• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

সাতারার মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যু প্রাতিষ্ঠানিক খুন, অভিযোগ রাহুল গান্ধীর

মানসিক নির্যাতনের অভিযোগে উল্লেখ করা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন ওই চিকিৎসক। ওই যুবকের প্রেম প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার ফলে তিনি সমস্যায় পড়েন।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

মহারাষ্ট্রের সাতারায় কর্তব্যরত এক মহিলা চিকিৎসকের আত্মহত্যাকে ‘প্রাতিষ্ঠানিক খুন’ বলে মন্তব্য করেছেন কংগ্রেসের লোকসভার নেতা রাহুল গান্ধী। তিনি বলেন, ‘মহারাষ্ট্রের মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যু চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল শাসক দলের অমানবিক ও অসংবেদনশীল চেহারা।’

রাহুল গান্ধী সামাজিক মাধ্যমে লেখেন, ‘সাতারার ফলটন উপ-জেলা হাসপাতালের মহিলা চিকিৎসকের মৃত্যু আসলে আত্মহত্যা নয়। এটি প্রাতিষ্ঠানিক খুন এবং ক্ষমতার বর্মে থাকা আদর্শের অপরাধের নির্লজ্জ উদাহরণ।’

Advertisement

তিনি আরও লেখেন, ‘অপরাধীদের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করার জন্য যে ব্যক্তির কাঁধে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে, তিনিই ধর্ষণ এবং শোষণের মতো জঘন্য কাজ করে বসে আছেন!’ কংগ্রেস নেতার অভিযোগ, বিজেপির সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত প্রভাবশালী কিছু লোক ওই চিকিৎসকের উপর আগেও চাপ সৃষ্টি করেছেন। সবই করেছেন তাঁদের দুর্নীতির লক্ষ্যপূরণের জন্য।

Advertisement

প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার রাতে সাতারার একটি হোটেল থেকে চিকিৎসকের ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হয়। তাঁর হাতের তালুতে লেখা ছিল এক সাব-ইন্সপেক্টর ও এক সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের নাম। অভিযোগ, সাব-ইন্সপেক্টর তাঁকে পাঁচ মাসে চারবার ধর্ষণ করেছেন এবং ওই সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার মানসিক নির্যাতন চালিয়েছেন। মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফড়নবীস ঘটনার পর অবিলম্বে সাব-ইন্সপেক্টরকে বরখাস্তের নির্দেশ দেন। শনিবার দুই অভিযুক্তকেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

তদন্তে জানা গিয়েছে, ২৬ বছর বয়সী ওই মহিলা চিকিৎসক এমবিবিএস পাশ করেছিলেন। তিনি সাতারার ফলটনের সরকারি হাসপাতালে মেডিক্যাল আধিকারিক হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। তিনি বীড জেলার বাসিন্দা, সাতারায় ভাড়া থাকতেন। এই চুক্তিভিত্তিক চাকরির পাশাপাশি তিনি এমডি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

মানসিক নির্যাতনের অভিযোগে উল্লেখ করা সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন ওই চিকিৎসক। ওই যুবকের প্রেম প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার ফলে তিনি সমস্যায় পড়েন। পুলিশ সূত্রে জানা যায়, ধৃতরা পূর্বপরিচিত। সাব-ইন্সপেক্টরের বিরুদ্ধে পাঁচ মাসে চারবার ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। মহিলা চিকিৎসক যে এসআইয়ের বিরুদ্ধে শেষ পাঁচ মাসে চার বার ধর্ষণের কথা হাতের তালুতে লিখে আত্মঘাতী হয়েছেন, আদতে তাঁরা প্রতিবেশী। জানা যাচ্ছে, বীড জেলায় একই এলাকায় তাঁদের বাড়ি।

এদিকে সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের বোনের দাবি, দাদার সঙ্গে ভাড়াটে তরুণীর ঘনিষ্ঠতা ছিল। তাঁর দাবি, ভাড়াটে হলেও চিকিৎসককে বাড়ির মেয়ের মতোই দেখতেন তাঁর বাবা-মা। তিনিও ভালবাসতেন। কিন্তু সপ্তাহ কয়েক হল সেই সম্পর্কে চিড় ধরে। পরে খানিক মিটমাটও হয়ে গিয়েছিল। বাড়িওয়ালার মেয়ের কথায়, ‘দাদার ডেঙ্গি ধরা পড়ার পরে ওর দেখভাল করেছিলেন ডাক্তার দিদি। সব কিছু তখন ঠিকঠাক ছিল। এমনকি, মৃত্যুর আগের দিনও দাদাকে কয়েকবার ফোন করেছিলেন তিনি। সেই সমস্ত প্রমাণ আমরা পুলিশের হাতে তুলে দিয়েছি।’

উল্লেখ্য, আত্মহত্যার আগে চিকিৎসক পুলিশের বিরুদ্ধে মানসিক চাপ, হুমকি ও হয়রানির অভিযোগ করেছিলেন। তদন্তে কিছু প্রমাণ না মেলায় পুলিশের পক্ষ থেকে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে অসহযোগিতার অভিযোগও আনা হয়েছে। এই অভিযোগের তদন্তের জন্য দুই সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে মহিলা চিকিৎসকের পরিবার এবং কংগ্রেস নেতারা সুবিচারের জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন। রাহুল গান্ধী জানিয়েছেন, যতদিন না মৃতার পরিবার সুবিচার পান, ততদিন তাদের পাশে থেকে লড়াই চালিয়ে যাবেন।

Advertisement