অযােধ্যার বিতর্কিত জমি সরকার অধিগ্রহণ করে রামমন্দির গড়লে সুন্নি ওয়াকফ বাের্ডের আপত্তি নেই

যােড়শ শতাব্দীতে নির্মিত অযােধ্যার বাবরি মসজিদের জমির উপর দাবি জানিয়ে আসছিলেন হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ।

Written by SNS New Delhi | October 17, 2019 12:09 pm

বাবরি মসজিদ (Photo: IANS)

অযােধ্যার রামজন্মভূমি বাবরি মসজিদ বিবাদে সুন্নি ওয়াকফ বাের্ড বিতর্কিত বিতর্কিত উপর থেকে তাদের দাবি প্রত্যাহারে সম্মত হয়েছে বলে সুপ্রিম কোর্ট নিযুক্ত মধ্যস্থতাকারীদের প্যানেল তাদের রিপাের্টে জানিয়েছে বলে সুত্রের খবর। যদি তাই হয় তাহলে যে রামজন্মভূমি বাবরি মসজিদ বিতর্কের সুত্রপাত যােড়শ শতাব্দীতে এবং যে মামলা এখন সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন সেই মামলার শান্তিপূর্ণ সমাধানে এটি হতে চলেছে এক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক পদক্ষেপ।

সুত্রের মাধ্যমে এও জানা গেছে যে প্যানেল তাদের রিপাের্টে সুন্নি ওয়াকফ বাের্ডকে উদ্ধৃত করে লিখেছে যে বোর্ড চায় সরকার যদি রামজন্মভূমি বাবরি মসজিদ জমিটি অধিগ্রহণ করে রামমন্দির নির্মাণের জন্য তাহলে তাদের কোনও আপত্তি নেই। সুত্র অনুযায়ী প্যানেল তাদের রিপাের্টে জানিয়েছে যে, সুন্নি ওয়াকফ বাের্ড চায় অযােধ্যায় বাকি যে মসজিদগুলি আছে সেগুলির সংস্কারের দায়িত্ব যেন নেয় সরকার।

পাশাপাশি, সুন্নি ওয়াকফ বাের্ড সরকারের কাছে এ অনুরােধও করেছে বিতর্কিত জমিতে যে বাবরি মসজিদ ভেঙে ফেলা হয়েছিল, অন্যত্র কোনও বিকল্প স্থানে সেই মসজিদ তৈরি করার জন্য বাের্ডকে যেন অনুমতি দেওয়া হয়। প্যানেলের এই রিপাের্ট উদ্ধৃত করে সুত্র জানাচ্ছে যে এর ফলে রামজন্মভূমি বাবরি মসজিদের ১৩৪ বছরের বিবাদের মীমাংসা শান্তিপূর্ণভাবে সম্ভব হবে।

মধ্যস্থতাকারীদের প্যানেলের রিপাের্টে উল্লেখ করা হয়েছে সুন্নি ওয়াকফ বাের্ড এএসআই বা আর্কিওলজিকাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার অধীনস্থ মসজিদগুলির একটি তালিকা দিয়েছে এবং বাের্ডের তরফে অনুরােধ জানানাে হয়েছে আদালত কর্তৃক একটি কমিটি গঠন করে এই মসজিদগুলির কোন কোনটিতে প্রার্থনা বা নামাজের অনুমতি দেওয়া যায় তা যেন খতিয়ে দেখা হয়। সেই রিপাের্টে আরও জানানাে হয়েছে অযােধ্যায় যেকোনও স্থানে সৌভ্রাতৃত্বের একটি জাতীয় প্যাক তৈরি করা হােক যার জন্য রিপাের্টে অনুযায়ী মহন্ত ধরম দাস এবং পুদুচেরির শ্রী অরবিন্দ আশ্রম জমি দান করতে আগ্রহী।

মধ্যস্থতাকারীদের প্যানেলের এই রিপাের্ট এমন একদিন সুত্র অনুযায়ী প্রকাশ পেয়েছে, যেদিন রামজন্মভূমি বাবরি মসজিদ জমি বিতর্ক মামলার শুনানি শেষ হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে। বুধবার এই শুনানি শেষ করতে গিয়ে সুপ্রিম কোর্টের বক্তব্য হল ‘অনেক হয়েছে, আর নয়’। যদিও রায়দান স্থগিত রেখেছে দেশের শীর্ষ আদালত।

যােড়শ শতাব্দীতে নির্মিত অযােধ্যার বাবরি মসজিদের জমির উপর দাবি জানিয়ে আসছিলেন হিন্দু ও মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ। ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর হিন্দু সংগঠনের সমর্থকরা বাবরি মসজিদ ভেঙে গুড়িয়ে দেয় কারণ দাবি ছিল মন্দির ভেঙে অযােধ্যার বিতর্কিত স্থানে মসজিদ তৈরি করেছিল বাবরের সেনাপতি মীর বাকি। যে জায়গায় মসজিদ গড়ে উঠেছিল সেটি ছিল ভগবান রামের জন্মস্থান বলে দাবি হিন্দুপক্ষের। রামজন্মভূমি ও বাবরি মসজিদ বিতর্কের ফলে বহুবার দেশে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গা হয়েছে যাতে মারা গেছেন বহু মানুষ।

মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের ‘রামলালা’ পক্ষের আইনজীবী সওয়াল করতে গিয়ে বলেছিলেন শুধু অযােধ্যায় ৫৫ থেকে ৬০টি মসজিদ রয়েছে। কিন্তু হিন্দুদের আস্থা রামের জন্মভূমি সেখানেই যেখানে বাবরি মসজিদ ছিল। ভগবান রামের জন্মস্থান পরিবর্তন করা যায় না। এই প্রেক্ষিতে সুন্নি ওয়াকফ বাের্ডের প্রস্তাবকে আনুষ্ঠানিকভাবে মেনে নিতে হবে এই মামলায় জড়িত সব পক্ষকেই।

এটা অবশ্য এখনও জানা যায়নি যে সুন্নি ওয়াকফ বাের্ডের এই প্রস্তাব নিয়ে নিমােহী আখাড়া, দ্বারকার শঙ্করাচার্য এবং হিন্দু মহাসভার মত কী। মধ্যস্থতাকারীদের যে প্যানেল গঠিত হয়েছিল সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তার অন্যতম সদস্য হলেন বিচারপতি কলিফুল্লা। তিনি বুধবার সকালে রিপাের্টটি জমা দেন সুপ্রিম কোর্টে। যদিও এদিন আদালতে প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ এর উল্লেখ করেননি। আগামী মাসে যদি সুপ্রিম কোর্ট এই মামলার রায় ঘােষণা করে তাহলে হতে পারে যে এই রিপাের্টের উল্লেখ থাকবে সেই রিপাের্টে। প্রধান বিচারপতি রঞ্জন গগৈ ১৭ নভেম্বর অবসর গ্রহণ করছেন। তার আগে এই মামলার রায় হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।