পুরী, ২৭ মে— পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের উদ্যোগে তৈরি দিঘার মন্দির বেশ চাপে ফেলে দিয়েছে পুরীর জগন্নাথ মন্দির কর্তৃপক্ষকে। পুরীর জগন্নাথ মন্দিরের ঐতিহ্য রক্ষায় এবার ‘শ্রীমন্দির’, ‘জগন্নাথ ধাম’, ‘মহাপ্রসাদ’ সহ একাধিক ধর্মীয় শব্দ ও প্রতীকের পেটেন্ট নিতে উদ্যোগী শ্রী জগন্নাথ টেম্পল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন। এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সোমবার পুরীতে এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে বসেন জগন্নাথ মন্দির কর্তৃপক্ষ। এরপরই এই পেটেন্ট নেওয়ার সিদ্ধান্তের ঘোষণা কর্তৃপক্ষের। মন্দির প্রশাসনের প্রধান আধিকারিক অরবিন্দ পাধী বলেন, জগন্নাথ মন্দিরের পবিত্রতা, সংস্কৃতি ও অনন্য পরিচয়কে রক্ষা করতেই আইনি রক্ষাকবচের মধ্যে রাখার ভাবনা ‘শ্রীমন্দির’, ‘জগন্নাথ ধাম’, ‘মহাপ্রসাদ’-কে।
শ্রী জগন্নাথ টেম্পল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন সূত্রে জানা গিয়েছে, যে সব নাম এবং প্রতীকের জন্য পেটেন্ট চাওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেগুলি হল— শ্রীমন্দির, জগন্নাথ ধাম, মহাপ্রসাদ, শ্রীমন্দিরের লোগো, শ্রীক্ষেত্র, পুরুষোত্তম ধাম।
মন্দির প্রশাসন আরও জানিয়েছে, ‘এই শব্দগুলি যেন অযথা ও অবাধভাবে অন্যত্র ব্যবহার করা না হয় এবং ভবিষ্যতে জগন্নাথের নাম ও চিহ্নকে রাজনৈতিক কিংবা প্রমোশনাল উদ্দেশ্যে কেউ ব্যবহার করতে পারবে না।’
Advertisement
সম্প্রতি পুরীর জগন্নাথ মন্দির কর্তৃপক্ষের এই পদক্ষেপের পেছনে কাজ করছে সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গের দীঘায় জগন্নাথ মন্দির তৈরির পর শুরু হওয়া বিতর্ক। সেই মন্দির তৈরি হয় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় উদ্যোগে। মন্দিরে উদ্বোধনের পর পশ্চিমবঙ্গ সরকার ওই মন্দিরের নাম রেখেছে ‘জগন্নাথধাম দিঘা’। এরপরই শুরু হয় বিতর্ক। নাম নিয়ে মন্তব্য প্রকাশ করেন পুরীর গজপতি রাজা দিব্যসিংহ দেব। তিনি কড়া ভাষায় আপত্তি জানিয়ে বলেছেন, ‘জগন্নাথ ধাম, শ্রীক্ষেত্র, নীলাচল—এই সমস্ত পবিত্র নাম শুধুমাত্র পুরীর সঙ্গেই জড়িত। এগুলির অন্যত্র ব্যবহার ভক্তদের ধর্মীয় অনুভূতিকে আঘাত করে।’
Advertisement
এরপর ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহন চরণ মাজি বিষয়টি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারকে চিঠি দিয়ে অনুরোধ করেছেন দিঘার মন্দিরের নাম থেকে ‘জগন্নাথ ধাম’ শব্দবন্ধটি সরাতে। যদিও সেই অনুরোধে নবান্ন কোনও সাড়া দেয়নি বলেই খবর।
উল্লেখ্য, বেশ কয়েকটি বিষয় নিয়ে ইতিমধ্যে দিঘার জগন্নাথ মন্দির নিয়ে ক্ষুব্ধ হতে দেখা গিয়েছে একাধিক ধর্মীয় সংগঠনকে। তাঁদের অভিযোগ, পুরীর আদলে দিঘার মন্দির তৈরি হলেও এখানে অহিন্দু ও বিদেশিদের প্রবেশে কোনও বাধা নেই। অন্যদিকে, পুরীর মন্দিরে প্রবেশ কেবলমাত্র হিন্দুদের জন্যই খোলা।
এছাড়াও বিগ্রহের কাঠ নিয়ে বিতর্ক আরও বেড়েছে। দৈতাপতি নিযোগ-এর সম্পাদক রামকৃষ্ণ দাসমহাপাত্র অভিযোগ করেছেন— দিঘার মন্দিরে যে কাঠের মূর্তি বসানো হয়েছে, তা আসলে নবকলেবর সময়ে অব্যবহৃত কাঠ থেকে তৈরি। পুরীতে নবকলেবর একটি অত্যন্ত পবিত্র ও ধর্মীয় রীতি, যেখানে পুরনো মূর্তির বদলে নতুন নিম কাঠের মূর্তি তৈরি হয় বিশেষ বিধান মেনে। সেই কাঠ অন্যত্র ব্যবহার করা ‘অপবিত্র’ বলে মনে করা হয়। তবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, দিঘার মন্দিরের বিগ্রহের সঙ্গে নবকলেবরের কাঠের কোনও সম্পর্ক নেই।
Advertisement



