ট্রাম্প প্রশাসনের হাতকড়া-শিকলের সাফাই দিলেন ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর। বৃহস্পতিবার রাজ্যসভায় বিবৃতি দিলেন বিদেশমন্ত্রী বলেন, ‘প্রত্যেক দেশেরই অবৈধ অভিবাসীদের নিজের দেশে ফেরত পাঠানোর অধিকার রয়েছে এবং প্রত্যেক দেশেরই অন্য দেশের অবৈধ অভিবাসীদের ফেরত নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দেশটির নিজস্ব আইন রয়েছে।’ বিদেশমন্ত্রী স্পষ্টই এদিন রাজ্যসভায় জানান, ‘এটা নতুন কোনও ঘটনা নয়।’ বিদেশমন্ত্রীর আরও সাফাই, মহিলা ও শিশুদের শিকল বা হাতকড়া পরানো হয়নি। বিমানে শৌচাগার ব্যবহারেরও অনুমতি দেওয়া হয়েছে অবৈধ অভিবাসীদের। এদিন বিদেশমন্ত্রী আরও বলেন, সরকার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলছে। প্রত্যর্পণের সময় আমেরিকায় অবৈধ অভিবাসী ভারতীয়দের সঙ্গে যাতে দুর্ব্যবহার না করা হয়। অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার উপরও জোর দিয়েছেন বিদেশমন্ত্রী জয়শঙ্কর।
পায়ে শিকল, হাতে হাতকড়া। আমেরিকা থেকে যেভাবে তাঁদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে, সেই অভিজ্ঞতা ভয়াবহ বলে জানিয়েছেন আমেরিকায় অবৈধ অভিবাসী দেশে ফেরত ভারতীয়রা। তাঁরা অভিযোগ করেছেন যে, দীর্ঘ বিমানযাত্রাতে তাঁদের ওইভাবেই বন্দির মতো থাকতে হয়েছিল। ট্রাম্প প্রশাসনের এই অমানবিক প্রক্রিয়ার জেরে বৃহস্পতিবার উত্তাল হয় সংসদ। রাজ্যসভায় বিবৃতি দিয়ে ভারতের বিদেশমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেন, ‘যে অভিবাসীদের ফেরানো হচ্ছে, তাঁদের সঙ্গে যাতে কোনওরকম দুর্ব্যবহার না করা হয়, তা নিশ্চিত করার জন্য আমরা আমেরিকা সরকারের সঙ্গে কথা বলছি।’ জয়শঙ্কর ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, আমেরিকা থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় বিমানে অবৈধ অভিবাসীদের সঙ্গে অমানবিক অচরণ রোধে উদ্যোগী হয়েছে ভারত সরকার।
যদিও সংবাদ সংস্থাসূত্রে প্রকাশিত খবর জানা গিয়েছে, অমৃতসরে ফেরত আসা অবৈধ অভিবাসীদের কয়েকজন জানিয়েছেন, পুরো বিমানযাত্রাতেই তাঁদের হাত-পা ছিল বাঁধা।
প্রসঙ্গত, বুধবার দুপুরে অবৈধ অভিবাসীদের নিয়ে অমৃতসরের শ্রী গুরু রামদাসজি বিমানবন্দরে অবতরণ করে মার্কিন সেনাবাহিনীর সি-১৭ বিমান। বিমানটি মঙ্গলবার টেক্সাস থেকে রওনা দিয়েছিল। এই অবৈধ অভিবাসীদের মধ্যে ২৫ জন মহিলা এবং ১২ জন নাবালক ছিলেন। কনিষ্ঠতম সদস্যের বয়স চার বছর।
শুধুমাত্র ভারতীয় নয়, অন্য দেশের অবৈধ অভিবাসীদের ক্ষেত্রেও ট্রাম্প সরকার এই নীতি প্রয়োগ করছে জানিয়ে বিদেশমন্ত্রী বলেন, ‘এমন ঘটনা শুধু ভারতীয়দের সঙ্গে হচ্ছে না।’ বিদেশমন্ত্রী বলেন, প্রত্যর্পণের সময় অভিবাসীদের খাদ্য, জরুরী চিকিতসা পরিষেবা প্রয়োজন ছিল। শৌচালয়ে যাওয়ার সময়ও সাময়িকভাবে তাঁদের বাঁধন খুলে দেওয়া হয়েছিল। যেমনটি অসামরিক বিমানের পাশাপাশি সামরিক বিমানের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
তিনি আরও বলেন, ‘অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে সংশ্লিষ্ট সব দেশের দায়বদ্ধতা রয়েছে। অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে আমাদের কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। পাশাপাশি বৈধ পর্যটকদের জন্য ভিসা পাওয়ার বিষয়টি আরও সহজ করতে আমাদের পদক্ষেপ করা উচিত।’ সেই সঙ্গে, ইউপিএ জমানায় তথ্য-পরিসংখ্যান তুলে ধরে বিদেশমন্ত্রীর দাবি, অতীতেও আমেরিকা অবৈধ অভিবাসী ভারতীয়দের ফেরত পাঠিয়েছে।
এদিকে এদিন রাজ্যসভায় কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ নাসির হুসেন দাবি করেন, ভরতের প্রধানমন্ত্রী অন্য দেশে প্রচার চালিয়েছিলেন। তিনি আরও বলেন, ‘মোদিজীর বন্ধু প্রেসিডেন্ট হওয়ার পরপরই ভারতীয়দের উপর আক্রমণ করেছেন।’ এর জবাবে বিদেশমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কারও পক্ষেই কোনও প্রচার করেননি। নাসির হুসেনের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সদস্যের স্পষ্টতই দলীয় মনোভাব রয়েছে। তিনি হাউসে মিথ্যা কথা বলছেন। আমি তাঁকে মন্তব্য প্রত্যাহার করার জন্য অনুরোধ করছি।’
কংগ্রেস সাংসদরা জয়শঙ্করের মন্তব্যে তীব্র আপত্তি জানান। কংগ্রেস সাংসদ নাসির হুসেন বলেন, ‘বিদেশমন্ত্রী অসংসদীয় ভাষা ব্যবহার করতে পারেন না।’