কেন্দ্রের ‘ফ্যাক্ট-চেকিং ইউনিট’ নিয়ে তুলোধনা শীর্ষ আদালতের

Written by SNS March 22, 2024 2:54 pm

বম্বে হাইকোর্টের নির্দেশ খারিজ করে সুপ্রিম স্থগিতাদেশ

দিল্লি, ২১ মার্চ– বৃহস্পতিবার দুটি বিষয়ে বিড়ম্ববনায় মোদি সরকার৷ প্রথমে বিকশিত ভারতের হোয়াটস অ্যাপ মেসেজে নিষেধাজ্ঞা৷ এরপর ‘ফ্যাক্ট-চেকিং ইউনিট’ নিয়ে কেন্দ্রকে তুলোধনা করল দেশের শীর্ষ আদালত৷ এফসিইউ তৈরিতে স্থগিতাদেশ দিল সুপ্রিম কোর্ট, এই বিষয়ে বম্বে কোর্টের নির্দেশ খারিজ হল৷ বুধবারই প্রেস ইনফরমেশন বু্যরোর আওতায় একটি ‘ফ্যাক্ট চেকিং ইউনিট’ চালুর বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল কেন্দ্রীয় ইলেকট্রনিক্স এবং তথ্য প্রযুক্তি মন্ত্রক৷ একদিন পরই, বৃহস্পতিবার (২১ মার্চ), এই বিজ্ঞপ্তির উপর স্থগিতাদেশ জারি করল সুপ্রিম কোর্ট৷

‘ভুয়ো’ তথা ‘বিভ্রান্তিকর’ খবর, বাকস্বাধীনতা তথা শিল্পের স্বাধীনতার দ্বন্দ্ব নিয়ে যথেষ্ট মতবিরোধ রয়েছে কেন্দ্র তথা রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মধ্যে৷ কোনটা ‘বিভ্রান্তিকর’ আর কোনটা রাষ্ট্রের ‘ভুল’ ধরানো প্রতিবাদী কণ্ঠ, কোনটিই বা শিল্পের স্বার্থের অনুগামী তা কার সমাধানে বিবেচিত হবে তার কোন নির্দিষ্ট নিয়মবিধি না থাকলেও বড় সিদ্ধান্ত নিয়েছিল মোদি সরকার৷ সংশোধিত তথ্যপ্রযুক্তি নিয়মের আওতায় সমাজমাধ্যমের বিষয়বস্তু নিরীক্ষণের জন্য একটি ফ্যাক্ট চেকিং ইউনিট তৈরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছিল৷

২০২৩ সালে সরকার তথ্য প্রযুক্তি আইন, ২০২১-এ যে সংশোধনী এনেছিল, তাকে বম্বে হাইকোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছে৷ সেই মামলা হাইকোর্টে এখনও বিচারাধীন৷ সেই মামলায় হাইকোর্ট কোনও রায় ঘোষণা না করা পর্যন্ত কেন্দ্রের জারি করা বিজ্ঞপ্তিটি স্থগিত থাকবে বলে জানিয়েছে আদালত৷

প্রথম থেকেই এফসিআই নিয়ে আপত্তি করেছে সোশ্যাল মিডিয়ায় কনটেন্ট তৈরি করা ভ্লগাররা৷ বম্বে হাইকোর্টে এই বিষয়ে মামলা করেন কৌতুকাভিনেতা কুণাল কামরা৷ তিনি এফসিইউ স্থাপনে স্থগিতাদেশ চেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছিলেন৷ যদিও সেই আবেদন খারিজ করেছিল হাইকোর্ট৷ বিচারপতি এ এস চান্দুরকারের একক বেঞ্চ জানিয়েছিল, তথ্যপ্রযুক্তি নিয়মের আওতায় একটি ফ্যাক্ট চেকিং ইউনিট স্থাপনের অনুমতি দিলে কোনও গুরুতর এবং অপূরণীয় ক্ষতি হবে না৷ দেশের বৃহত্তর স্বার্থের কথাও মনে করিয়ে দেন বিচারপতি৷ যদিও উচ্চ আদালতের রায় খারিজ করল শীর্ষ আদালত৷

উল্লেখ্য, ২০২১-এর পর ২০২৩-এ সংশোধিত হয় কেন্দ্রের তথ্য প্রযুক্তি নিয়ম৷ যেখানে বলা হয়েছে, সরকার সম্পর্কিত জাল, মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর অনলাইন বিষয়বস্তুকে চিহ্নিত করতে পারবে এফসিইউ৷ এর পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জরুরি পদক্ষেপ নিতে বলতে পারবে৷

বৃহস্পতিবার বিচারপতি জে বি পর্দিওয়ালা, বিচারপতি মনোজ মিশ্রা এবং প্রধান বিচারপতি ডি ওয়াই চন্দ্রচূডে়র বেঞ্চ জানাল, এই বিষয়টির সঙ্গে নাগরিকের বাক স্বাধীনতার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় সম্পর্কিত৷ যদিও মামলার গুরুত্বের বিষয়ে মন্তব্য করতে চায়নি আদালত৷ এইসঙ্গে এফসিইউ নিয়ে কেন্দ্রের বিজ্ঞপ্তিতে স্থগিতাদেশ দিয়েছে শীর্ষ আদালত৷

সমালোচকদের দাবি, নাগরিকদের মত প্রকাশের সব স্বাধীনতাকে খর্ব করতেই এই ইউনিট চালু করছে কেন্দ্র৷ তাই, কেন্দ্র যাতে এই পদক্ষেপ করতে না পারে, তার জন্য বম্বে হাইকোর্টে মামলা করা হয়েছিল৷ যদিও ১৩ মার্চ কেন্দ্রকে এই পদক্ষেপ গ্রহণ করা থেকে আটকাতে অস্বীকার করে হাইকোর্ট৷ এরপর হাইকোর্টের রায়কে সুপ্রিম কোর্টে চ্যালেঞ্জ করা হয়৷ সুপ্রিম কোর্ট, এদিন এই স্থগিতাদেশ জারি করল৷ ২০২৩-এর ৬ এপ্রিল, ২০২১ সালের তথ্য প্রযুক্তি আইনে কিছু সংশোধনী জারি করেছিল কেন্দ্রীয় সরকার৷ একটি নয়া বিধান যোগ করা হয়েছিল, যাতে আইটি মন্ত্রক অনলাইনে কেন্দ্রীয় সরকারের কাজকর্ম সংক্রান্ত ভুয়ো, মিথ্যা বা বিভ্রান্তিকর কনটেন্ট শনাক্ত করতে পারে৷