প্রথম দফার ভোটে বিক্ষিপ্ত অশান্তি, ভোটের হারে অন্য রাজ্যের তুলনায় এগিয়ে বাংলা 

Written by SNS April 19, 2024 8:58 pm
দিল্লি, ১৯ এপ্রিল – দেশজুড়ে সাঙ্গ হল প্রথম দফার লোকসভা নির্বাচন। মোট ২১ টি রাজ্য এবং চারটি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল মিলিয়ে ভোট হয়েছে ১০২টি আসনে। বিকেল ৫ টা পর্যন্ত ভোটের হারে দেশের অন্য রাজ্যগুলি তুলনায় এগিয়ে রয়েছে বাংলা।  তিনটি আসনে গড়ে ভোট পড়ল ৭৭.৫৭ শতাংশ।  ত্রিপুরা দ্বিতীয় স্থানে , ভোটের হার ৭৬.০১ শতাংশও। গোটা দেশে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত ১০২টি আসনে ভোটের হার ৫৯.০৭ শতাংশ।  
 

তামিলনাড়ুর সব আসনেই হয় ভোটগ্রহণ। তামিলনাড়ুতে ৩৯ টি আসনে বিকেল ৫ টা পর্যন্ত গড়ে ভোট পড়েছে ৬৩.২০ শতাংশ। সবচেয়ে কম ভোট পড়েছে বিহারে , ৪৬.০৩ শতাংশ। মণিপুরে ভোটের হার ৬৭. ০৭ শতাংশ।  দক্ষিণ চেন্নাই আসনে ভোটের হার ৫৭.০২ শতাংশ। নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে,  বেলা ৩ টে পর্যন্ত গোটা দেশে ভোটের হার প্রায়  ৪৯.৭৮ শতাংশ। উত্তরপ্রদেশে ৪টি লোকসভা কেন্দ্রে বেলা ৩ টে পর্যন্ত ৫৭.৬ শতাংশ ভোট পড়ে।  সিকিমে ভোটের হার ৫২.৭৩ শতাংশ।  অসমের ৫টি কেন্দ্রে ৭০.০৮ শতাংশ। উত্তরাখণ্ডে  ভোট পড়েছে ৫৩।০৬ শতাংশ, রাজস্থানে বিকেল ৫টা পর্যন্ত ভোট পড়েছে ৫০.০৫ শতাংশ। মিজোরামে ৫২.০৭, পুদুচেরিতে ৫৮.৮৬ শতাংশ ভোট পড়ে।  শুক্রবার সন্ধে ৭ টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ পর্ব চলে।

এদিন ভোট হয় উত্তরাখণ্ড এবং মহারাষ্ট্রের ছয় আসন, উত্তরপ্রদেশের আট আসন, রাজস্থানের ১২ আসনে ভোটগ্রহণ হয়। পশ্চিমবঙ্গের তিন আসন ছাড়াও ভোটগ্রহণ হচ্ছে দেশের অন্যান্য ৯৯ আসনে। এ ছাড়াও অরুণাচল প্রদেশ, মণিপুর এবং মেঘালয়ের দু’টি করে আসনে ভোটগ্রহণ হয়। একটি করে আসনে ভোটগ্রহণ হয়  ছত্তীসগঢ়, মিজ়োরাম, নাগাল্যান্ড, সিকিম, ত্রিপুরা, উত্তরাখণ্ড, আন্দামান ও নিকোবর, জম্মু ও কাশ্মীর, লক্ষদ্বীপ এবং পুদুচেরিতে। বিহারের চার আসনে ভোটগ্রহণ সম্পন্ন হয় । উল্লেখ্য, মণিপুরে মোট দু’টি লোকসভা আসন। ইনার মণিপুর এবং আউটার মণিপুর। তবে নির্বাচন কমিশন আউটার মণিপুরকে ভাগ করে দু’দফায় ভোট করানোর সিদ্ধান্ত নেয় । শুক্রবার তাই আউটার মণিপুরের একাংশে ভোটগ্রহণ হয় । বাকি অংশে ভোটগ্রহণ হবে ২৬ এপ্রিল। পশ্চিমবঙ্গের তিন আসন জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্র।

 
লোকসভা নির্বাচনে বিশেষ নজর ছিল মণিপুরের দিকে। গোষ্ঠী সংঘর্ষের আগুনে দীর্ঘ সময় ধরে জ্বলেছে উত্তর-পূর্বের এই রাজ্য। এই পরিস্থিতিতে শুক্রবার সকালে  ২৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায়। সেই ভিডিওয় গুলি চালানোর শব্দ পাওয়া যায় । তবে ইনার মণিপুর না আউটার মণিপুর কোথায় গুলি চলে তা স্পষ্ট নয়।
 
ভোট চলাকালীন ইনার মণিপুরের থামানপোকপি লোকসভা কেন্দ্রের একটি বুথে হামলা চালায় সশস্ত্র দুষ্কৃতী বাহিনী। পুলিশ সূত্রে এখনও হতাহতের কোনও খবর নিশ্চিত করেনি। গুলি চালানোর ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই ওই বুথের বাইরে লাইনে থাকা ভোটারদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। সংবাদমাধ্যম সূত্রে খবর, শুধু একটা কেন্দ্রে নয়, রাজ্যে আরও কয়েকটি জায়গা থেকেও অশান্তির খবর মিলেছে ।
 
কমিশন  সূত্রের খবর, ইনার মণিপুরের ৩২ বিধানসভাতেই শুক্রবার সকাল থেকে শান্তিপূর্ণ ভাবে ভোট হয় । আউটার মণিপুরের শুধু চূড়াচাঁদপুর এবং চান্দেল জেলার ১৫টি বিধানসভা আসনে ভোটগ্রহণ হয় শুক্রবার। বাকি ১৩টিতে ভোটগ্রহণ হবে ২৬ এপ্রিল দ্বিতীয় দফায়। সব মিলিয়ে মণিপুরের প্রায় ১৬ লক্ষ ভোটার ভোট দেন শুক্রবার। একই কেন্দ্রে দুদফায় ভোট হওয়া ভারতের রাজনীতিতে নজিরবিহীন ঘটনা।
 
 
ছত্তিশগড়ে গ্রেনেড বিস্ফোরণে নিহত হন সিআরপিএফ জওয়ান। ছত্তিশগড়ের  বিজাপুর জেলায় ভোট চলাকালীন আচমকাই গ্রেনেড বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে । এই ঘটনায় ভোটের দায়িত্বে থাকা এক সিআরপিএফ জওয়ান আহত হন বলে পুলিশ সূত্রে খবর। এক পুলিশ আধিকারিকের কথায়, ‘‘বস্তার লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত এলাকায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছ।’’

 

উত্তরপ্রদেশে বুথদখলের অভিযোগ ওঠে। সমাজমাধ্যমে একাধিক পোস্ট করে অখিলেশ যাদবের দল দাবি করতে শুরু করে উত্তরপ্রদেশের রামপুর এবং মুজফ্‌ফনগরের এলাকা বুথে ইভিএমে ত্রুটি দেখা দিয়েছে। শুধু তা-ই নয়, মুজফ্‌ফনগরের বিজেপি প্রার্থী তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সঞ্জীব বালিয়ানের বিরুদ্ধে বুথদখলের অভিযোগ তোলেন  এসপি প্রার্থী হরেন্দ্র মালিক। কমিশনে অভিযোগও দায়ের করেন তিনি। উত্তরপ্রদেশের কয়েকটি জায়গায় অশান্তির অভিযোগ প্রকাশ্যে এসেছে। রাজ্যের শাসকদল বিজেপির বিরুদ্ধে ভোটে হিংসার ঘটনার অভিযোগ তুলেছে সমাজবাদী পার্টি ।

শুক্রবার চেন্নাইয়ের এক বুথে ভোট দেন  ডিএমকে প্রধান তথা তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন। ডিএমকে প্রধানের সঙ্গে ভোট দিতে আসেন তাঁর স্ত্রীও। ভোট দিয়ে এসে স্ট্যালিন বলেন, ‘‘সকলের উচিত ভোট দেওয়া।’’ পাশাপাশি নিজের লোকসভা কেন্দ্রে ভোট দিলেন সদ্‌গুরু। তামিলনাড়ুর চেন্নাইতে ভোট দেন অভিনেতা রজনীকান্ত। শুক্রবার সকাল সকালই নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে বুথে পৌঁছে যান তিনি।

মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড ভোট দেন টুরাতে। বিজেপির সহযোগী দল এনপিপির প্রধান তথা মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা তুরা লোকসভা কেন্দ্রের এক বুথে সকাল সাড়ে ৬টায় পৌঁছে যান।  ভোট দিতে ভোর ভোর বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়েছিলেন মেঘালয়ের মুখ্যমন্ত্রী কনরাড সাংমা।  ভোট দিতে যাওয়ায় উৎসাহ দিতে নিজের গাড়িচালক, দেহরক্ষীদের ছুটি দিয়েছিলেন।   নিজেই গাড়ি চালিয়ে টুরার ওয়ালবাকগ্রে ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে পৌঁছে যান সাংমা। প্রায় তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেন তিনি। টুরা আসনে তৃণমূলের প্রার্থী প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমার ভাই জ়েনিথ। এ ছাড়াও কংগ্রেস এই আসনে প্রার্থী করেছে সালেং এ সাংমাকে। ২০১৯ সালে তুরা আসন থেকে জয় পেয়েছিলেন আগাথা সাংমা। তাঁকে এ বারও প্রার্থী করেছে এনপিপি।

ভোট দেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা পি চিদম্বরম। শুক্রবার তামিলনাড়ুর শিবগঙ্গা জেলার একটি বুথে গিয়ে নিজের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন প্রবীণ কংগ্রেস নেতা তথা প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পি চিদম্বরম। শিবগঙ্গা লোকসভা আসন থেকেই এ বার কংগ্রেস প্রার্থী করেছে চিদম্বরম-পুত্র কার্তিকে। বিজেপির হয়ে লড়ছেন দেবনাথন যাদব এবং এআইএডিএমকে-র প্রার্থী জেভিয়েরদাস। ২০১৯ সালে এই আসন থেকেই জিতে সাংসদ হয়েছিলেন চিদম্বরম-পুত্র।

ভোট দেন সঙ্ঘপ্রধান ভাগবত। রাষ্ট্রীয় সেবক সঙ্ঘ প্রধান মোহন ভাগবত শুক্রবার সকাল সকালই ভোট দিতে বুথে পৌঁছে যান। মহারাষ্ট্রের নাগপুরের এক বুথে এসে ভোট দেন তিনি।

এদিকে নাগাল্যান্ডে ৬ টি জেলার মানুষ ভোট বয়কটের সিদ্ধান্ত নেয়।  কমিশন সূত্রে বলা হয়, এমন ঘটনা নজিরবিহীন।  বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে এত বিপুল সংখ্যক মানুষের ভোট বয়কটের নজির মাওবাদী অঞ্চলেও নেই।  যদিও ওই ৬ জেলায় হিংসার কোন ঘটনা ঘটেনি।  ইস্টার্ন নাগাল্যান্ড পিপলস অর্গানাইস্টিং নাম একটি সংগঠন স্বশাসনের দাবিতে ভোট বয়কটের ডাক দেয়। 

অরুণাচল প্রদেশের মালগাম কেন্দ্রে ভোট দেন একমাত্র ভোটার শোকেলা তায়াং। আন্দামান নিকোবর দ্বীপপুঞ্জে  শোম্পেন আদিবাসী পরিবারের ৭ জন ভোটার ভোট দেন।  এছাড়াও ভোট দেন আদিবাসী জনজাতির ভোটাররা।  এদিন রাজস্থানে সিকারে ধীরাজ ও পূজা সনি বিয়ে করে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে যান। দুজনে মিলে সেলফিও তোলেন।