টাকা নেই। তার জেরে বন্ধ হতে বসেছে তফসিলি জাতি-উপজাতি ও দরিদ্র মেধাবী ছাত্রদের জন্য নির্ধারিত ন্যাশনাল ওভারসিজ স্কলারশিপ। চলতি বছরে নির্বাচিত ৪০ শতাংশ পড়ুয়াই এই বৃত্তি বা স্কলারশিপ থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সরকারের সাফাই, অর্থাভাবে স্কলারশিপের টাকা দেওয়া যাচ্ছে না। তবে এবারই প্রথম নয়। এর আগেও পিছিয়ে থাকা শ্রেণির পড়ুয়াদের ন্যায্য স্কলারশিপ বাতিল হয়েছে কিংবা পেতে দেরি হয়েছে। কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রক তহবিলের অভাবের কথা উল্লেখ করেছে।
কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের তরফে স্কলারশিপ প্রাপকদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। ন্যাশনাল ওভারসিজ স্কলারশিপ তথা এনওএস নামে এই আর্থিক সাহায্য প্রতিবছর দেওয়া হয়ে থাকে। এবার ২০২৫-২৬ শিক্ষাবর্ষের জন্য ১০৬ জন পড়ুয়া নির্বাচিত হয়েছিল। স্কলারশিপ প্রাপকদের মধ্যে ৪০ জন স্থান পেয়েছে। গত ১ জুলাই মোদী সরকারের তরফে এক ঘোষণায় বলা হয়েছে, ক্রমিক সংখ্যা ৪১ থেকে ১০৬ পর্যন্ত প্রার্থীদের ‘প্রভিশনাল অ্যাওয়ার্ড’-এর চিঠি পরে ছাড়া হবে। তহবিল বা বরাদ্দ টাকা পেলেই বাকিদের জানানো হবে। মন্ত্রক জানিয়েছে, তারা অর্থ বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটির অনুমোদন পায়নি। উল্লেখ্য, অর্থ বিষয়ক ক্যাবিনেট কমিটির প্রধান হচ্ছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
প্রসঙ্গত, এর আগের বছরগুলিতে সমস্ত নির্বাচিত প্রার্থীরা একবারে তাদের বৃত্তি পত্র হাতে পেয়েছিলেন। কিন্তু এই বছর তহবিলের অনিশ্চয়তার কারণে কেন্দ্রীয় সামাজিক ন্যায়বিচার ও ক্ষমতায়ন মন্ত্রকের তরফে পর্যায়ক্রমে চিঠি পাঠানো হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে।মন্ত্রকের একজন কর্মকর্তা এক সংবাদ মাধ্যমে বলেছেন, যে তহবিল পাওয়া যায় তা বিতরণের জন্য মন্ত্রিপরিষদ প্যানেলের অনুমোদন প্রয়োজন। ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের কাছে টাকা আছে, তবে তা বিতরণের জন্য আমাদের কাছে উপর থেকে সবুজ সংকেত আসা দরকার।’
এনওএস কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন তফসিলি জাতি, উপজাতি, অবিধিবদ্ধ যাযাবর জনজাতি, উপ যাযাবর জনজাতি, ভূমিহীন কৃষি শ্রমিক অথবা প্রাচীন শিল্পী-কারিগর শ্রেণি, যাঁদের পারিবারিক আয় বছরে ৮ লক্ষের কম। এনওএস প্রোগ্রামটি ১৯৫৪-৫৫ সালে চালু হয়েছিল। সাধারণত যতজনকে নির্বাচিত করা হয়, তাঁদের সবাইকেই প্রভিশনাল স্কলারশিপের চিঠি দেওয়া হয়। কিন্তু, এবার সেই ভাণ্ডারে টান পড়ায় সবাইকে একসঙ্গে চিঠি পাঠানো সম্ভব হয়নি।
প্রসঙ্গত, স্কলারশিপের টাকা নিয়ে টানাপোড়েন এবারই প্রথম নয়। এর আগে মৌলানা আজাদ জাতীয় ফেলোশিপ নিয়েও এই ধরণের সমস্যা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে প্রায় দেড় হাজারের কাছাকাছি পিএইচডি গবেষক ছাত্রের স্কলারশিপের টাকা আটকে রয়েছে। গত বছরের ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত গবেষকরা অর্থ সাহায্য পাননি। তাছাড়াও কয়েকজনের ক্ষেত্রে আগে থেকেই টাকা আসা বন্ধ। তাও অসীমাংসিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
মৌলানা আজাদ ন্যাশনাল ফেলোশিপ পরিচালনা করে থাকে কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক মন্ত্রক। মুসলিম, খ্রিস্টান, শিখ, বৌদ্ধ, জৈন ও পার্সি ধর্মের সংখ্যালঘু গবেষক ছাত্রদের এই প্রকল্পের অধীনে স্কলারশিপ দেওয়া হয়ে থাকে। এছাড়াও ন্যাশনাল ফেলোশিপ ফর শিডিউল কাস্টসের স্কলারশিপের টাকা নিয়েও জটিলতা রয়েছে। ২০২৪ সালের জুন মাসের জায়গায় মেধাতালিকা প্রকাশ হয়েছে চলতি বছরের মার্চে। ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সি প্রথমে ৮৬৫ জনের নাম প্রকাশ করলেও, এপ্রিল মাসে সংশোধিত একটি তালিকায় কাটছাঁট করে ৮০৫ জনের নাম প্রকাশ করা হয়।
গত ১০ জুন, বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী এই স্কলারশিপ বিতরণে অনিয়মের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী মোদীকে চিঠি লিখেছিলেন। তিনি উল্লেখ করেন যে, দলিত, আদিবাসী, ইবিসি, ওবিসি এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীরা এর জন্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বর্তমান বৃত্তির পরিমাণকে ‘অপমানজনক ভাবে কম’ বলেও উল্লেখ করেছেন রাহুল গান্ধী।