পহেলগামে জঙ্গি হামলা ও তার প্রত্যাঘাতে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর পর প্রথমবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার পূর্ণাঙ্গ বৈঠকে বসতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। আগামী ৪ জুন, বুধবার সেই বৈঠক হবে। পহেলগামে হামলার পরেই অপারেশন সিঁদুর অভিযানে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরে নয়টি জঙ্গিঘাঁটি গুঁড়িয়ে দেয় ভারত। এরপরেই দুই দেশের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সেই সময় বারবার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে বসলেও এই প্রথমবার মন্ত্রিসভার অন্য সদস্যদের সঙ্গে বসতে চলেছেন মোদী।
প্রসঙ্গত, ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর জেরে ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। চারদিনের মাথায় সংঘর্ষবিরতি হলেও পাকিস্তান দাবি করেছিল, তারা অপারেশন সিঁদুরের পালটা রাফালে-সহ ভারতের ৬টি যুদ্ধবিমান ভেঙে দিয়েছে। সেই দাবি নিয়ে, দেশের অন্দরে বিতর্ক মাথাচাড়া দিয়েছে। যদিও এই ইস্যুতে কেন্দ্র সরকারের তরফে কোনও মন্তব্য করা হয়নি। সেনার তরফে জানানো হয়েছিল, ক্ষয়ক্ষতি যুদ্ধের অঙ্গ।
কিন্তু সম্প্রতি বিদেশি সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে ভারতের সেনা সর্বাধিনায়ক জেনারেল অনিল চৌহান স্বীকার করেন, পাকিস্তানের হামলায় ধ্বংস হয়েছে ভারতীয় যুদ্ধ বিমান। এহেন পরিস্থিতির মাঝে শীর্ষ সেনাকর্তার দাবি স্বাভাবিকভাবেই দেশে বিতর্ক তৈরি করেছে। অস্বস্তিতে পড়েছে মোদী সরকার। তাঁর মন্তব্য প্রকাশ্যে আসতেই সামাজিক মাধ্যমে বিতর্কের ঝড় উঠেছে। কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে অভিযোগ তোলেন, কেন্দ্রীয় সরকার দেশকে বিভ্রান্ত করছে। খাড়গে সেনা সর্বাধিনায়ক অনিল চৌহানের মন্তব্য সামাজিক মাধ্যমে তুলে ধরার পাশাপাশি দেশের সেনাবাহিনীর বীরত্বকে কুর্নিস জানিয়েছেন। পাশাপাশি লিখেছেন, এই বিষয়ে কৌশলগত পর্যালোচনার প্রয়োজন রয়েছে। তিনি কার্গিল পর্যালোচনা কমিটির মতো একটি নিরপেক্ষ বিশেষজ্ঞ কমিটির মাধ্যমে দেশের প্রতিরক্ষা প্রস্তুতির পর্যালোচনার দাবি তুলেছেন।
এদিকে এ বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল সাংসদ সাগরিকা ঘোষও। তিনি বলেন, কেন দেশকে না জানিয়ে বিদেশের সংবাদমাধ্যমকে একথা জানানো হল? অপারেশন সিঁদুর নিয়ে বিরোধীরা সংসদে বিশেষ অধিবেশনের দাবিও জানিয়েছে। এই পরিস্থিতিতে মোদির নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার বৈঠকের ডাক তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে বিশ্লেষকরা।
উল্লেখ্য, পহেলগামে জঙ্গি হামলার পর কেন্দ্র সরকার একটি সর্বদল বৈঠক ডেকেছিল। যদিও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সেই বৈঠকে ছিলেন না। ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিং। মোদী সে দিন বিহারের মধুবনীতে সভা করতে গিয়েছিলেন। বিষয়টি নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন বিরোধীরা। এরপর ৭ মে মধ্য রাতে ‘অপারেশন সিঁদুর’ চলাকালীন রাত জেগে তত্ত্বাবধান করেছেন প্রধানমন্ত্রী। ‘অপারেশন সিঁদুর’ নামটিও তাঁরই দেওয়া বলে সূত্রের খবর। যেহেতু পহেলগামে স্ত্রীদের সামনে স্বামীদের হত্যা করা হয়েছিল, সেই প্রেক্ষাপট থেকেই এই নামকরণ করা হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সেই অভিযানে কেন্দ্রের তরফে সাফল্যের দাবি করা হলেও যুদ্ধ বিমান ধ্বংস নিয়ে চরম অস্বস্তিতে পড়া মোদী সরকার মন্ত্রিসভার প্রথম বৈঠকে কী রণকৌশল স্থির করে, এখন সেটাই দেখার।