সিএএ’র বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ মিছিলে জামিয়ার ছাত্রকে গুলি, আটক অভিযুক্ত

দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে এসে অনুরাগ ঠাকুর সমবেত জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছিলেন ‘দেশকে গদ্দারকো’ জনতা উত্তর দিচ্ছিল, ‘গােলি মারাে সালাে কো’।

Written by SNS New Delhi | January 31, 2020 4:08 pm

জামিয়ার ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ মিছিল লক্ষ্য করে পিস্তল তাক করে রামভক্ত এক যুবক। (Photo: Twitter | @drunkJournalist)

বৃহস্পতিবার দিল্লিতে মহাত্মা গান্ধির ৭২তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে রাজঘাটের দিকে শান্তিপূর্ণভাবে মিছিল করে যাচ্ছিলেন জামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা। সেই সময় ওই মিছিল লক্ষ্য করে পিস্তল তাক করে রামভক্ত এক যুবক। তার ছোঁড়া গুলিতে আহত হন সাদাব ফারুক বলে জম্মু ও কাশ্মীর থেকে আসা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাস কমিউনিকেশনের এক বছর পঁচিশের ছাত্র। তাঁকে সঙ্গে সঙ্গে নিয়ে যাওয়া হয় এইমসের ট্রমা সেন্টারে। ছাত্রটির গুলি লেগেছে হাতে। তাই ভয়ের কিছু নেই বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পুলিশি সুত্রে খবর, উত্তরপ্রদেশের গৌতমবুদ্ধ নগরের বাসিন্দার নাম রামভক্ত গােপাল, যার বিরুদ্ধে জামিয়ার ছাত্রদের মিছিলে গুলি চালানাের অভিযােগ। গুলি চালানাের ঘটনার পরে ছাত্ররাই ধরে ফেলে এই যুবককে। যখন গােপাল পিস্তুল উচিয়ে জামিয়ার ছাত্রদের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন সেখানে উপস্থিত ছিল বিশাল পুলিশ বাহিনী। ভিডিয়ােতে দেখা যাচ্ছে এই ব্যক্তি গুলি চালানাের আগে ক্রমাগত বলে চলেছিল ইয়ে লাে আজাদি, হিন্দুস্তান জিন্দাবাদ, দিল্লি পুলিশ জিন্দাবাদ।

জামিয়ায় গুলি চালানাের একদিন আগেই দিল্লি বিধানসভা নির্বাচনের প্রচারে এসে এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী স্বয়ং সংশােধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলনরতদের সম্পর্কে প্রকাশ্য সভায় উস্কানিমূলক বক্তব্য রেখেছিলেন। তিনি সমবেত জনতার উদ্দেশে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছিলেন ‘দেশকে গদ্দারকো’ জনতা উত্তর দিচ্ছিল, ‘গােলি মারাে সালাে কো’। এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে গান্ধিজির পারিবারিক উত্তরসূরি এবং মুম্বইয়ের মহাত্মা গান্ধি ফাউন্ডেশনের সভাপতি তুষার গান্ধি মন্তব্য করেছেন যে আদর্শের কারণে বাপু একজনের হাতে খুন হয়েছেন, এখন আর সেই আদর্শ শুধুমাত্র মােহনদাস গান্ধিকে খুন করেই সন্তুষ্ট নয়, এখন ওরা চায় তাঁর আদর্শ ও উত্তরাধিকারকেও নির্মূল করতে।

এদিনের জামিয়ার ঘটনায় সেই ইঙ্গিতই পাওয়া গেছে, যাকে সিপিআইয়ের সাধারণ সম্পাদক ডি রাজা বিজেপি নেতাদের গুলি করার মতাে উস্কানিমূলক মন্তব্যের সরাসরি প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখছেন। রাজা বলেছেন, এটা সত্যি দুর্ভাগ্যজনক যে, মহাত্মা গান্ধির মৃত্যু বার্ষিকীর দিন এ ধরনের ঘটনা ঘটল। দিল্লির ওখলা বিধানসভার আপ প্রার্থী আমানাতুল্লা খান বলেছেন, ১৯৪৮ সালে এই দিনে গান্ধিকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছিল, আজ গান্ধিবাদীদের হত্যা করার চেষ্টা হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় অর্থ প্রতিমন্ত্রী অনুরাগ ঠাকুর বলছেন, ‘গােলি মারাে সালাে কো’, আর তাঁর অনুগামীরা ঠিক সেই কাজই করছেন। জামিয়ার এদিনের ঘটনার পর সেখানকার ছাত্রছাত্রীরা রাজঘাটের দিকে মিছিল নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে, পুলিশ তাদের আটকে দেয়। এদিনের এই ঘটনার পর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বলেছেন যে, যারা জামিয়ায় গুলি চালানাের অপরাধ করেছে, তার বা তাদের কড়া শাস্তি হবে। কিন্তু শাস্তি হবে কি? এই প্রশ্ন করছেন জামিয়ার ছাত্রছাত্রী থেকে আরম্ভ করে রাজনীতিবিদরা।

অপরদিকে গুলি চালানাের অভিযােগ যার বিরুদ্ধে, গুলি চালানাের ঠিক আগে সেই ‘রামভক্ত’ গােপালকে দেখা যাচ্ছে ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে। ‘ইয়ে লাে আজাদি’ বলে গুলি চালাচ্ছে সে। তার আগে পিস্তল উচিয়ে লাইভও করেছিল সে, বলেছিল বদলা নেওয়ার কথা। পােস্টে সে লিখেছে, শাহিন বাগ খেল খতম। একের পর এক ভিডিয়াে সামনে আসতেই প্রশ্ন উঠছে এই ব্যক্তির উদ্দেশ্য নিয়ে।

ফেসবুকে এই ব্যক্তি ‘রামভক্ত’ গােপাল বলে একটি প্রােফাইল চালায়। সেখান থেকেই বার বার হামলার বিষয়ে নানা পােস্ট করা হয়েছিল। সে পােস্টে সংশােধিত নাগরিকত্ব আইনের বিরােধিতা করা শাহিন বাগের আন্দোলনেরও বিরােধিতা করেছিল। তার করা পােস্টগুলি কোনওটাতে লেখা ‘এই আমার শেষ যাত্রা’, কোনওটায় লেখা ‘আমি এখানে একা হিন্দু’। গুলি চালানাের ঘটনার পর অবশ্য কিছুক্ষণের মধ্যেই সেই অ্যাকাউন্টটা ডিলিট করা হয়। তবে জামিয়ার ছাত্ররা মনে করছেন সে গুলি চালাতে আসার আগে তার পরিণাম সম্পর্কে সম্পূর্ণ ওয়াকিবহাল ছিল। তার করা একটা পােস্টে লেখা হয়েছে ‘আমার শেষ যাত্রায় আমকে গেরুয়া পতাকায় যেন ঢেকে নিয়ে যাওয়া হয় এবং জোরে জোরে জয় শ্রীরাম স্লোগান উচ্চারণ করা হয়’।

ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ লােকটা যখন পিস্তল নিয়ে তাদের দিকে ধেয়ে আসে, তখন পুলিশ সেখানে উপস্থিত থাকা সত্ত্বেও তাকে আটকানাের কোনও চেষ্টাই করেনি। এই ঘটনার পর জামিয়ার ছাত্রছাত্রীরা রাজঘাটের দিকে যাওয়ার চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের আটকে দেয়। এক ছাত্রের মন্তব্য, এই ঘটনায় আমাদের সংকল্প আরও দৃঢ় হল। গান্ধিজির হত্যাকাণ্ডের দিনটি আমরা বিভাজনের রাজনীতি, সাম্প্রদায়িকতার বিষবৃক্ষকে উপড়ে ফেলতে প্রতিবাদ এবং শপথের দিন হিসেবে পালন করতে বদ্ধপরিকর।