সোমবার নবরাত্রির শুভক্ষণে দেশে চালু হতে চলেছে জিএসটির নতুন কাঠামো। পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, করের চারটি স্তর তুলে দিয়ে এখন থেকে কর নেওয়া হবে শুধু ৫ এবং ১৮ শতাংশ— এই দু’টি হারে। এইদিন থেকে ১২ এবং ২৮ শতাংশের স্তর দু’টি বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। রবিবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ঘোষণা করলেন, সময়ের দাবি মেনে এবং ব্যবসায়ী-শিল্পপতি থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের মতামত শোনার পরই সরকার এই গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জিএসটির পুরনো কাঠামোয় বেশ কিছু জটিলতা থেকে যাচ্ছিল। ছোট ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে বৃহৎ শিল্প, বহু ক্ষেত্রেই নিত্যদিনের সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছিল তাঁদের। তাই কেন্দ্রীয় সরকার দীর্ঘ আলোচনার পর সংশোধিত জিএসটি কাঠামো চালুর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই নতুন ব্যবস্থা ব্যবসা সহজ করার পাশাপাশি স্বচ্ছতা আনবে এবং অর্থনীতির গতি বাড়াবে।’
Advertisement
সরকারি সূত্রের খবর, নতুন জিএসটি কাঠামোয় ছোট ব্যবসায়ী এবং স্টার্ট-আপ সংস্থাগুলিকে বিশেষ সুবিধা দেওয়া হবে। করের হার কিছু ক্ষেত্রে হ্রাস করা হচ্ছে। আবার কিছু ক্ষেত্রে সরলীকরণ আনা হচ্ছে, যাতে কর ফাঁকি দেওয়ার প্রবণতা বন্ধ হয়। একাধিক পণ্য ও পরিষেবার উপর জটিল কর কাঠামো বদলে দেওয়া হচ্ছে এবং সাধারণ মানুষের ব্যয়ভার কমাতে ছাড় দেওয়ার দিকেও জোর দেওয়া হয়েছে।
Advertisement
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই পদক্ষেপ ভারতের বাজারে নতুন উদ্যম আনবে। বিশেষত ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পক্ষেত্র নতুন জিএসটি কাঠামোর ফলে স্বস্তি পাবে। আবার ভোক্তাদের ক্ষেত্রেও দামের চাপ কিছুটা হলেও হালকা হবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী এদিন আরও জানান, ‘এই সংস্কার কেবল অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ। আমরা চাই প্রতিটি নাগরিক সহজভাবে নিয়ম মেনে ব্যবসা ও কেনাকাটা করতে পারুক।’
নবরাত্রির দিনে প্রধানমন্ত্রী মোদীর এই ঘোষণা নিঃসন্দেহে দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারের পথে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে দিল।রাজনৈতিক মহলে এই ঘোষণা ইতিমধ্যেই আলোড়ন ফেলেছে। তবে বিরোধীরা অবশ্য দাবি করছে, বাস্তবে কতটা স্বস্তি সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছাবে, তা দেখার বিষয়। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দুর্গাপুজোর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি কেন্দ্রীয় সরকারের ভূমিকা নিয়ে সরাসরি কটাক্ষ করেন।
মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘জিএসটি নিয়ে কেউ কেউ ভাষণ দিচ্ছেন, আমি একটাই কথা বলছি—ইন্সুরেন্স থেকে জিএসটি কমানো, এটি নিয়ে প্রথম কথা বলেছি আমরা। আমাদের ক্রেডিট, ভাষণ দিচ্ছে অন্য কেউ। লোকসান আমাদের হচ্ছে। কখনও সাইকেল দিই, ট্যাব দিই, কত কী দিই রাজ্যবাসীকে। তাও আমরা বলেছি, বিমার টাকা যেন না বাড়ে। শুধু এটার জন্য আমাদের লোকসান হচ্ছে ৯০০ কোটি টাকা।’
তিনি আরও জানান, চার ধাপের বদলে জিএসটি দুধাপে হওয়ায় মেডিক্লেমসহ একাধিক খরচ বাঁচবে। কিন্তু রাজ্য সরকারকে যে টাকাটা দিতে হতো, সেটি কেন্দ্র থেকে আসেনি। মুখ্যমন্ত্রী অভিযোগ করেন, এমন পরিস্থিতি যদি বিজেপি শাসিত অন্য রাজ্যে হত, তবে তাদের ঠিক সময়মতো ক্ষতিপূরণ মিলত। তিনি বলেন, ‘এখানে টিকটিক দৌড়ালেও একাধিক কমিটি চলে আসে। এদের চোখে ন্যাবা হয়েছে। উত্তরপ্রদেশ বা বিহারে কিছু হলে দেখতে পায় না। আমাদের রাজ্যবাসী যে বেনিফিট পাবে তার জন্য ২০ হাজার কোটি টাকা আমাদের লস হচ্ছে। এটা স্টেটের জিএসটি, সেন্ট্রালের নয়।’
সবশেষে মুখ্যমন্ত্রী দুর্গাপুজোর শুভেচ্ছা জানিয়ে আবারও মনে করিয়ে দেন, কেন্দ্র বিভিন্ন সুবিধা থেকে বাংলাকে বঞ্চিত রেখেছে। তিনি বলেন, ‘মানুষের ভাল হলে খুশি হই আমি। কিন্তু আমাদের টাকাগুলো দাও। আমাদের তো টাকা-পয়সার হিসাব থাকে। সংসার থেকে যদি সব টাকাই কেটে নেওয়া হয়, তাহলে কী হবে। কাটল টাকা আমাদের, প্রচার করছে ওরা।’
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর ভাষণে কটাক্ষ করে বলেন, কেন বাঙালিদের সঙ্গে কেন্দ্রের খারাপ ব্যবহার হচ্ছে এবং রাজ্যের লোকসানের দায়ভার এভাবে চাপানো হচ্ছে।
Advertisement



