পুরীতে রথযাত্রার দিন পদপিষ্ট হয়ে কমপক্ষে ৫০০ জন জখম হয়েছিলেন। রবিবার ভোরে ফের পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে পুরীতে। এর জেরে মৃত্যু হয়েছে তিনজনের। জখম হয়েছেন কমপক্ষে ১০ জন। গোটা ঘটনায় গাফিলতির কথা মেনে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝি দুঃখপ্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, নিরাপত্তা ত্রুটির বিষয়টি অবিলম্বে তদন্ত করা হবে। প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করা হবে।
এক্স হ্যান্ডলে ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝি লেখেন, ‘আমি এবং আমার সরকার জগন্নাথ ভক্তদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি। প্রভু জগন্নাথদেব স্বজনহারাদের এই দুঃখ সহ্য করার শক্তি দিন। এই ধরনের গাফিলতি সহ্য করা যায় না। নিরাপত্তা ত্রুটির বিষয়টি অবিলম্বে তদন্ত করা হবে। পুরো ঘটনার পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা হচ্ছে। দোষীরা শাস্তি পাবেই।’
ওড়িশা সরকার এই ঘটনায় জন্য ভিড়কেই দায়ী করছে। এর আগে গত শুক্রবারও রথযাত্রার সময় পদপিষ্টের পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল। এমনকী সময় মতো রথ পৌঁছতে না পারায় যাত্রা স্থগিতও করে দিতে হয়। তারপর রবিবার ভোরেই ফের পদপিষ্টের পরিস্থিতি। স্থানীয়দের দাবি, ভিড় সামাল দেওয়ার জন্য যথাযথ ব্যবস্থা করেনি প্রশাসন। পুলিশকর্মীর সংখ্যাও ছিল অপ্রতুল। ভিড় নিয়ন্ত্রণের কোনও ব্যবস্থাই ছিল না।
দুর্ঘটনার জন্য ভিআইপি কালচারের দিকেও আঙুল তুলেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, ‘ভিআইপিদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা করতে গিয়েই এই দুর্ঘটনা ঘটে। পুলিশ শেষ মুহূর্তে পুণ্যার্থীদের সরিয়ে আলাদা করে রাস্তা তৈরির চেষ্টা করছিল ভিআইপিদের জন্য। ফলে সাধারণ পুণ্যার্থীদের সরে যেতে হয়েছে। তাছাড়া অনেক পুণ্যার্থীকে জগন্নাথদেবের দর্শনের আগেই ফিরে যেতে হয়েছিল। ফলে প্রবেশ পথই প্রস্থানের পথ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তাতেই এক জায়গায় হুড়োহুড়ি পড়ে যায়।’
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতদের মধ্যে দু’জন মহিলা – প্রতিভা দাস ফেমালে (৫২) এবং বাসন্তী সাহু (৪২)। অন্য জন সত্তোরোর্ধ্ব বৃদ্ধ প্রেমকান্ত মোহান্তি। ওড়িশার খুরদা জেলার বাসিন্দা ওই তিনজন রথযাত্রা উপলক্ষে এসেছিলেন পুরীতে। এই ঘটনায় বেশ কয়েক জন আহতও হন। তাঁদের উদ্ধার করে তড়িঘড়ি হাসপাতালে পাঠানো হয়। ওড়িশার আইনমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ হরিচন্দন জানান, তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। ঘটনার উপর নজর রাখা হচ্ছে। গাফিলতির অভিযোগ মিললে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয় প্রশাসন ও শ্রীমন্দিরের সংশ্লিষ্ট সূত্রের দাবি, রথ সংলগ্ন ঘেরাটোপে বাড়তি লোকজনকে ঢোকার ছাড়পত্র দেওয়ার জন্যই ভুগতে হয়েছে এত মানুষকে। প্রশাসনিক সিদ্ধান্তের হঠকারিতার ফলেই এত জনের জীবন নিয়ে ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। আরেকটি সূত্রের দাবি, ভোর ৪টার নাগাদ চরামালা কাঠ বোঝাই দুটি ট্রাক সারধাবালি এলাকায় প্রবেশ করে। দুটি ট্রাকের অপ্রত্যাশিত আগমনের ফলে ভক্তদের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়, যার ফলে পদপিষ্টের ঘটনা ঘটে।
ভক্তদের থেকে অন্তত দু’কিলোমিটার দূরে অ্যাম্বুল্যান্স ছিল বলে জানিয়েছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। নিহতদের একজনের স্বামীর অভিযোগ, ‘ঘটনাটি ঘটার সময় দমকল, উদ্ধারকারী দল, হাসপাতাল কোনও পক্ষের কোনও কর্মকর্তা হাজির ছিলেন না সেখানে, বারবার ডেকেও সাড়া মেলেনি বলেও অভিযোগ করেছেন তিনি।’
আহত এক তরুণী বলেন, ‘সুভদ্রার রথের সামনে দাঁড়িয়েছিলাম। আচমকা ঠেলাঠেলি শুরু হয়। বাঁ-পায়ে চোট লেগেছে। পরিবারের সদস্যরা সকলেই আহত।’ এরপরই সরকারের বিরুদ্ধে অব্যবস্থার অভিযোগ তুলেছেন তরুণী। তাঁর অভিযোগ, ‘সেখানে কোনও সরকারি আধিকারিক, পুলিশ-প্রশাসন, এমনকী কোনও অ্যাম্বুল্যান্সের ব্যবস্থা ছিল না।’
এই ঘটনায় ওড়িশা সরকারের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা বিজেডি নেতা নবীন পট্টনায়েক। এক্স হ্যান্ডলে তিনি লেখেন, ‘রথযাত্রার দিন ভিড় নিয়ন্ত্রণে ভয়াবহ ব্যর্থতার মাত্র একদিন পর আজকের পদদলিত হওয়ার ঘটনা, যা শত শত আহতের ঘটনায়, ভক্তদের জন্য শান্তিপূর্ণ উৎসব নিশ্চিত করতে সরকারের স্পষ্ট অক্ষমতা প্রকাশ করে। ভিড় সামলানোর জন্য কোনও পর্যাপ্ত সরকারি ব্যবস্থাপনা ছিল না, যা কর্তব্যে অবহেলার দিকটি তুলে ধরে।’
এদিকে মৃতদের পরিবারকে ২৫ লক্ষ টাকা করে দেওয়ার কথা ঘোষণা করেছেন ওড়িশার মুখ্যমন্ত্রী মোহনচরণ মাঝি। তারপরেই মুখ্যমন্ত্রীর দপ্তর থেকে পুরীর জেলাশাসক এবং পুলিশ সুপারকে বদলির কথা ঘোষণা করা হয়। পুরীর নতুন এসপি হয়েছেন পিনাক মিশ্র। নতুন জেলাশাসক হয়েছেন চঞ্চল রানা।