লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধির ঘোষণা প্রধানমন্ত্রীর

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এদিন করোনা মোকাবিলায় লকডাউনের মেয়াদ ৩ মে পর্যন্ত বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন। প্রথম লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল ২৫ মার্চ ২১ দিনের জন্য।

Written by SNS New Delhi | April 15, 2020 3:38 pm

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Photo: Twitter / @narendramodi)

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এদিন করোনা মোকাবিলায় লকডাউনের মেয়াদ ৩ মে পর্যন্ত বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন। প্রথম লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছিল ২৫ মার্চ ২১ দিনের জন্য। এদিনই তার মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু সকালে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিতে গিয়ে তিনি লকডাউনের মেয়াদ বৃদ্ধি ঘোষণা করে নাগরিকদের এব্যাপারে সাহায্যের আবেদন জানান।

তিনি জানান, ২০ এপ্রিল সামগ্রিক অবস্থার পর্যালোচনা করা হবে। যে সকল এলাকায় করোনা সংক্রমণ নিয়ন্ত্রিত হবে সে সকল অঞ্চলে আবশ্যিক জরুরি কার্যাবলির অনুমতি দেওয়া হবে। তিনি জানান, বিশ্বের বিভিন্ন উন্নত দেশগুলির চেয়ে ভারত করোনা মোকাবিলায় অনেক বেশি সাফল্য পেয়েছে নাগরিকদের সহযোগিতার জন্যই। এপ্রিল মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত দেশের জেলাস্তরের অবস্থার পর্যালোচনা করা হবে লকডাউন জারি রাখা হবে কিনা হবে তা বিবেচনার জন্য।

প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে আলোচনার পরই লকডাউনের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। এদিনই দেশে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা দশ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে বলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পক্ষে জানানো হয়েছে। তিনি বলেন, যে সকল অঞ্চলে সংক্রমণ প্রতিরোধের ফলে নতুন করে সংক্রমণের শঙ্কা থাকছে না সেখানেই জরুরি কাজকর্ম শুরুর অনুমতি দেওয়া হবে।

এছাড়া, লকডাউন নিয়ে সরকার বিস্তারিত নির্দেশাবলি প্রচার করবে। নতুন করে যাতে আর কোনও এলাকায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে না পড়ে তা নিশ্চিত কতে হবে। যাতে ভাইরাসে মৃত্যুর কোন খবর আমাদের বিচলিত করতে না পারে। তাই সংক্রমণের কোনও হটস্পট দেখা না দেয় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

এপর্যন্ত দেশে ৩৭৭ জনের করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের পক্ষে জানানো হয়েছে। করোনা মোকাবিলায় দেশের মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টার ফলেই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়তে পারেনি বলে তিনি মন্তব্য করেছেন। তিনি করোনা মোকাবিলায় সাত দফা নিয়ম পালনের অনুরোধ জানান। এরমধ্যে সোশ্যাল ডিসটান্সিং, বয়স্কদের এবং দরিদ্র মানুষের যত্ন নেওয়া, কাজ বজায় রাখা এবং চিকিৎসক ও অন্যান্য যে সকল ব্যক্তি পরিষেবা দানের কাজে নিযুক্ত তাদের আক্রমণ করা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

লকডাউনের সময় দেশের আর্থিক অবস্থার অবনতির কারণে নির্দেশাবলি শিথিল করার বিষয়ে গুজব ছড়িয়ে পড়ে। এসময়ে ফ্যাক্টরি, দোকানপাট, শিল্প বন্ধ থাকায় লক্ষ লক্ষ মানুষ কাজহীন হয়ে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী এদিন দিন আনা দিন খাওয়া মানুষের জন্য কোনও আশার বাণী শোনাননি। তবে তাদের খাদ্য সংগ্রহের কষ্টস্বীকার, ঘরে ফেরা অনিশ্চিত ও কাজের অনিশ্চিয়তা সত্ত্বেও অবস্থা মোকাবিলায় সর্বতোভাবে সহযোগিতার জন্য ধন্যবাদ জানিয়েছেন আমজনতাকে। +

দেশের আর্থিক অবস্থার ক্রম অবনতি প্রতিরোধে ও মানুষের কাজ বজায় রাখতে বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রকের পক্ষে লকডাউন অপেক্ষাকৃত করোনামুক্ত এলাকায় শিথিল করার সুপারিশ করেছিল। কিন্তু সোশ্যাল ডিসটান্সিং ও লকডাউনের ফলেই সংক্রমণ ছড়িয়ে পড়া রোধ করা সম্ভব হয়েছে। কাজের ক্ষেত্রে সোশ্যাল ডিসটান্সিং বজায় রাখা খুবই কঠিন। এদিকে দিনমজুরদের কাজ না থাকার ফলে তাদের প্রাত্যহিক খাবার সংগ্রহ দারুণভাবে অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে।

ভারতে ১১৪৩৯ সংক্রমণের ক্ষেত্রে ৯৭৫৬ জন এখনও আক্রান্ত, ১৩০৫ জন ইতিমধ্যে সুস্থ হয়েছে ও ৩৩৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে মহারাষ্ট্রে : সংক্রমণের সংখ্যা- ২৬৮৭, মৃত- ১৭৮, দিল্লি- ১৫৬১, মৃত- ৩০, তামিলনাড়ু- ১২০৪, মৃত- ১২, রাজস্থান- ৯৬৯, মৃত- ৩, মধ্যপ্রদেশ- ৭৩০, মৃত- ৫০।

বিশ্বে করোনা সংক্রমণ ১৯,২০,৭০৮। আক্রান্ত- ১৩,৫০,৯০৮ – মৃত- ১১৯,৭০৬। বিশ্বের ১৮৫’টি দেশে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে।

কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধি ঐক্যবদ্ধ হয়ে করোনা মোকাবিলায় লড়াই চালিয়ে যাওয়ার জন্য মানুষের কাছে আবেদন জানিয়েছেন। তিনি এক টুইট বার্তায় বলেছেন, ঐক্যবদ্ধভাবে করোনা মোকাবিলায় লড়াই’ই শ্রেষ্ঠ দেশপ্রেম। দেশে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা দশ হাজার অতিক্রম করেছে। তাই বর্তমান সময়ে ঐক্যবদ্ধ লড়াই অত্যন্ত জরুরি।

তিনি চিকিৎসা, নিরাপত্তা রক্ষা ও সাফাইয়ের কাজে যুক্ত ব্যক্তিদের সহানুভূতির সঙ্গে ব্যবহার করার আবেদন জানান। তারা দেশের এমন জরুরি অবস্থায় নিজের ও পরিবারের স্বার্থ জলাঞ্জলি দিয়ে দেশের কাজ করছেন এ কথা সকলকেই বুঝতে হবে। তাদের হেনস্থা করার কোনও খবর দেশের লজ্জার কারণ যেন না হয়।