• facebook
  • twitter
Thursday, 31 July, 2025

নীতি আয়োগের বৈঠকে কেন্দ্র ও রাজ্যকে হাতে হাত ধরে চলার বার্তা প্রধানমন্ত্রীর

কেন্দ্রীয় বঞ্চনা নিয়ে সরব হলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন

নীতি আয়োগের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

দলীয় বিভেদ ভুলে রাজ্যের লক্ষ্য পূরণে কেন্দ্র ও রাজ্যকে হাতে হাত ধরে চলার বার্তা দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার নীতি আয়োগের দশম গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠকে এই কথা বলেন তিনি। এদিন মোদী বলেন, আমাদের উন্নয়নের গতি বাড়াতে হবে। যদি কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার একসঙ্গে এগিয়ে আসে এবং হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করে, এক কথায় যাকে ‘টিম ইন্ডিয়া’ বলে, তাহলে কোনও লক্ষ্যই অসম্ভব নয়।

এদিন বৈঠকে মোদী রাজ্যগুলিতে মহিলা কর্মীর সংখ্যাবৃদ্ধির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন, কর্মস্থলে আমাদের নতুন নতুন আইন আনতে হবে। নতুন নীতি গ্রহণ করতে হবে। যাতে নারীদের সম্মানের সঙ্গে দেশের কর্মশক্তিকে যুক্ত করা যায়, সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনতে পারে, এমন নীতি নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে। মানুষ যখন পরিবর্তন অনুভব করবেন, তখন তাঁদের মধ্যেও শক্তির বদল ঘটবে। আর সেটাই এক বড় পরিবর্তন ঘটাবে।

প্রসঙ্গত এবার নীতি আয়োগের গভর্নিং কাউন্সিলের বৈঠকের মূল থিম ছিল, ‘বিকশিত রাজ্য ফর বিকশিত ভারত’। মোদী সেই বিকশিত ভারতের উপর গুরুত্ব আরোপ করে বলেন, দেশের উন্নয়নই প্রতিটি নাগরিকের উদ্দেশ্য। যখন প্রতিটি রাজ্য বিকশিত হয়ে উঠবে, একমাত্র তখনই ভারতও বিকশিত হবে। ১৪০ কোটি নাগরিকের এটাই মূল আকাঙ্ক্ষা।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আরও বলেন, রাজ্যগুলি যেন কমপক্ষে একটি পর্যটনকেন্দ্রকে আন্তর্জাতিক মানের করে গড়ে তোলে। সেখানে যেন আন্তর্জাতিক মানের সব সুযোগ-সুবিধা ও পরিকাঠামো থাকে। এক রাজ্য, একটি আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্র। আর তা হলেই সেই আন্তর্জাতিক পর্যটন কেন্দ্রগুলির আশপাশের শহরগুলিও আকর্ষণীয় দ্রষ্টব্যস্থল হিসেবে উন্নয়নের মুখ দেখতে শুরু করবে।

এদিন মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে খোশমেজাজে দেখা গিয়েছে মোদীকে। বিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা তো বটেই, বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন অবিজেপি শাসিত রাজ্যের বেশ কয়েক জন মুখ্যমন্ত্রীও। সেই তালিকায় ছিলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন, ঝাড়খণ্ডের মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, পঞ্জাবের মুখ্যমন্ত্রী ভগবত মান, তেলঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী রেবন্ত রেড্ডিরা।

তবে এদিনের বৈঠকে বিরোধীদের ঐক্যের বার্তা দিলেও পাল্টা বিরোধী দলের মুখ্যমন্ত্রীরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ‘কেন্দ্রীয় বঞ্চনা’ থেকে তহবিল বণ্টনের বৈষম্যের কথা তুলে ধরেন। এদিনের বৈঠকে একদিকে প্রধানমন্ত্রী যেমন প্রথম থেকেই কেন্দ্র-রাজ্য কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করার কথা জানিয়েছেন, তেমনি বিরোধী দলের মুখ্যমন্ত্রীরা কেন্দ্র-রাজ্যের মধ্যে অর্থ-বণ্টন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। বৈঠকে অবিজেপি শাসিত রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীদের নানা অভিযোগ শুনতে হয় প্রধানমন্ত্রীকে। কেউ জল-বণ্টন নিয়ে অভিযোগ জানান, আবার কেউ কেন্দ্রীয় তহবিল নিয়ে সরব হয়েছেন। ফলে কেন্দ্রীয় তহবিল বৃদ্ধির বিষয় নিয়ে বিরোধী দলের মুখ্যমন্ত্রীরা যেমন জোর দিয়েছেন, তেমনই কর বাবদ প্রাপ্ত অর্থে রাজ্যের বরাদ্দ নিয়েও তাঁদের দাবি-দাওয়ার কথা জানিয়েছেন।

রাজ্যগুলির বঞ্চনা নিয়ে সবচেয়ে বেশি সুর চড়িয়েছেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন। শনিবার নীতি আয়োগের বৈঠকে মোদির সামনেই কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়ে তিনি সরব হয়েছেন। তিনি বলেন, বিকশিত ভারত গড়তে হলে রাজ্যের প্রাপ্য মেটাতে হবে। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টিভঙ্গিতেও বৈচিত্রকে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

প্রসঙ্গত এদিনের বৈঠকে মোদী জোর দেন, ‘২০৪৭-এ বিকশিত ভারতের জন্য বিকশিত রাজ্য’ গড়ে তোলার উপর! মোদির এই বক্তব্যকে হাতিয়ার করেই পালটা দিলেন স্ট্য়ালিন। কার্যত অস্বস্তিতে পড়লেন প্রধানমন্ত্রী মোদী। স্ট্যালিন বলেন, “দ্রাবিড় মডেল ‘সবার জন্য সব কিছু’র লক্ষ্যে নিবেদিত প্রাণ।” বৈঠকে তামিলনাড়ুর আর্থিক বিকাশের কথাও উল্লেখ করেন স্ট্যালিন। তিনি জানান, তামিলনাড়ু ধারাবাহিকভাবে ৮ শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধি অব্যাহত রেখেছে। গত অর্থবর্ষে যা ৯.৬৯ শতাংশে পৌঁছয়, যা সর্বাধিক বৃদ্ধির রাজ্যগুলির মধ্যে একটি। ২০৩০ সালের মধ্যে তামিলনাড়ুর অর্থনীতি ১ ট্রিলিয়ান ডলারে পৌঁছবে বলেও তিনি দাবি করেন।

উল্লেখ্য, নরেন্দ্র মোদি সরকারের শিক্ষানীতি নিয়ে তামিলনাড়ু সরকারের সঙ্গে মোদী সরকারের দ্বন্দ্ব সর্বজন বিদিত। নতুন এই শিক্ষানীতির বিরোধিতা করায় তামিলনাড়ুর ২,১৫১ কোটি আটকে রেখেছে কেন্দ্র। দুই দিন আগে এই বঞ্চনার অভিযোগে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছে তামিলনাড়ু সরকার। এবার নীতি আয়োগের বৈঠকে মোদির সামনেই কেন্দ্রের বঞ্চনা নিয়ে সরব হলেন তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এমকে স্ট্যালিন।