• facebook
  • twitter
Friday, 11 October, 2024

তিন রাজ্য প্রশাসনকে সুপ্রিম কোর্টের ভৎসনা

বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে জোড়-বিজোড় স্কিম ফের চালু করা হয়েছে। তারপরই শীর্ষ আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে প্রশাসনকে।

দিল্লিতে বায়ু দূষণের মাত্রা বৃদ্ধি পাওয়ায় সুপ্রিম কোর্টের প্যানেলের তরফে দিল্লি ও এনসিআরে পাবলিক হেলথ এমার্জেন্সি ঘােষণা করা হয়েছে। (Photo: IANS)

কেজরিওয়াল প্রশাসনের ‘নুসকা’ কি আদৌও কোনও সমাধান সূত্র বার করতে পারবে– দূষণ নিয়ন্ত্রণ ইস্যু নিয়ে উদ্বিগ্ন শীর্ষ আদালতের এমন কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়তে হল আম আদমি নেতার প্রশাসনকে। শীর্ষ আদালতের তরফে বলা হয়, শহরে দূষণ মাত্রাকে নিয়ন্ত্রণ করতে সাময়িক পদক্ষেপ নয়, দীর্ঘ মেয়াদি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

দিল্লি পরিবেশ দূষণ নিয়ন্ত্রণ বাের্ডের তরফে দেওয়া রিপাের্টের ভিত্তিতে বিচারপতি মিশ্রের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের তরফে নির্দেশ জারি করে বলা হয়, শহর ও পাশ্ববর্তী (এনসিআর) জায়গায় সমস্ত নির্মাণকাজ বন্ধ রাখতে হবে, অন্যথায় ১ লাখ টাকা জরিমানা হবে। পাশাপাশি নির্দেশ লঙ্ঘন করলে মাথাপিছু ৫ হাজার টাকা করে জরিমানা দিতে হবে।

বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে প্রাথমিকভাবে জোড়-বিজোড় স্কিম ফের চালু করা হয়েছে। তারপরই শীর্ষ আদালতের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে প্রশাসনকে। সুপ্রিম কোর্টের তরফে কেজরিওয়াল প্রশাসনের থেকে জানতে চাওয়া হয়েছে জোড়-বিজোড় স্কিম চাল করে কি লাভ হবে- ট্যাক্সি চলাচল কি বন্ধ করা যাবে? মানুষকে রাস্তায় বেরােতে হবে। তাদের রাস্তায় বেরােনাে, কোথাও যাওয়া কি বন্ধ করতে পারা যাবে? জোড় সংখ্যার ও বিজোড় সংখ্যার গাড়ি একদিনে বেড়তে না দিয়ে কি লাভ হবে? জোড় বিজোড় স্কিমের সুফল কি লক্ষ্য করা গেছে? শহরের পরিচিত বেশ কয়েকজন জোড়-বিজোড় স্কিম উপেক্ষা করে গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বেড়িয়েছে। জোড়-বিজোড় স্কিম চালু হওয়ার পর শহরের বিজেপি নেতা বিজয় গােয়েল জোড় সংখ্যার দিনে বিজোড় সংখ্যার নম্বরের গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বেরিয়েছিলেন। যদিও যাইন ভরেছেন।

বিচারপতি মিশ্রের বেঞ্চের তরফে বলা হয়, ‘মানুষকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে ফেলে দেওয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে দায়ি করা হবে। তারা রাজনীতি করতে আগ্রহী। তাদেরকে সক্রিয় পদক্ষেপ নিতে হবে। প্রতিবছর দূষণের বৃদ্ধি পাচ্ছে, কিন্তু আমরা কিছু করে উঠতে পারছি না। এটা কোনও সভ্য সমাজভিত্তিক প্রশাসনের চেহারা হতে পারে না’। আরও বলা হয়, ‘বাড়ির মধ্যেও কেউ নিরাপদ নয়, দূষণের মাত্রা বীভৎস আকার ধারণ করেছে। আমরা কি এই আবহাওয়ার মধ্যে বেঁচে থাকতে পারব? শহরের পরিস্থিতি জরুরি অবস্থার চেয়েও ভয়ঙ্কর হয়ে যাচ্ছে।

দুষণ-বিষের জ্বালা অব্যাহত দিল্লিতে। সােমবারও রাজধানীর বাতাসের মান ‘খুবই খারাপ’ রয়েছে। ধোঁয়ায় ঢেকে রয়েছে চারপাশ। দৃশ্যমানতার অভাবে বাতিল করতে হয়েছে বেশ কয়েকটি উড়ান। স্বাস্থ্য সংক্রান্ত জরুরি অবস্থা জারি থাকায় বন্ধ রয়েছে স্কুল-কলেজ । এদিকে, সােমবার থেকে ফের দিল্লিতে শুরু হয়েছে জোড়-বিজোড় যান চলাচল। কারপুলে অন্যান্য মন্ত্রীদের সঙ্গে দফতরে গিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল।

সােমবার থেকে দিল্লিতে ফের শুরু হয়েছে জোড়-বিজোড়। ট্রাফিক পুলিশের ২০০টি দলকে রাস্তায় নামানাে হয়েছে মানুষকে উৎসাহিত করতে মন্ত্রী সত্যেন্দ্র জৈন ও গােপাল রাইকে নিয়ে কারপুলে দফতরে যান দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এমন উদ্যোগের সামনে তাঁরা ডেঙ্গির মতােই দূষণকেও পরাজিত করবেন বলে দাবি করেছেন আপ নেতারা।

কেন্দ্রকে একহাত নিয়ে এদিন কেজরিওয়াল ফের বলেছেন জোড়-বিজোড় ব্যবস্থায় সমর্থন দেওয়া উচিত বিজেপির। তিনি বলেন, ‘উত্তর ভারতে দিল্লি একা দূষণের বিরুদ্ধে লড়তে পারবে না। প্রতিবেশী রাজ্যগুলিকেও এই লড়াইয়ে শামিল হতে হবে। আমরা ডেঙ্গির মতােই দুষণকেও পরাজিত করব। এই অবস্থায় ক্যাব ও অটোচালকরা বেশি চার্জ নিলে শাস্তি দেওয়া হবে’।

এদিন সাইকেলে চেপে অফিস যান উপ-মুখ্যমন্ত্রী মনীশ সিসােদিয়া। তিনি জানান, ‘আমার গাড়ির নম্বর বিজোড়। তাই আজ সাইকেলে চড়ে অফিস যাচ্ছি’। সােমবার রাজধানীতে দূষণের মাত্রা সামান্য কমলেও এখনও বাতাসের মান ‘সিভিয়ার’। ভাের ৪.৩০-এ দিল্লির একিউআই ছিল ৪৩৮। আলিপুর, নারেলা ও বাওয়ানার একিউআই ছিল যথাক্রমে ৪৯৩, ৪৮৬, ৪৭২। তারই মধ্যে এ দিনও পঞ্জাবের লুধিয়ানায় খড় পােড়ানাের দৃশ্য নজরে এসেছে।

দিল্লির দুঃসহ দূষণ নিয়ে সেখানকার মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালকে নানা বুদ্ধি দিচ্ছেন বিজেপির নেতা মন্ত্রী। কেউ বলছেন আবার যজ্ঞ করতে। এরমধ্যে অরবিন্দের পাশে দাঁড়ালেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ক্যাপটেন অমরিন্দর সিং। পঞ্জাব, হরিয়ানার শকুনেরা ফসল পােড়ানাের কারণেই বিষ বাতাসে ঢাকছে রাজধানী দিল্লি। এই অভিযোগ একাধিকবার করেছে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল। এবার তাই বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে চরম পদক্ষেপ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পঞ্জাব সরকার। শুকনাে ফসল পােড়ানাের অভিযােগে প্রায় ৩০০০ কৃষকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করতে চলেছেন অমরিন্দর সিং।

এই কড়া পদক্ষেপ করলে কিছুটা হলেও শুকনাে ফসল পােড়ানাের প্রবণতা বন্ধ হবে বলে মনে করছেন কংগ্রেসশাসিত পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর। যদিও এরই মধ্যে পঞ্জাব সরকারের কাছে ২০,৭২৯টি শুকনাে ফসল পােড়ানাের অভিযােগ জমা পড়েছে। ইতিমধ্যেই সেইসব অভিযােগের প্রেক্ষিতে ২,৯২৩ জন কৃষকের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করা শুরু করেছেন অমরিন্দর সিং। এ বছর ৪৯,০০০ শুকনাে ফসল পােড়ানাের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। তবে ৭০ শতাংশ কৃষিজমিতে আবার চাষের কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। সেকারণেই গত বছরে তুলনায় এবার অনেক কম শুকনাে ফসল পোড়ানাের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে।

২০১৮ সালে হাইকোর্টের পক্ষ থেকে নির্দেশিকা জারি করে কৃষকদের সতর্ক করা হয়েছিল, শুকনাে ফসল পােড়ালে মোটা টাকা জরিমানা করা হবে। সেই কারণেই এবার ফসল পােড়ানাের ঘটনা অনেকটঅই নিয়ন্ত্রণে বলে জানিয়েছেন অমরিন্দর সিং। আগে থেকেই গ্রামে গ্রামে নজরদারি চালিয়েছে রাজ্য সরকাররে গড়ে দেওয়া বিশেষ টিম। ১ নভেম্বর পর্যন্ত ১১,২৮৬টি শুকনাে ফসল পােড়ানাের ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। পরিবেশ দূষণের অভিযােগে এখনও পর্যন্ত ৪১,৬২,০০০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। এমনটাই জানিয়েছেন পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী অমরিন্দর।