• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

বাংলায় ভোট কর্মীদের প্রশিক্ষণে এসআইআর সংক্রান্ত একাধিক নির্দেশিকা ও সতর্কবার্তা

এসআইআর কার্যকর করতে বিএলও-দের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। কোনও বাড়ি তালা বন্ধ থাকলে কী করতে হবে সে বিষয়েও নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে।

নজরুল মঞ্চে জেলার বিএলও-দের প্রশিক্ষণ

২০২৬-এর আসন্ন বিধানসভা ভোট উপলক্ষে রাজ্যের রাজনৈতিক দলগুলির আগাম প্রস্তুতি যখন তুঙ্গে, ঠিক সেই সময় নির্বাচন কমিশনও একাধিক নির্দেশিকা জারি করে তাদের ‘ওয়ার্ম আপ’ শুরু করে দিয়েছে। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন ডিভিশনে ‘বুথ লেভেল অফিসার’ বা বিএলও-দের প্রশিক্ষণ দেওয়া শুরু করে দিয়েছে কমিশন। আর সেই প্রশিক্ষণের ধরন দেখে বোঝা যাচ্ছে, বিহারের মতোই এ রাজ্যে ভোটার তালিকায় ‘বিশেষ নিবিড় সমীক্ষা’ বা ‘স্পেশ্যাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ বা এসআইআর-এর ব্যাপারে প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। এই প্রশিক্ষণে কমিশনের পক্ষ থেকে বিএলও-দের দেওয়া নির্দেশিকায় তাঁদের লক্ষ্মণরেখা টেনে দেওয়া হয়েছে। বার বার সতর্ক বার্তা দিয়ে বলা  হয়েছে, বিএলও-দের কমিশনের অধীনে কাজ করতে হবে। কোনোরূপ অনিয়ম হলে তাঁদের শাস্তির হুঁশিয়ারিও দেওয়া হয়েছে।

কমিশনের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, এসআইআর কার্যকর করতে বিএলও-দের বাড়ি বাড়ি গিয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। কোনও বাড়ি তালা বন্ধ থাকলে কী করতে হবে সে বিষয়েও নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে এসআইআর প্রক্রিয়ায় বিএলও-দের  বাড়ির নম্বর দিয়ে ‘নজরি ম্যাপ’ বা মানচিত্র তৈরি করতে বলা হয়েছে। প্রতিটি বুথ এলাকায় প্রবীণ মানুষদের নিয়ে একটি কমিটি তৈরি করতে বলা হয়েছে, যাতে তাঁদের কাছ থেকে এলাকার প্রতিটি পরিবারের বিস্তারিত তথ্য পাওয়া যায়। কে মৃত, কে অন্যত্র চলে গিয়েছেন সে সম্পর্কেও সে ব্যাপারে সহযোগিতা পাওয়াই এর উদ্দেশ্য। যদিও মূল সমীক্ষার কাজ বিএলও-দেরই করতে হবে।

Advertisement

সেই সঙ্গে ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় প্রত্যেকের ফর্ম পূরণ করে জমা দিতে হবে বিএলওদের। ‘বিএলও অ্যাপ’ ডাউনলোড করে রাখতে হবে। তার মাধ্যমেই জমা দিতে হবে তথ্য। কমিশনের নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, অনেকের ক্ষেত্রে হয়তো দেখা যাবে, ভোটার কার্ডের সঙ্গে আধার কার্ডের সংযুক্তিকরণ নেই। সে ক্ষেত্রেও বিএলও সংশ্লিষ্ট অ্যাপের মাধ্যমে সংযুক্তিকরণের ফর্মও পূরণ করতে পারবেন।

Advertisement

এই প্রশিক্ষণে বিএলও-দের সতর্ক করে বলা হয়েছে, এই কাজে তাঁরা কোনও রকম পক্ষপাতিত্ব করতে পারবেন না। আর যদি সেটা কেউ করেন, তাহলে তার জেল ও জরিমানা দুটোই হতে পারে বলে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়েছে। এমনকি কতদিন জেল এবং কত টাকা জরিমানা হতে পারে, সে বিষয়েও স্পষ্ট ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়াল বলেছেন, বিএলও-দের যে ধরনের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, তা আগে কখনও হয়নি। এসআইআর হলে বিএলও-দের এই প্রশিক্ষণ কাজে লাগবে।

প্রসঙ্গত, কমিশনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বলা হয়নি যে, কবে থেকে পশ্চিমবঙ্গে  ‘স্পেশ্যাল ইনটেনসিভ রিভিশন’ বা এসআইআর শুরু হবে। তবে বিএলও-দের যে ভাবে ওই প্রক্রিয়ার বিষয়ে নির্দেশিকা দেওয়া হয়েছে, দীর্ঘ দিন ভোটপ্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত থাকা সরকারি কর্মচারীদের একাংশের তা যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে হয়েছে।

গত শনিবার নজরুল মঞ্চে কলকাতা, দুই ২৪ পরগনা, হাওড়া ও নদিয়া জেলার বিএলও-দের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। সেখানে কমিশনের বড়কর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সূত্রের খবর, ভোটার তালিকায় নিবিড় সমীক্ষার প্রয়োজনীতার দাবি করেন এক পদস্থ আধিকারিক। এ প্রসঙ্গে তিনি উদাহরণ দিতে গিয়ে বলেন, গত ১০ বছরে এক জন আইএএস অফিসার চারটি জেলায় বদলি হয়েছেন। সেই চারটি জেলাতেই ভোটার তালিকায় তাঁর নাম থেকে গিয়েছে! ফলে ভোটার তালিকা পরিচ্ছন্ন করাটা খুবই জরুরি।

তবে বিষয়টি নিয়ে পাল্টা সরব হয়েছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি সোমবার বীরভূমের প্রশাসনিক সভা থেকে কমিশনের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘বিএলও-দের কাছে আমার অনুরোধ থাকবে, ভোটার তালিকা থেকে যাতে কারও নাম বাদ না-যায়, সেটা দেখার। ভোটের আগে-পরে রাজ্য সরকারের হাতেই প্রশাসনিক দায়িত্ব থাকে। আপনারা রাজ্য সরকারের চাকরি করেন। কোনও মানুষকে অযথা হেনস্থা করবেন না।’

উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন বিহারে এসআইআর-এ যে ১১টি নথি নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল, তার মধ্যে– আধার কার্ড, রেশন কার্ড, ভোটার কার্ডের মতো নথি ছিল না। আবার যে ১১টি নথির উল্লেখ ছিল, তার মধ্যে এমন কয়েকটি নথির উল্লেখ রয়েছে, যার অস্তিত্ব বিহারে নেই। যেমন জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি), পারিবারিক ‘রেজিস্টার’। এ নিয়েও বিতর্ক রয়েছে বিহারে। ২০০৩ সালে বিহারে শেষ বার এসআইআর হয়েছিল। পশ্চিমবঙ্গে হয়েছিল ২০০২ সালে। বিহারের ক্ষেত্রে কমিশন বলেছিল, যাঁদের নাম ২০০৩ সালের ভোটার তালিকায় ছিল, জীবিত থাকলে তাঁদের নাম থাকবে ভোটার তালিকায়। তাঁদের নতুন করে কোনও নথি দিতে হবে না। তবে পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রে কমিশন এখনও কোনও নথির তালিকা নির্দিষ্ট করে দেয়নি। বিএলও-দের দেওয়া নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, অনেকগুলি নথিই থাকবে। তার মধ্যে যে কোনও একটি থাকলেই ভোটার তালিকায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নাম বৈধ বলে গণ্য হবে। বলা হয়েছে, ২০০২ সালে শেষ এসআইআর-এর সময় যাঁদের নাম ভোটার তালিকায় ছিল, নতুন তালিকায় তাঁদের নাম থাকবে। তবে তার পরে যাঁদের নাম ভোটার তালিকায় উঠেছে, তাঁদের প্রয়োজনীয় নথি দেখাতে হবে।

Advertisement