পহেলগামে হামলার ঘটনার মাত্র ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গিঘাঁটিতে পাল্টা হামলার নকশা তৈরি করেছিল ভারতীয় বায়ুসেনা। বায়ুসেনার সহকারী প্রধান এয়ার মার্শাল নর্মদেশ্বর তিওয়ারি জানালেন, ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর নকশা এত দ্রুত তৈরি হয় যে ৬ মে রাতেই পাকিস্তানের নয়টি জঙ্গিঘাঁটিতে নির্ভুল হামলা চালাতে সক্ষম হয় ভারতীয় বাহিনী।
পহেলগামে হামলার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ছিলেন সৌদি আরব সফরে। সেখান থেকেই তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে ফোনে আলোচনা করেন। পরে সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে আসেন এবং পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী শাহকে নির্দেশ দেন। শাহ সরাসরি জম্মু ও কাশ্মীরে গিয়ে রাজ্যের প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেন। বৈঠক করেন জম্মু-কাশ্মীরের লেফটেন্যান্ট গভর্নর মনোজ সিংহ এবং মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লার সঙ্গে।
Advertisement
প্রসঙ্গত, গত ২২ এপ্রিল জম্মু ও কাশ্মীরের বৈসরণ উপত্যকার পহেলগামে ভয়াবহ জঙ্গি হামলায় প্রাণ হারান ২৬ জন। সেই ঘটনার পরই ২৩ এপ্রিল দিল্লিতে শুরু হয় উচ্চ পর্যায়ের জরুরি বৈঠক। নর্মদেশ্বরের কথায়, ‘হামলার দ্বিতীয় দিনই সামরিক কর্তাদের মধ্যে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক ডাকা হয়। সেখানে সম্ভাব্য আক্রমণের পরিকল্পনা উপস্থাপন করা হয়। ২৪ এপ্রিল কেন্দ্রীয় সরকারের অনুমোদনের জন্য বিকল্প পরিকল্পনা পাঠানো হয়।’
Advertisement
সেই অনুযায়ী ২৯ এপ্রিল হামলার রূপরেখা চূড়ান্ত হয় এবং ৫ মে সময়সূচি ঠিক হয়। নির্দিষ্ট পরিকল্পনা মাফিক ৬ মে রাতেই পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের একাধিক জঙ্গিঘাঁটিতে সফলভাবে আঘাত হানে ভারতীয় সেনা।
উল্লেখ্য, পহেলগামে হামলার জন্য শুরু থেকেই পাকিস্তানকে দায়ী করেছিল ভারত। প্রতিশোধমূলক পদক্ষেপ হিসাবে সিন্ধু জলচুক্তি স্থগিত করে দেয় দিল্লি, আটারি সীমান্ত বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এমনকি দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্যও বন্ধ করে দেওয়া হয়। পাকিস্তানি নাগরিকদের ভিসা প্রদানের ক্ষেত্রেও কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।
অপারেশন সিঁদুরের পর সীমান্তে সামরিক উত্তেজনা তীব্র হয়। চার দিন ধরে গোলাবর্ষণ চলার পর অবশেষে দুই দেশ সংঘর্ষবিরতিতে সম্মত হয়। নর্মদেশ্বরের দাবি, ‘সীমিত অস্ত্র ব্যবহার করেও ভারতীয় সেনা পাক সেনার উপর স্পষ্ট আধিপত্য বিস্তার করেছিল। মাত্র ৫০টিরও কম অস্ত্র ব্যবহার করেই আমরা শত্রুকে দমিয়ে রাখতে পেরেছিলাম, যা আগে কখনও ঘটেনি।’
বায়ুসেনার শীর্ষকর্তার মতে, দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে শত্রুর ঘাঁটিতে নির্ভুল হামলা চালানো সহজ নয়, কিন্তু ভারতীয় বাহিনীর সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা ও নিখুঁত বাস্তবায়ন পাকিস্তানকে কার্যত নাড়িয়ে দিয়েছিল।
Advertisement



