শত্রুপক্ষকে চমক দিয়ে ভারতীয় সেনার হাতে আসতে চলেছে অত্যাধুনিক যুদ্ধজাহাজ ও সরঞ্জাম।ভারতীয় নৌসেনার হাতে আর কিছু দিনের মধ্যেই চলে আসবে আইএনএস তমাল। এই যুদ্ধজাহাজ নৌ সেনাকে আরও শক্তিশালী করে তুলবে। রাশিয়ার সহায়তায় এই যুদ্ধজাহাজ পেতে চলেছে ভারত। রাশিয়ার কালিনিনগ্রাডের জাহাজ নির্মাণ কারখানায় তৈরি হচ্ছে এই যুদ্ধজাহাজ। আগামী ১ জুলাই ভারতীয় নৌসেনার কয়েক জন আধিকারিকের হাতে আনুষ্ঠানিক ভাবে সেই ‘স্টেল্থ ফ্রিগেট’ আইএনএস তমালকে তুলে দেবে পুতিনের দেশ। তার পরে সে পাড়ি দেবে ভারতের উদ্দেশে।
এই যুদ্ধজাহাজে ব্যবহার করা হয়েছে স্টেলথ প্রযুক্তি। শত্রুপক্ষের রাডারকে ফাঁকি দিতেই এই প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে। এই প্রযুক্তির জন্য যুদ্ধজাহাজের উপস্থিতি বুঝতেই পারবে না শত্রুপক্ষ, আড়াল থেকেই আক্রমণ শানাতে পারবে।যুদ্ধ সরঞ্জামের দিক থেকেই খুবই উন্নত এগুলি। আধুনিক সমস্ত রকমের যুদ্ধ সরঞ্জাম মোতায়েনের ব্যবস্থা রয়েছে এতে। ভারত মহাসাগরে নজরদারি চালানো, চিনের দাদাগিরি খর্ব করতে দারুণ কাজে আসবে এই যুদ্ধজাহাজ। ভারতীয় নৌবাহিনীতে তা অন্তর্ভুক্ত হওয়ার পর ইন্দো-প্যাসিফিক রিজিওনে চাপ বাড়বে চিনের উপর।
নৌসেনা সূত্রের খবর, শত্রুপক্ষের নজরদারি এড়াতে বিশেষ ধাতুতে তৈরি আইএনএস তমাল। এর ইঞ্জিনও ভিন্ন প্রযুক্তির। ৩ হাজার ৯০০ টনের এই যুদ্ধজাহাজে হেলিকপ্টার ওঠানামা এবং ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের ব্যবস্থা রয়েছে। সেই সঙ্গে রয়েছে, শত্রুপক্ষের ডুবোজাহাজ খোঁজার জন্য অত্যাধুনিক ‘সোনার’ এবং ডুবোজাহাজ ধ্বংস করার জন্য উচ্চক্ষমতা সম্পন্ন টর্পেডো। ইতিমধ্যেই সফল ভাবে নৌযুদ্ধের মহড়ায় উত্তীর্ণ হয়েছে তমাল।
প্রসঙ্গত, ভারত-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে চিনের মোকাবিলার জন্য নৌসেনাকে আধুনিক যুদ্ধের উপযোগী করে তোলার উদ্যোগ শুরু হয়েছিল ইউপিএ সরকারের আমলে। সেই পরিকল্পনারই অঙ্গ হিসেবে ‘স্টেলথ ফ্রিগেট’ নির্মাণ শুরু হয়েছিল প্রায় দেড় দশক আগে। পরবর্তী সময়ে রাশিয়ার সঙ্গে আধুনিকতর তলোয়ার শ্রেণির স্টেলথ্ ফ্রিগেট নির্মাণের চুক্তি হয়। যে এলাকা থেকে জল বা আকাশপথে শত্রুসেনার আগ্রাসনের আশঙ্কা রয়েছে, সেখানে নির্দিষ্ট সময় অন্তর রেডিও তরঙ্গ ছুড়ে দেয় রাডার। যুদ্ধবিমান বা জাহাজের ধাতব দেওয়ালে সেই নির্দিষ্ট তরঙ্গদৈর্ঘ্যের ‘রেডিও ওয়েভ’ ধাক্কা খেয়ে ফিরে এলেই নিমেষে হিসাব করে নেওয়া যায় সেই বিমান বা জাহাজের অবস্থান, আকার, অভিমুখ এবং গতিবেগ। এর পর পাল্টা হামলায় তাকে ধ্বংস করার চেষ্টা শুরু হয়। রাডার প্রতিরোধী ‘স্টেল্থ টেকনোলজি’র লক্ষ্য একটাই— বিমান বা জাহাজের গায়ে ধাক্কা খাওয়া রেডিও তরঙ্গকে ঠিক ভাবে রাডারের কাছে ফিরতে না দেওয়া। স্টেল্থ যুদ্ধবিমান কিংবা ফ্রিগেট ও ডেস্ট্রয়ার জাতীয় স্টেল্থ যুদ্ধজাহাজ সেই কাজ করতে পারে, যা সাধারণ ধাতুতে তৈরি যুদ্ধবিমানের পক্ষে সম্ভব নয়।
ব্রহ্মস সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ছাড়াও আইএনএস তমালে থাকছে বিমানবিধ্বংসী কামান। এ ছাড়া দু’টি রুশ কামোভ-২৮ এবং কামোভ-৩১ হেলিকপ্টার থাকছে, যা শত্রুর অবস্থান পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি হামলার কাজেও ব্যবহার করা যাবে।