দেরাদুন: প্রকৃতির রোষানলে উত্তরাখণ্ডের গোটা হিমালয় পার্বত্য এলাকা৷ এর বাইরে বিপদের একদম শেষ সীমায় রয়েছে হিমবাহগুলির অবস্থাও৷ আবহাওয়া বিশেষজ্ঞরা বলছেন, উত্তরাখণ্ডের গোটা হিমালয় পার্বত্য এলাকা ভয়ঙ্কর বিপজ্জনক পরিস্থিতির মুখে দাঁডি়য়ে রয়েছে৷ যার মধ্যে বাবা কেদারনাথের তীর্থভূমি কেদারনাথ উপত্যকাও আছে৷ আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস সত্যি হলে এই তাবৎ অঞ্চলে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টি, মেঘভাঙা বৃষ্টি এবং হড়পা বানের আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছে৷
কেদারনাথের বিপদের সবথেকে বড় শঙ্কা মন্দাকিনী নিয়ে৷ এই শহর রয়েছে মন্দাকিনী নদী উপত্যকায়৷ প্রায় ৬৭ বর্গকিমি এলাকা জুডে় শহর এলাকা৷ একদিকে মন্দাকিনী অন্যদিকে সরস্বতী এসে মিলেছে কেদারনাথ মন্দিরের কাছে৷ এই দুই নদীর উৎসস্থলেই মন্দিরের মাথার উপর দাঁডি়য়ে রয়েছে চোরাবারি হিমবাহ৷ মাত্র ২ কিমি উঁচুতে রয়েছে এখন গান্ধি সরোবর নামে এই হিমকুণ্ড৷
Advertisement
২০১৩ সালে এই চোরাবারি হিমবাহ সৃষ্ট হ্রদের বরফের পাঁচিল ভেঙে গিয়ে নেমে আসে জলস্রোত৷ সেকেন্ডে ১৪২৯ কিউবিক মিটার গতিতে জলের ধারা নেমে আসায় বিপর্যয়ের মুখে পডে় বিস্তীর্ণ এলাকা৷ যার প্রভাব পডে় হরিদ্বার পর্যন্ত৷ উত্তরাখণ্ড সরকার ১৩টি এরকম হিমবাহ থেকে সৃষ্ট হ্রদ নিয়ে সমীক্ষা করতে চলেছে৷ যাতে আগের দুবারে অভিজ্ঞতার মতো পরিস্থিতি যথাসম্ভব রোধ করা যায়৷
Advertisement
উল্লেখ্য, গত তিন বছর তুষারধস হচ্ছে কেদারনাথে৷ সম্প্রতি ৩০ জুনের তুষারধসটি সর্বশেষ৷ কেদারনাথের ঠিক মাথার উপর সুমেরু পর্বত থেকে নেমে এসেছিল বরফের বিরাটাকার গোলা৷ কেন বারবার এ ধরনের ঘটনা ঘটেই চলেছে? এরকমটা হওয়ার কারণ হল, যখন বরফের পিণ্ড গলে বৃষ্টিতে পরিণত না হয়ে খসে নেমে আসে৷ উল্লেখযোগ্য বিষয় হল, কেবলমাত্র কেদারনাথ নয় উত্তরাখণ্ডের বিভিন্ন এলাকা সহ তাবড় হিমালয় পার্বত্য পাদদেশ এই বিনাশকালের মুখে দাঁডি়য়ে আছে৷
উত্তরাখণ্ড সরকার এরকম ১৩টি হিমবাহ সৃষ্ট হ্রদকে চিহ্নিত করেছে৷ সমীক্ষায় দেখা হবে, এই হ্রদগুলি যদি ভেঙে পডে় কিংবা বিস্ফোরণের মতো জলোচ্ছ্বাস হয় তাহলে কীভাবে প্রকৃতির তাণ্ডবনৃত্য ঠেকানো যাবে! ২০১৩ সালে হিমালয় পাদদেশীয় এলাকায় এরকমই একটি ঘটনা ঘটেছিল৷ উত্তরাখণ্ডে এরকম অসংখ্য হিমবাহ সৃষ্ট জলাধার আছে যেগুলি খুবই বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে৷ যে কোনও মুহূর্তে সেগুলি থেকে জলোচ্ছ্বাস হতে পারে৷
আপাতত পাঁচটিকে হাইরিস্ক জোনে ফেলা হয়েছে৷ সেগুলি হল, ডেরমা, লা সার্লিং ঘাটি, পিথোরাগড় জেলার কুটিয়াঙ্গটি উপত্যকা এবং চামোলি জেলার ধৌলি গঙ্গা অববাহিকায় অবস্থিত বসুন্ধরা তাল৷ এই সবকটি হ্রদ প্রায় ০.০২ থেকে ০.৫০ বর্গ কিমি এলাকা জুডে় রয়েছে৷
ভারতের আবহাওয়া দফতর জুলাই মাসে হিমালয় পার্বত্য এলাকায় ভারী বৃষ্টির সতর্কতা জারি করেছে৷ যার ফলে পশ্চিম হিমালয় অঞ্চলে হড়পা বান ও মেঘভাঙা বৃষ্টিরও সম্ভাবনা রয়েছে৷ চলতি মাসে স্বাভাবিকের থেকে বেশি বৃষ্টি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে মৌসম ভবন৷ এতে পশ্চিম হিমালয়ের রাজ্যগুলির নদী অববাহিকায় জলস্তর হু-হু করে বাড়বে৷ কারণ দেশের গুরুত্বপূর্ণ নদীগুলির উৎপত্তিস্থলই হল এই এলাকা৷
আবহাওয়া দফতরের প্রধান মৃতু্যঞ্জয় মহাপাত্র বলেন, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, জম্মু-কাশ্মীর এবং পশ্চিম হিমালয়ের পাদদেশীয় এলাকায় অতিবৃষ্টি, মেঘভাঙা বৃষ্টি হতে পারে৷ যার ফলে প্রাণঘাতী ধস এবং হড়পা বান হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা আছে৷ যে কারণে জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকেই এইসব হিমকুণ্ডের সমীক্ষার কাজ শুরু হবে৷ মোটামুটিভাবে এই হিমকুণ্ডগুলি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪০০০ মিটার বা ১৩ হাজার ১২৩ ফুট উঁচুতে রয়েছে৷ ফলে সেগুলির উচ্চতা, গভীরতা, বিস্তৃতি এবং বিপদের সম্ভাবনা কত দূর, তা নিরূপণ করাও বেশ দুরূহ কাজ৷
নদী অববাহিকায় মোট ১১ টি হিমবাহ সৃষ্ট হ্রদ বা হিমকুণ্ড আছে তাও একবার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক৷ যেমন, টনস অববাহিকা, যমুনা, ভাগীরথী, ভিলানগঙ্গা, মন্দাকিনী (এখানেই রয়েছে কেদারনাথ ধাম, সোনপ্রয়াগ, মধ্যমহেশ্বর বা মদমহেশ্বর, উখিমঠ, অগস্ত্যমুনি, রুদ্রপ্রয়াগ), পিণ্ডার, গৌরীগঙ্গা বা গোরিগঙ্গা, ধৌলিগঙ্গা, অলকানন্দা (এখানে রয়েছে হেমকুণ্ড সাহিব, কাগভুষুণ্ডী তাল, বদ্রীনাথ, জোশিমঠ, চামোলি, ধৌলিগঙ্গা, কর্ণপ্রয়াগের মতো পর্যটন ও তীর্থস্থান), কুটিয়াঙ্গটি অববাহিকা৷
Advertisement



