• facebook
  • twitter
Saturday, 14 December, 2024

ইউক্রেনের যুদ্ধে ভারতের গোলাবারুদ? কীভাবে পৌঁছচ্ছে?

ঘুরপথে সামান্য কিছু অস্ত্র ইউক্রেনের সেনাদের হাতে পৌঁছলে ভারতের ওপর খুশি হবে আমেরিকা সহ বেশ কিছু দেশ। তাঁদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কও সুদৃঢ় হবে। সেজন্য রয়টার্সের ওই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে ভারতের বিরুদ্ধে কোনও কড়া প্রতিক্রিয়া দেয়নি মস্কো।

রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনের যুদ্ধ নিয়ে সম্প্রতি একটি গুজব ছড়িয়েছে। যা নিয়ে জলঘোলা হতে শুরু করেছে আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক মহলে। সেই গুজবে দাবি করা হয়েছে, রাশিয়ার সেনা সংহারে ভারতের গোলাবারুদ ব্যবহার করেছে ইউক্রেন। বলা হচ্ছে, ভারতে তৈরি কামানের গোলা রাশিয়ার বিরুদ্ধে ব্যবহার করছে ইউক্রেন। কিন্তু ভারতের সঙ্গে রাশিয়ার বন্ধুত্ব সর্বজনবিদিত। দুই দেশের প্রধান মোদী ও পুতিনের রসায়ন গোটা বিশ্বের জানা। সেই বন্ধু রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ভারত কীভাবে এই উদ্যোগ নিতে পারে? তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে যথেষ্ট সন্দেহের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে।

যদিও সেই গুজবে জল ঢেলে দিল দিল্লি। কেন্দ্রের মোদী সরকার জানিয়েছে, এই খবর সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এবিষয়ে দিল্লি জানিয়েছে, ‘সমরাস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে ভারতীয় প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম নির্মাণকারী সংস্থাগুলির যথেষ্ট সুনাম রয়েছে। নিয়ম ভেঙে অস্ত্র বিক্রির কোনও প্রশ্নই ওঠে না। এই রিপোর্ট পুরোপুরি অসত্য ও বিভ্রান্তিকর।’

জানা গিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারে সমরাস্ত্র বিক্রির ক্ষেত্রে ভারতের একটি নির্দিষ্ট নীতি রয়েছে। সেই নীতি অনুযায়ী, যে দেশ ভারতের কাছ থেকে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম কিনবে, সেই অস্ত্র অন্য কোনও দেশ বা গোষ্ঠীকে হস্তান্তর করা যাবে না। একমাত্র সেই দেশই ব্যবহার করতে পারবে। ক্রেতা দেশ ভারত সরকারের এই নীতি না মানলে অস্ত্র রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়া হবে। এব্যাপারে বিদেশমন্ত্রকের মুখপত্র রণধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, ‘ইউক্রেনকে কোনও গোলাবারুদ বিক্রি করা হয়নি।’

কিন্তু কারা এই গুজব ছড়াল? এই খবরের ভিত্তিই বা কী? এব্যাপারে জানা গিয়েছে, বহুজাতিক ব্রিটিশ সংবাদ সংস্থা রয়টার্স এই চাঞ্চল্যকর সংবাদ প্রকাশ করেছে। কিন্তু ভারত সরকার সেই তথ্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছে। এদিকে রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতীয় প্রতিরক্ষা কোম্পানিগুলির তৈরি ১৫৫ মিলিমিটারের কামানের গোলা হাতে পেয়েছে ইউক্রেনের গোলন্দাজ বাহিনী। ঘুরপথে সেই গোলা কিভকে সরবরাহ করা হচ্ছে। যা নিয়ে আপত্তি জানিয়েছে মস্কো।

প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইতালি থেকে ব্রিটেন হয়ে ইউক্রেনের সেনাদের হাতে পৌঁছচ্ছে এই গোলা। দিল্লি জানে যে ইউরোপে বিক্রি করা তাদের সমরাস্ত্র শেষ অবধি ইউক্রেনেই যায়। এবিষয়ে ১১টি সূত্রের উল্লেখ করা হয়েছে। যারা ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এবং অস্ত্র নির্মাণকারী শিল্পের সঙ্গে জড়িত। শুল্ক দপ্তরের নানা তথ্যও প্রমাণ হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। অথচ বিষয়টি জেনেও চুপ রয়েছে মোদী সরকার। বন্ধ হয়নি গোলাবারুদ রপ্তানিও।

যদিও রয়টার্সের রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ইউক্রেনের যুদ্ধে যে পরিমাণ অস্ত্রশস্ত্র ব্যবহার করা হয়েছে, তার এক শতাংশেরও কম ভারত থেকে আমদানি করা হয়েছে। সেই অস্ত্র ইউরোপীয় দেশের থেকে ইউক্রেন দান হিসেবে পেয়েছে, নাকি কেনা হয়েছে তা স্পষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি।

প্রসঙ্গত ২৫ বছর আগে কার্গিল যুদ্ধে মসকো উপত্যকা পুনর্দখলে নামে ভারতের গোলন্দাজ বাহিনী। সেবারই পাক ফৌজকে হটাতে ১৫৫ মিলিমিটার ক্যালিবারের গোলা ব্যবহার হয়। কারণ, এই গোলার ধ্বংস ক্ষমতা মারাত্মক। পাহাড়ি যুদ্ধে নিখুঁতভাবে নিশানায় আঘাত হানতে সক্ষম এই বিশেষ গোলা। বফোর্স-সহ অধিকাংশ হাউৎজ়ার কামানে এই গোলা ব্যবহার করা হয়।

তবে বিষয়টি নিয়ে যে সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে, সেটা হল কোনও কোনও ইউরোপীয় দেশ ভারতের বিক্রি করা সমরাস্ত্রের কিছু অংশ ইউক্রেনকে সরবরাহ করে থাকতে পারে। এজন্য ভারত সরকারের সরাসরি কোনও হাত ছিল না। যদিও আন্তর্জাতিক প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের দাবি, এই ঘটনায় রাশিয়া ও ভারতের সম্পর্কের অবনতি হওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। কারণ, প্রকৃত বিষয়টি হয়তো আঁচ করতে পেরেছে মস্কো। রাশিয়া হয়তো ধরে নিয়েছে, এটা মোদী সরকারের ভারসাম্যের রাজনীতি। কারণ, ঘুরপথে সামান্য কিছু অস্ত্র ইউক্রেনের সেনাদের হাতে পৌঁছলে ভারতের ওপর খুশি হবে আমেরিকা সহ বেশ কিছু দেশ। তাঁদের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্কও সুদৃঢ় হবে। সেজন্য রয়টার্সের ওই রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে ভারতের বিরুদ্ধে কোনও কড়া প্রতিক্রিয়া দেয়নি মস্কো। আবার ভারতও রাশিয়ার থেকে যুদ্ধাস্ত্র কেনা অব্যাহত রেখেছে।

উল্লেখ্য, ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকেই রাশিয়ার উপর একাধিক নিষেধাজ্ঞা চাপিয়েছে আমেরিকা-সহ সমস্ত পশ্চিমি দেশ। সেই নিষেধাজ্ঞা উ়ড়িয়েই মস্কোর থেকে সস্তায় অপরিশোধিত তেল কিনছে নয়াদিল্লি। কিন্তু কিসের উপর ভরসা করে ভারত এই নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করেছে? জবাবে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন, এটা মোদী সরকারের ভারসাম্যের রাজনীতির একটি কৌশল।