উন্নাওয়ে পীড়িত মহিলার মৃত্যুতে সারা দেশে প্রতিবাদ

উন্নাওয়ে পীড়িতার মৃত্যুর পর উত্তরপ্রদেশের যােগী সরকারের দুই মন্ত্রী সেই পীড়িত মহিলার গ্রামে গেলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় মানুষ।

Written by SNS New Delhi | December 8, 2019 2:40 pm

প্রতিকি ছবি (Photo: iStock)

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদির বিরুদ্ধে শনিবার মহিলা নিগ্রহের ঘটনায় তীব্র আক্রমণ শানালেন কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধি। তিনি বলেন, ভারত আজ বিশ্বের ধর্ষণের রাজধানী হিসেবে কুখ্যাতি লাভ করেছে। বিদেশি রাষ্ট্রগুলি আজ প্রশ্ন করতে শুরু করেছে কেন ভারত মহিলাদের সুরক্ষা দিতে ব্যর্থ।

উত্তরপ্রদেশের উন্নাওয়ে গণধর্ষণের শিকার এক মহিলাকে আদালতে যাওয়ার পথে জামিনে মুক্ত এই অপরাধের অভিযুক্তরা গায়ে আগুন ধরিয়ে হত্যার চেষ্টা করে। সেই ঘটনার প্রায় ৮৫ শতাংশ দগ্ধ অবস্থায় মহিলাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। শুক্রবার বেশি রাতে পীড়িতার মৃত্যু ঘটে।

পাশাপাশি, তেলেঙ্গানায় এক ডাক্তার মহিলাকে গণধর্ষণের পর তাকে পুড়িয়ে মারা হয়। পরপর ধর্ষণের ঘটনায় প্রতিবাদে উত্তাল এখন সারা দেশ। এরই পরিপ্রেক্ষিতে ওয়ানডে শনিবার বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাহুল চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মােদিকে। রাহুল এদিন বলেন, দেশের প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামােগুলি আজ একে একে ভেঙে পড়েছে, তাই মানুষ আজ আইন নিজেদের হাতে তুলে নিচ্ছে। কারণ যে ব্যক্তি আজ দেশের দণ্ডমুণ্ডের কর্তা তিনি হিংসা এবং নির্বিচার ক্ষমতায় বিশ্বাস করেন।

কেরলের ওয়ানডে নিজের নির্বাচনী কেন্দ্রে দলীয় কর্মীদের সামনে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাহুল এই মন্তব্যগুলি করেন। তিনি প্রধানমন্ত্রীর পাশাপাশি বিজেপিকেও তাঁর আক্রমণের নিশানা করেন। তিনি বিজেপির বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গারের নামও উল্লেখ করেন, যিনি উন্নাওয়ে একটি মহিলাকে ধর্ষণের অভিযােগে অভিযুক্ত।

প্রধানমন্ত্রীর সমালােচনা করে রাহুল বলেন, উত্তরপ্রদেশের এই বিজেপি বিধায়কের ধর্ষণের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযােগ ওঠার পরও মােদি মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে। উন্নাওয়ের নির্দোষ ও পীড়িত মহিলার মর্মান্তিক মৃত্যুতে আমি শােকক্তব্ধ। এই মৃত্যু মানব সমাজের কাছে লজ্জার। ন্যায় বিচার ও নিরাপত্তার আশায় এই পীড়িতা তার প্রাণ দিলেন। রাহুল তাঁর পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানান।

এদিকে উন্নাওয়ে পীড়িতার মৃত্যুর পর উত্তরপ্রদেশের যােগী সরকারের দুই মন্ত্রী সেই পীড়িত মহিলার গ্রামে গেলে ক্ষোভে ফেটে পড়েন স্থানীয় মানুষ। মুখ্যমন্ত্রী যােগী আদিত্যনাথের নির্দেশে উত্তরপ্রদেশের দুই মন্ত্রী কমলরানি বরুণ ও স্বামীপ্রসাদ মৌর্য এদিন লক্ষ্ণৌ থেকে ৬৫ কিলােমিটার দুরে উন্নাওয়ে যান, যেখানে তাদের দেখে ক্ষোভে ফেটে পড়েন জনতা। যদিও এদিন সকালে একটি বিবৃতি প্রকাশ করে মুখ্যমন্ত্রী যােগী আদিত্যনাথ পীড়িত মহিলার মৃত্যুতে শােক জানিয়ে বলেছেন, এই মামলার বিচার হবে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে এবং দোষীদের কড়া শাস্তি দেওয়া হবে।

তবে উন্নাওয়ে ক্ষুব্ধ জনতা মুখ্যমন্ত্রী আদিত্যনাথের এই সব বয়ানে সন্তুষ্ট যে হতে পারেননি, তা বােঝা গেল উত্তরপ্রদেশের দুই মন্ত্রীকে ঘিরে তীব্র বিক্ষোভ প্রদর্শনে। মন্ত্রীদের গাড়ি ঘিরে জনতা প্রশ্ন করতে থাকে, ‘এখন কেন এলেন?’ মন্ত্রীদের গাড়ি এই বিক্ষোভের মাঝেও এগিয়ে যায়, পুলিশ জনতাকে পথ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর। এরপর মন্ত্রিরা পীড়িতার বাড়ি যান এবং সেখানে সবরকম তদন্তের আশ্বাস দেন। মৌর্য বলেন, ‘মৃত্যুর আগে পীড়িত অভিযুক্তদের নাম জানিয়ে গেছে। তাদের কড়া শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। এটিকে নিয়ে কোনও রাজনীতি হওয়া উচিত নয়’।

এই ঘটনায় এদিন রাহুল গান্ধির পাশাপাশি যােগী আদিত্যনাথের সরকারকে তুলােধনা করেছেন সমাজবাদী পার্টির শীর্ষনেতা অখিলেশ যাদব, কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়াঙ্কা গান্ধি এবং বহুজন সমাজ পার্টির নেত্রী মায়াবতী। প্রসঙ্গত, আদালতে যাওয়ার পথে ধর্ষিতা মহিলাকে পাঁচজন পুড়িয়ে মারার চেষ্টা করে, এদের মধ্যে দু’জন ছিল ধর্ষণে অভিযুক্তও। মহিলার গায়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়ার পর মহিলার শরীরের ৮৫ শতাংশই পুড়ে যায়। শুক্রবার রাতে দিল্লির সফদরজং হাসপাতালে বেশি রাতে মহিলার মৃত্যু হয়। মহিলার গণধর্ষণের মামলায় মূল অভিযুক্ত এক সপ্তাহ আগে জামিনে জেল থেকে ছাড়া পেয়েছে।

শনিবার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যােগী আদিত্যনাথ উন্নাওয়ে মৃত পীড়িতার পরিবারকে ২৫ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা ঘােষণা করেছেন। যদিও এতে ধর্ষণ কাণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ স্তিমিত হচ্ছে না। এদিন স্বতস্ফূর্তভাবে দিল্লিতে ধর্ষণ কাণ্ডের প্রতিবাদে পথে নামেন মহিলারা। চোখে কালাে কাপড় বেঁধে দিল্লির রাজপথে এঁরা মহিলা নিরাপত্তা নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের উদাসীনতার বিরুদ্ধে স্লোগান দেন। পাশাপাশি, উন্নাওয়ের ঘটনায় উত্তরপ্রদেশ সরকারের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদ জানানাে হয়। উন্নাওয়ের নির্যাতিতার পিতা এদিন দাবি করেন, যারা তাঁর মেয়ের ধর্ষণ ও মৃত্যুর জন্য দায়ী তাদের হায়দরাবাদের মতাে এনকাউন্টার করে মেরে ফেলা হােক।

এদিকে শনিবার এক মহিলা তার ৬ বছরের কন্যার উপর পেট্রোল ঢেলে দেন দিল্লির সফদরজং হাসপাতালের সামনে। তিনি জানিয়েছেন, উন্নাওয়ের ধর্ষিতার মৃত্যুর প্রতিবাদ জানাতে তিনি এ কাজ করেছেন। পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে ৬ বছরের নাবালিকা শিশুকে উদ্ধার করে হাসপাতালের এমারজেন্সি ওয়ার্ডে নিয়ে যায়। মহিলাকে পরে পুলিশ তার মেয়ের গায়ে পেট্রোল ছিটিয়ে দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার করে।