পহেলগামে জঙ্গি হামলার পর সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করে দিয়েছিল ভারত সরকার। বন্ধ হয়ে গিয়েছিল সিন্ধু, চন্দ্রভাগা ও ঝিলমের জল। এর জেরে সমস্যায় পড়ে পাকিস্তান। কারণ সে দেশের কৃষি ও শিল্প সহ প্রয়োজনীয় কাজে এই নদীগুলির জল ব্যবহার করা হয়। এই কারণে সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত নিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে ব্যাপক নিন্দায় সরব হয় পাকিস্তান। এতদিন জল বন্ধ রাখার পর এ বার চন্দ্রভাগা বা চেনাব নদীর বগলিহার ও রিয়াসি সালাল বাঁধের একাধিক লকগেট খুলে দিয়েছে ভারত। এর জেরে পাকিস্তানে বন্যার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মনে করা হচ্ছে যে কোনও মুহূর্তে পাকিস্তানের শিয়ালকোট ভেসে যেতে পারে।
বৃহস্পতিবার চন্দ্রভাগা নদীর রিয়াসি সালাল বাঁধের ৩টি ফটক খুলে দেওয়া হয়েছিল। এরপর শুক্রবার চন্দ্রভাগা নদীতে নির্মিত বগলিহার বাঁধের চারটি লকগেট খুলে দেওয়া হয়। প্রায় দুই সপ্তাহ বন্ধ থাকার পর বাঁধের ফটকগুলি খোলায় সেখান থেকে প্রচুর পরিমাণে জল বের হচ্ছে। এর জেরে চন্দ্রভাগা নদীতে জলস্রোত বৃদ্ধি পেয়েছে। মনে করা হচ্ছে, ভারত হঠাৎ জল ছেড়ে দেওয়ায় বিপদে পড়তে পারে পাকিস্তান।
উল্লেখ্য, গত কয়েকদিন ধরে রামবান সহ জম্মু–কাশ্মীরের বেশ কয়েকটি এলাকায় ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। কিছু জায়গায় মেঘ ভাঙা বৃষ্টি ও ভূমি ধসেরও খবর পাওয়া গিয়েছে। এর ফলে জলের স্তর অতি দ্রুত বেড়ে গিয়েছিল। ভারী বৃষ্টির কারণে বৃহস্পতিবার সকালে জম্মু–শ্রীনগর জাতীয় সড়কে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। জানা গিয়েছে, রামবান এলাকায় এই সড়কে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এমনকী রামবান বাজারেও জনজীবন প্রভাবিত হয়েছে। তবে এখনও পর্যন্ত কারও হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি। সেই কারণে বাঁধগুলির একাধিক লকগেট খুলে দেওয়া হয়। যদিও কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, পাকিস্তানের উপর চাপ তৈরি করতেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। জল শুধুমাত্র এখন প্রাকৃতিক সম্পদ নয়, দুই দেশের মধ্যে একটি শক্তিশালী কূটনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।
জানা গিয়েছে, সালাল বাঁধ প্রকল্প একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। এই বাঁধটি জম্মুর রিয়াসি জেলা সদর থেকে প্রায় ২৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এখানে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জম্মু–কাশ্মীর ছাড়াও একাধিক রাজ্য পায়।
কয়েকদিন আগে ভারত বাঁধগুলির গেট বন্ধ করে দেওয়ায় পাকিস্তানে চন্দ্রভাগা নদীর জলস্তর নেমে যায়। আগে জল ২৫–৩০ ফুট থাকলেও জল বন্ধ হওয়ার পর জলস্তর মাত্র ২–৩ ফুটে নেমে যায়। এর ফলে পাকিস্তানে কৃষি ও শিল্পে জলের জোগান ব্যাহত হয়। বর্তমানে একাধিক বাঁধের লকগেট খুলে দেওয়ায় পাকিস্তানের চন্দ্রভাগা নদীতে জলস্রোত উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়ে গিয়েছে।
‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযানে বড় ধাক্কা পেয়েছে পাকিস্তান। দেশের অর্থনীতির অবস্থাও বেশ খারাপ। এই পরিস্থিতিতে ভারত জল ছাড়ায় পাকিস্তানের সমস্যা আরও বেড়ে যাবে বলেই মনে করা হচ্ছে। সে দেশের জল সম্পদ মন্ত্রকের তরফে ইতিমধ্যেই নদী তীরবর্তী এলাকাগুলিকে সতর্ক থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।