর্মরত জনসংখ্যার হার (Worker Population Ratio – WPR) জুলাই ২০২৫-এ ১৫ বছর বা তার ঊর্ধ্ব জনগোষ্ঠীর মধ্যে দাঁড়িয়েছে ৫২ শতাংশে। এর মধ্যে গ্রামে ছিল ৫৪.৪ শতাংশ এবং শহরে মাত্র ৪৭ শতাংশ। গ্রামীণ পুরুষদের মধ্যে এই হার ছিল ৭৪.৫ শতাংশ, নারীদের মধ্যে ছিল ৩৫.৫ শতাংশ। শহরে নারীদের মধ্যে WPR মাত্র ২৩.৫ শতাংশ, যেখানে পুরুষদের ক্ষেত্রে এটি ছিল ৭০.১ শতাংশ।

১৫–২৯ বছর বয়সী যুবসমাজের WPR আরও হতাশাজনক। এই বয়সীদের মধ্যে সার্বিক WPR জুলাইয়ে দাঁড়িয়েছে মাত্র ৩৫.১ শতাংশে। এর মধ্যে পুরুষদের হার ছিল ৫২.১ শতাংশ, আর নারীদের ক্ষেত্রে ছিল মাত্র ১৭.৬ শতাংশ।

শহরাঞ্চলে নারী-পুরুষের মধ্যে WPR-এর ব্যবধান আরও প্রকট। জুলাই মাসে শহরের নারীদের WPR ছিল ২৩.৫ শতাংশ, যা এপ্রিল মাসের সমান। কিন্তু পুরুষদের WPR এপ্রিলের ৭১ শতাংশ থেকে কমে জুলাইয়ে দাঁড়িয়েছে ৭০.১ শতাংশে। গ্রামে জুলাই মাসে নারীদের WPR ছিল ৩৫.৫ শতাংশ, যা এপ্রিলের ৩৬.৮ শতাংশ থেকে কমেছে। আর পুরুষদের ক্ষেত্রে এপ্রিলের ৭৫.১ শতাংশ থেকে জুলাইয়ে কমে হয়েছে ৭৪.৫ শতাংশ।

মোট WPR এপ্রিলের ৫২.৮ শতাংশ থেকে জুলাইয়ে নেমে এসেছে ৫২ শতাংশে। সার্বিকভাবে নারী-পুরুষের মধ্যে বিরাট ব্যবধান রয়ে গেছে—পুরুষদের WPR জুলাই মাসে ছিল ৭৩ শতাংশ, আর নারীদের মাত্র ৩১.৬ শতাংশ। এই পরিসংখ্যানগুলো স্পষ্ট করে দেয় যে শ্রমক্ষেত্রে কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন ঘটছে না। বেকারত্বের হার কমছে না, বরং LFPR ও WPR দেশে গত চার মাস ধরে স্থবির বা নিম্নমুখী অবস্থায় রয়েছে।

Advertisement