প্রেম কুমার ধূমল (হিমাচল প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী)
শিমলা, ১৭ সেপ্টেম্বর— প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর রাজনৈতিক জীবনের পথচলায় এক বিশেষ জায়গা দখল করে আছে হিমাচল প্রদেশ। দেশের সর্বোচ্চ নেতৃত্বের আসনে পৌঁছনোর বহু আগে থেকেই এই পাহাড়ি রাজ্যের সঙ্গে গড়ে উঠেছিল তাঁর নিবিড় সম্পর্ক। দেবভূমি হিমাচল মোদীর কাছে শুধু রাজনৈতিক মঞ্চ নয়, ব্যক্তিগত, সাংস্কৃতিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষারও এক মহৎ ক্ষেত্র।
Advertisement
১৯৯৪ সালে ভারতীয় জনতা পার্টি তাঁকে হিমাচলের দায়িত্ব দেয়। কিন্তু তারও আগে থেকে তিনি নিয়মিতই আসতেন এই রাজ্যে। জাখু ও সংকট মোচন মন্দিরে পুজো দেওয়ার পাশাপাশি হাতে ভাজা ছোলা আর গুড় নিয়ে যেতেন বানরদের খাওয়াতে। মানুষের সঙ্গে সঙ্গে প্রকৃতি ও জীবজগতের প্রতিও তাঁর এই মমত্ববোধ স্থানীয়দের হৃদয় জয় করেছিল।
Advertisement
১৯৯৮ সালের বিধানসভা নির্বাচনে মোদীর সাংগঠনিক দক্ষতা এবং সাধারণ মানুষের সঙ্গে সংযোগ স্পষ্ট হয়ে ওঠে। সে সময় ছিল না সামাজিক মাধ্যম বা আধুনিক প্রচারযন্ত্র। তবুও অভিনব রীতিতে প্রচার চালান তিনি। যাত্রা, অনন্য স্বাগত দ্বার আর স্থানীয় সংস্কৃতির প্রতিফলনের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের মনে ছাপ ফেলেন। চম্বায় তাঁর উদ্যোগে তৈরি হয়েছিল ‘গাড্ডি শাল গেট’, যা হয়ে উঠেছিল স্থানীয় গর্বের প্রতীক।
শুধু সংগঠন নয়, প্রকৃতি ও মানুষের সঙ্গে ব্যক্তিগত সম্পর্কও গড়ে তুলেছিলেন মোদী। প্রায়ই তিনি যেতেন বজ্রলী মহাদেব মন্দিরে, গ্রামবাসীদের সঙ্গে গল্প করতেন, শুনতেন তাঁদের জীবনযাত্রার কথা। মন্দিরে পুজো দেওয়ার পাশাপাশি ঘন্টার পর ঘন্টা প্রকৃতির সান্নিধ্যে কাটাতেন।
রাজনৈতিক সংগঠনকে সুদৃঢ় করতেও বড় ভূমিকা নেন তিনি। বিজেপি-র কর্মীদের মধ্যে শৃঙ্খলা ও দায়িত্ববোধ জাগাতে প্রথমেই পরিবর্তন আনেন দলের কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে। আধ-দিনের প্রথাগত বৈঠককে দুই দিনের আবাসিক শিবিরে রূপান্তর করেন। তাঁর উদ্যোগেই শিমলার দলীয় দপ্তর ‘দীপকমল’-এর নির্মাণ সম্ভব হয়। ব্যক্তিগত খরচের জন্য মায়ের দেওয়া অর্থও তিনি দান করেন সেই দপ্তরের কাজে। দলের কর্মীদের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করেন। প্রশিক্ষণ দেন কম্পিউটার চালাতে।
১৯৯৮ সালে বিধানসভা ভেঙে গেলে কৌশলী পদক্ষেপে অনেককে চমকে দেন তিনি। বিজেপি–হিমাচল বিকাশ কংগ্রেস জোট গঠন, এক স্বাধীন বিধায়কের সমর্থন আদায়, এমনকি কংগ্রেস নেতা গুলাব সিংহকে স্পিকার পদে দাঁড়াতে রাজি করিয়ে বিজেপি সরকার গঠনের পথ প্রশস্ত করেন।
হিমাচল থেকেই শেখা অভিজ্ঞতা পরে তিনি কাজে লাগান গুজরাতে। সোলানের মডেল দেখে ছত্রাক চাষকে জনপ্রিয় করে তোলেন। হিমাচলের সামরিক ঐতিহ্যকে একাডেমিক রূপ দিতে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিরক্ষা ও কৌশলবিদ্যা চালুর পরামর্শ দেন মোদী। এখানেই তিনি প্রথম শিখেছিলেন প্যারাগ্লাইডিং। স্থানীয় রান্না—মাণ্ডির সেপু বড়ি, চম্বার মাধরা আর কাংড়ার ধাম— আজও তাঁর প্রিয়।
অসাধারণ স্মৃতিশক্তির জন্যও তিনি পরিচিত। বহু বছর আগের কর্মী বা সাংবাদিকদের নাম মনে রাখেন। ২০১৭ সালে শিমলায় এক সভায় পুরনো সহকর্মীদের নাম ধরে ডাকেন। ২০১৯ সালে সোলানে প্রচারে গিয়ে পুরনো দিনের ‘মনোহরজীর ভাজা ছোলা’র স্মৃতিও টেনে আনেন।
প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পরও হিমাচলের প্রতি তাঁর অগ্রাধিকার অটুট। রোহতাং সুড়ঙ্গ নির্মাণ, পর্যটন ও পরিকাঠামো উন্নয়ন— সবেতেই তিনি বিশেষ নজর দিয়েছেন। হিমাচল তাঁকে দিয়েছে আশ্রয়, শিক্ষা আর বিশ্বাস। আর তিনি হিমাচলকে দিয়েছেন নতুন শক্তি, উন্নয়ন ও গর্বের অনুভূতি। এই পারস্পরিক সম্পর্কই হিমাচল ও নরেন্দ্র মোদীর বন্ধনকে অনন্য উচ্চতায় পৌঁছে দিয়েছে।
Advertisement



