ভূস্বর্গ ভয়ঙ্কর হয়ে উঠল পর্যটকদের কাছে। শুধু ভয়ঙ্কর নয়, আচমকা জঙ্গিহানায় বিভীষিকাময় হয়ে উঠল কাশ্মীর। পুলিশসূত্রে জানা যায়, মঙ্গলবার জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগাঁমের বৈসরন উপত্যকায় একটি রিসর্টের কাছে পর্যটকদের ওপর হামলা চালিয়েছে জঙ্গিরা। এই হামলায় কমপক্ষে ২৮ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে। জখম হয়েছেন কমপক্ষে ২০ জন পর্যটক, জম্মু ও কাশ্মীর পুলিশের উল্লেখ করে প্রকাশিত কয়েকটি খবরে এমনটাই দাবি করা হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নির্দেশে পহেলগাঁম রওনা হয়ে গিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
পহেলগাঁমে হামলার পর পরই পাকিস্তানি জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার ছায়া সংগঠন ‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ এই হামলার দায় স্বীকার করেছে। ঘটনার পরেই নিরাপত্তারক্ষীরা এলাকা ঘিরে ফেলে জঙ্গিদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে। জানা গিয়েছে, গুলিতে এক জঙ্গির মৃত্যু হয়েছে।
Advertisement
কাশ্মীরে জঙ্গি হামলার খবর পেয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সৌদি আরবের জেড্ডা থেকে ফোনে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে কথা বলেন তিনি। সব কিছু জানার পর শাহকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী এবং যে জায়গায় জঙ্গি হামলার ঘটনা ঘটেছে, সেখানে গিয়ে খোঁজ নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে। জম্মু-কাশ্মীরের হামলার ঘটনার পরই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ রাজধানী দিল্লিতে উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসেন। বৈঠকে ছিলেন স্বরাষ্ট্রসচিব সহ শীর্ষস্তরের গোয়েন্দা আধিকারিকরা। জম্মু-কাশ্মীরের ডিজিপি এবং অন্যান্য অফিসাররা ভার্চুয়ালি বৈঠকে যোগ দেন এবং পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্ত্রীকে জানান। এই ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু।
Advertisement
পর্যটকদের ওপর হামলার ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন জম্মু-কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লা। তিনি এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করে লেখেন, ‘এই ঘটনায় আমি স্তম্ভিত। এই ঘটনা বিশ্বাস হচ্ছে না। পর্যটকদের উপর এই হামলা অত্যন্ত ঘৃণ্য। হামলাকারীরা পাশবিক, অমানবিক, ও ঘৃণার যোগ্য। এদের নিন্দায় শব্দ যথেষ্ট নয়। মৃতদের পরিবারের প্রতি আমার সমবেদনা জানাই।’ নিন্দা জানিয়েছেন উপ-রাজ্যপাল মনোজ সিনহা। তিনি এক্স হ্যান্ডলে কড়া নিন্দা জানিয়েছেন। ঘটনার নিন্দায় সরব হয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিও।
জানা গিয়েছে, সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা পর্যটকদের প্রত্যেকের নাম জিজ্ঞাসা করে এবং তারপর গুলি করে। এই ঘটনার পরই সমস্ত এলাকা ঘিরে ফেলে নিরাপত্তা বাহিনী। জঙ্গিদের খোঁজে এলাকা ঘিরে তল্লাশি চালানো হচ্ছে বলে সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে।
বৈসরনে পর্যটকদের ওপর হামলার খবর ছড়িয়ে পড়তেই পর্যটকদের উদ্ধারের জন্য সঙ্গে সঙ্গে একটি সেনা হেলিকপ্টার পাঠানো হয়। জানা গিয়েছে, ওই জায়গাটিতে শুধুমাত্র পায়ে হেঁটে অথবা ঘোড়ায় চড়ে যাওয়া সম্ভব। খবর পাওয়া মাত্রই সেখানে পৌঁছয় পুলিশ ও নিরাপত্তা বাহিনী। পৌঁছয় অ্যাম্বুল্যান্সও। সরকারি সূত্রে খবর, স্থানীয় মানুষ কয়েকজন আহত পর্যটককে ঘোড়ায় চাপিয়ে বৈসরন উপত্যকা থেকে সমতলে নামিয়ে আনেন। পহেলগাঁও হাসপাতালের এক চিকিৎসক জানিয়েছেন, ১২ জন পর্যটক হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। হামলার পরেই এক মহিলা পর্যটক সংবাদ সংস্থাকে জানিয়েছেন, ‘আমার স্বামীর মাথায় গুলি লেগেছে। আরও ৭ জন এই ঘটনায় আহত হয়েছেন।’
এই ঘটনায় শোকপ্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ‘আমি মর্মাহত। এই হিংসার ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়।’
Advertisement



