উত্তরাখণ্ডের দেরাদুনে ‘চিনা’ বলে হেনস্থার প্রতিবাদ করায় কুপিয়ে খুন করা হয়েছে ত্রিপুরার এক পড়ুয়াকে। এমনই এক চাঞ্চল্যকর অভিযোগ ঘিরে দেশজুড়ে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। নিহত যুবকের নাম অ্যাঞ্জেল চাকমা (২৪)। গুরুতর জখম অবস্থায় ১৭ দিন ধরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকার পর শুক্রবার রাতে মৃত্যু হয় তাঁর।
ঘটনাটি ঘটে ৯ ডিসেম্বর। সেদিন দেরাদুনের একটি বাজারে প্রয়োজনীয় দৈনন্দিন জিনিসপত্র কিনতে গিয়েছিলেন অ্যাঞ্জেল। সঙ্গে ছিলেন তাঁর ভাইও। অভিযোগ, বাজারে ঢোকার পর পাঁচ-ছ’জনের একটি দল তাঁদের ‘চিনা’ বলে কটূক্তি করতে শুরু করে। বিষয়টি নিয়ে আপত্তি জানান অ্যাঞ্জেল। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, শান্ত স্বরেই তিনি বলেন, ‘আমরা চিনা নই, আমরা ভারতীয়। আপনারা বলুন, কী প্রমাণ দেখাতে হবে?’ সেই কথার পরেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে।
Advertisement
অভিযোগ, তর্কাতর্কির মধ্যেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে অ্যাঞ্জেলের মাথা ও পিঠে একাধিক কোপ মারা হয়। গুরুতর জখম অবস্থায় তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হামলায় তাঁর ভাইও গুরুতর আহত হন এবং এখনও চিকিৎসাধীন আছেন বলে জানা গিয়েছে।
Advertisement
ঘটনার পরদিনই থানায় অভিযোগ দায়ের হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ ইতিমধ্যেই তিন জনকে গ্রেপ্তার করেছে। পাশাপাশি দুই নাবালককেও আটক করা হয়েছে। পরে এফআইআরে খুনের ধারা যোগ করা হয়। যদিও ঠিক কী বলে ডেকে অ্যাঞ্জেলকে হেনস্থা করা হচ্ছিল, সে বিষয়ে নির্দিষ্ট কোনও শব্দ ব্যবহার করতে চায়নি পুলিশ। দেরাদুনের এসএসপি অজয় সিংহ জানিয়েছেন, ‘কিছু একটা বলে উত্ত্যক্ত করা হচ্ছিল বলেই প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে।’
হামলার সময় অ্যাঞ্জেলের ঘাড় ও পিঠে মারাত্মক আঘাত লাগে বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। শেষ পর্যন্ত দীর্ঘ চিকিৎসার পরেও প্রাণরক্ষা করা সম্ভব হয়নি। শনিবার তাঁর দেহ আগরতলায় ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।
এই ঘটনার প্রতিবাদে উত্তরাখণ্ড ও ত্রিপুরা— দুই রাজ্যেই ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। ত্রিপুরার একাধিক আঞ্চলিক রাজনৈতিক দল এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র নিন্দা করেছে। নিহতের পরিবারের পাশে থাকার বার্তা দিয়েছেন তিপ্রা মথা পার্টির নেতা প্রদ্যোৎবিক্রম মানিক্য দেববর্মা। একই সঙ্গে তিনি এই ঘটনার দ্রুত ও কঠোর বিচার দাবি করেছেন।
প্রশাসনিক মহলের একাংশের মতে, এই ঘটনা উত্তর-পূর্ব ভারতের মানুষদের প্রতি বিদ্বেষ ও বৈষম্যের পুরনো সমস্যাকেই আবার সামনে নিয়ে এল।
Advertisement



