ট্রাম্প দাবি করেছেন, তাঁর উচ্চ হারে শুল্কের হুঁশিয়ারির পর দিল্লি ও ইসলামাবাদ উভয় পক্ষই তাঁকে বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করার অনুরোধ জানিয়েছিল। ট্রাম্প বলেন, ‘আমি বলেছিলাম, যদি যুদ্ধ বন্ধ করো তবেই আমরা ভালভাবে বাণিজ্য চুক্তি করব।’ সৌদির যুবরাজ মুহাম্মদ বিন সলমনের উপস্থিতিতে ওয়াশিংটনে আয়োজিত ইউএস-সৌদি ইনভেস্টমেন্ট ফোরামে বুধবার একথা বলেন ট্রাম্প।
ট্রাম্পের দাবি, তিনি এই দুই দেশকে বলেন, ‘আমি তোমাদের একে অপরের উপর পারমাণবিক অস্ত্র নিক্ষেপ করতে দেব না। লক্ষ লক্ষ মানুষ হত্যা করবে এবং লস অ্যাঞ্জেলেসের উপর পারমাণবিক ধুলো ভেসে বেড়াবে, তা হতে দেব না।’ তাঁর দাবি, শুল্ককে ব্যবহার করে তিনি বহু যুদ্ধ থামিয়েছেন। ট্রাম্প বলেছেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাঁকে ফোন করেছিলেন। ট্রাম্পের কথায় , ‘মোদীজি বলেন, আমরা শেষ করছি। আমি জিজ্ঞেস করলাম, তুমি কি বোঝাতে চাইছ? তিনি বললেন, আমরা যুদ্ধ করছি না। তারপর আমি বললাম, ভাল কথা, তাহলে চুক্তি করা যাবে।’ ট্রাম্পের আরও দাবি, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফও তাঁকে ফোন করে লক্ষ লক্ষ প্রাণ বাঁচানোর জন্য অনেক ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন।
১০ মে, ট্রাম্প সমাজ মাধ্যমে ঘোষণা করেছিলেন যে ওয়াশিংটনের মধ্যস্থতায় দীর্ঘ রাত আলোচনার পর ভারত ও পাকিস্তান যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয়েছে। তখন থেকে শুরু করে ট্রাম্প ৬০ বারেরও বেশি তাঁর দাবির পুনরাবৃত্তি করেছেন। তিনি বারংবার দাবি করে এসেছেন যে, তিনিই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা প্রশমিত করেছিলেন।
৭ মে ভারত পহেলগাম হামলার প্রতিশোধ হিসেবে পাকিস্তান এবং পাক-অধিকৃত কাশ্মীরের সন্ত্রাসবাদী ঘাঁটি লক্ষ্য করে অপারেশন সিঁদুর শুরু করে। ১০ মে সেই অভিযানের অবসান ঘটে। ভারত তখন থেকেই ধারাবাহিকভাবে কোনও তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ অস্বীকার করে আসছে এবং বলে আসছে যে, পাকিস্তানের সঙ্গে সমঝোতা ১০ মে দুই সেনাবাহিনীর ডিরেক্টর জেনারেল অফ মিলিটারি অপারেশনস (ডিজিএমও)-র মধ্যে সরাসরি আলোচনার পরই সম্পন্ন হয়েছিল। তাই মার্কিন প্রেসিডেন্টের এইসব দাবি ভারতের সরকারি অবস্থানের সম্পূর্ণ বিপরীত। প্রায় ৭ মাস কেটে গেলেও এখনও পর্যন্ত একই দাবিতে অনড় ট্রাম্প।
এদিকে পহেলগাম ঘটনার পর গত মে মাসে ভারত- পাকিস্তানের মধ্যে সংঘর্ষ নিয়ে সম্প্রতি একটি রিপোর্ট পেশ করেছে মার্কিন কংগ্রেসের একটি কমিটি। সেই রিপোর্টে বলা হয়েছে, সেই সংঘর্ষে অত্যাধুনিক চিনা অস্ত্র ব্যবহার করে সাফল্য পেযেছে ইসলামাবাদ। এবার সেই রিপোর্টকে হাতিয়ার করেই মোদী সরকারকে কাঠগড়ায় তুলেছে কংগ্রেস।
রাজ্যসভার সাংসদ জয়রাম রমেশ এক্স-এ একটি পোস্টে লেখেন, ‘আমেরিকা-চিন অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা পর্যালোচনা কমিশন যে রিপোর্ট পেশ করেছে, তা ভারতের কূটনৈতিক ক্ষেত্রে এক বড় ধাক্কা। রিপোর্টে এমন ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে যেখানে ভারতের অপারেশন সিঁদুর পাকিস্তানের কাছে এক বড় সাফল্য বলে মনে হচ্ছে।’
Advertisement
রিপোর্টে বলা হয়েছে, ৪ দিনের সংঘর্ষে ভারতের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের সামরিক সাফল্যে চিনা অস্ত্রের প্রদর্শনী দেখা গিয়েছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ভারতের রাফালে যুদ্ধবিমান ধ্বংসে পাকিস্তান চিনা অস্ত্র ব্যবহার করেছে। এই সাফল্যের পর চিনা অস্ত্রের বাণিজ্যিক মূল্যও বেড়েছে।
এই রিপোর্টের পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেস নেতা জয়রাম রমেশ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে উল্লেখ করে লিখেছেন, ‘মার্কিন কংগ্রেসের রিপোর্টটি বিস্ময়কর এবং বোধগম্য নয়। বিদেশমন্ত্রককে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে হবে। কারণ সেখানে পহেলগাম হামলার পর অপারেশন সিঁদুর এবং ভারত-পাক সংঘর্ষে পাকিস্তানের সাফল্যের কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে।’
এক্স পোস্টের পাশাপাশি এদিন জয়রাম রিপোর্টটিও পোস্ট করেছেন। তিনি পোস্টে মার্কিন প্রেসিডেন্টের ভারত-পাক সংঘর্ষ ও যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতার দাবি নিয়ে নয়া দাবিরও উল্লেখ করেছেন। এক্স-এ রমেশ লেখেন, ‘ট্রাম্প ৬০ বার মধ্যস্থতার দাবি করলেও আমাদের প্রধানমন্ত্রী এই বিষয়ে নির্বাক। বিষয়টি নিয়ে প্রধানমন্ত্রী এবং বিদেশমন্ত্রক কি আপত্তি কিংবা প্রতিবাদ জানাবে ?’
২০২০ সালের সংঘর্ষের পর ২০২৫ সালের এসসিও শীর্ষ সম্মেলনে চিনের তিয়ানজিনে প্রধানমন্ত্রী মোদীর উপস্থিতি উল্লেখযোগ্য। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভারতের শুল্ক আলোচনার উত্তেজনার মধ্যেই শি এবং মোদী একটি ব্যক্তিগত বৈঠক করেন।
সেখানে ভারত ও চিন সীমান্তে উত্তেজনা হ্রাস, অর্থনৈতিক সহযোগিতা সম্প্রসারণ, ২০২৬ সালে তিব্বত অঞ্চলে ভারতীয় নাগরিকদের তীর্থযাত্রায় যাওয়ার জন্য ভাতা বাড়াতে সম্মত হওয়ার মতো সিদ্ধান্ত উভয় নেতার পারস্পরিক সম্পর্ক গড়ে তোলার দিকে পদক্ষেপ বলে মনে করা হয়। চিন ও ভারতের এই নয়া সমীকরণই কী আমেরিকার পাকিস্তান স্তুতির কারণ, এই প্রশ্নই এখন ভাবাচ্ছে কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের।