উত্তরপ্রদেশে মহিলাদের কোনও স্থান নেই : প্রিয়াঙ্কা গান্ধি

মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব লখনউয়ে রাজ্য বিধানসভার বাইরে ধরনায় বসেন।

Written by SNS Lucknow | December 8, 2019 2:29 pm

প্রিয়াঙ্কা গান্ধি (File Photo IANS/AICC)

মহিলাদের নিরাপত্তা নিয়ে উত্তরপ্রদেশের বিরােধী দলগুলি আজ রাজ্যের যােগী আদিত্যনাথ সরকারকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেছে। উন্নাওয়ের ২৩ বছর বয়সী এক তরুণীকে তার ধর্ষণকারীরা গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর গতকাল রাতে সে দিল্লির একটি হাসপাতালে মারা যায়। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তরপ্রদেশ তথা সারা দেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে।

মুখ্যমন্ত্রীর পদত্যাগের দাবিতে উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা সমাজবাদী পার্টির নেতা অখিলেশ যাদব লখনউয়ে রাজ্য বিধানসভার বাইরে ধরনায় বসেন। কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধি বঢ়ড়াও আজ উন্নাওয়ের সেই হতভাগ্য মেয়েটির বাড়িতে গিয়ে তার পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। রাজ্যে মহিলাদের কোনও স্থান নেই বলে তিনি মন্তব্য করেন।

অখিলেশ যাদব যােগী আদিত্যনাথ ও রাজ্যের পদস্থ পুলিশকর্তাদের পদত্যাগ দাবি করে বলেন, ‘আজ দেশের পক্ষে কালাে দিন। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী, রাজ্যের স্বরাষ্ট্রসচিব ও ডিজিপি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত ও ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠিত না হওয়া পর্যন্ত এটাকে কালাে হিসাবেই গণ্য করতে হবে। বিজেপি সকারের আমলে এই ধরনের ঘটনা এটাই প্রথম নয়। বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় বলেছিলেন, অপরাধীদের গুলি করে মারা হবে। তারপরও তারা এই মেয়েটির জীবন বাঁচাতে পারলেন না’।

মৃত তরুণীর পরিবারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার পর প্রিয়াঙ্কা গান্ধি যােগী আদিত্যনাথের অতীতের মন্তব্য তুলে ধরে তাঁকে আক্রমণ করেন। প্রিয়াঙ্কা বলেন, ‘মুখ্যমন্ত্রী বলে থাকেন রাজ্যে অপরাধীদের কোনও স্থান নেই, কিন্তু তিনি রাজ্যকে এমন জায়গায় নিয়ে গেছেন যেখানে দেখা যাচ্ছে মহিলাদেরই কোনও স্থান নেই’।

তরুণীটিকে দু’জন ধর্ষণ করেছিল। সেই ধর্ষণের মামলার ব্যাপারে তরুণীটি যখন বৃহস্পতিবার সকালে আদালতের দিকে যাচ্ছিল তখন এই দুই ধর্ষণকারী সমেত পাঁচজন তার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে তার শরীরের ৯০ শতাংশই পুড়ে যায়। তাকে দিল্লির সফদরজং হাসপাতলে ভর্তি করা হলে শুক্রবার গভীর রাতে হৃদরােগে আক্রান্ত হয়ে সে মারা যায়। এই মামলার মূল আসামি মাত্র এক সপ্তাহ আগেই জামিন পেয়ে জেল থেকে বেরিয়েছে। তরুণীটির ধর্ষণকারীরা কোন পরিস্থিতিতে ছড়া পেল তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। গণধর্ষণের চার মাস পর গত মার্চ মাসে পুলিশ ধর্ষণের মামলা রুজু করে। ফলে পুলিশের ভুমিকা নিয়েও একটা প্রশ্ন উঠেছে।

প্রিয়াঙ্কা আরও অভিযােগ করেন, ‘গত বছর থেকেই এই হতভাগ্যের পুরাে পরিবারকে টানা হয়রানি করা হচ্ছিল। আমি শুনেছি অপরাধীদের বিজেপির সঙ্গে কিছু যােগ রয়েছে। তাই তাদের আড়াল করা হচ্ছে। ফলে রাজ্যে অপরাধীদের মনে আর কোনও ভয় নেই’।

হতভাগ্য তরুণীর বাড়িতে গিয়ে প্রিয়াঙ্কা এই কঠিন সময়ে তাদের পাশে থাকার আশ্বাস দেন। ধর্ষণের ঘটনার পরও কেন ওই তরুণীকে নিরাপত্তা দেওয়া হল না তা নিয়েও তিনি প্রশ্ন তােলেন। তিনি এই প্রসঙ্গে গত জুলাই মাসে উন্নাও জেলায় এরকম আরেকটি ধর্ষণের ঘটনার উল্লেখ করেন। সেই ক্ষেত্রে তরুণীটি বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গারের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযােগ করে। এই ঘটনার পর তরুণীটি গাড়ি করে যাওয়ার সময় একটি ট্রাক রহস্যজনকভাবে সেই গাড়িকে ধাক্কা মারে।

এক টুইটবার্তায় প্রিয়াঙ্কা প্রশ্ন তােলেন, ‘যে পুলিশ অফিসার এফআইআর নিতে অস্বীকার করেছিলেন তার বিরুদ্ধে কি ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? রাজ্যে মহিলাদের বিরুদ্ধে অপরাধ নিত্যনৈমিত্তিক ব্যাপার। এসব বন্ধ করার জন্য সরকার কি ব্যবস্থা নিয়েছে?’

কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা আরও বলেন, ‘মহিলারা যে ন্যায়বিচার পাচ্ছে না এটা সমাজের প্রত্যেকর যৌথ ব্যর্থতা। সামাজিক পর্যায়ে আমরা সকলেই দোষী। কিন্তু একই সঙ্গে রাজ্যের শুন্যগর্ভ আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থার কথাও উল্লেখ করা প্রয়ােজন’।

রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও বিএসপি নেত্রী মায়াবতীও রাজ্যের বিজেপি সরকারকে নিশানা করেছেন। তিনি বলেন, ‘উত্তরপ্রদেশ এমন একটা দিনও যায় না যেদিন মহিলাদের বিরুদ্ধে কোনও অপরাধ ঘটেনি’। এদিকে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী যােগী আদিত্যনাথ ঘােষণা করেছে যে একটি ফাস্টট্রাক কোর্টে এই মামলার শুনানি হবে এবং অপরাধীদের কঠোরতম শাস্তি দেওয়া হবে।