রাশিয়া থেকে ভারত তেল কেনা অব্যাহত রাখায় আগেই হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সম্প্রতি ভারতের উপর ২৫ শতাংশ শুল্ক চাপানোর পাশাপাশি রাশিয়া থেকে তেল ও জ্বালানি আমদানির জন্য অতিরিক্ত জরিমানা ধার্য করার কথা জানিয়েছে আমেরিকা। তবে মার্কিন প্রেসিডেন্টের এই ঘোষণার আগে থেকেই রাশিয়া থেকে তেল আমদানির পরিমাণ কমিয়েছে ভারতের সংস্থাগুলি। কেপলারের দেওয়া পরিসংখ্যান অনুযায়ী এই তথ্য সামনে এসেছে।
মূলত জলপথ দিয়েই ভারতে বেশিরভাগ জ্বালানি আমদানি করা হয়। এই পথে তেলে ট্যাঙ্কারগুলির উপর নজরদারি চালায় কেপলার নামের ওই সংস্থা। এই সংস্থার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসের তুলনায় জুলাই মাসে রাশিয়া থেকে তেল আমদানির পরিমাণ কম। এক মাসে প্রায় ২৪ শতাংশ কমেছে আমদানির পরিমাণ। গত বছরের জুলাই মাসের সঙ্গে তুলনায় ২৩.৫ শতাংশ কম আমদানি হয়েছে চলতি বছরের জুলাই মাসে। অর্থাৎ মনে করা হচ্ছে, ট্রাম্পের ঘোষণার আগেই রাশিয়া থেকে কম তেল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল ভারতের সংস্থাগুলি। মার্কিন হুঁশিয়ারির পর ভারতের সংস্থাগুলি কতটা রাশিয়া থেকে তেল কেনার পথে হাঁটবে সেই নিয়ে সংশয় রয়েছে।
উল্লেখ্য, ৮৫ শতাংশ তেল বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে ভারত। চলতি বছরের মে মাসের পরিসংখ্যান অনুযায়ী মোট চাহিদার ৩৫ শতাংশ তেল রাশিয়া থেকে আমদানি করা হয়েছিল। অন্যদিকে ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধের আবহে রাশিয়া থেকে তেল না কেনার পরামর্শ দিয়েছিল আমেরিকা। কিন্তু তা সত্ত্বেও রাশিয়া থেকে জ্বালানি কেনা অব্যাহত রাখে ভারত। কারণ রাশিয়ার উপরে একাধিক আর্থিক নিষেধাজ্ঞা থাকায় কম দামে তেল বিক্রি করতে বাধ্য হয় মস্কো। ক্রেতাদের জন্য একাধিক ছাড়ও দেওয়া হত। কিন্তু সেই ছাড় সম্প্রতি কমায় রাশিয়া। সেই কারণেই ইন্ডিয়ান অয়েল, হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম, ভারত পেট্রোলিয়াম ও ম্যাঙ্গালোর রিফাইনারি পেট্রোক্যামিক্যাল লিমিটেডের মতো ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা রাশিয়া থেকে কম তেল কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। পরিবর্তে পশ্চিম এশিয়া থেকে তেল আমদানির দিকে ঝোঁক বাড়তে থাকে। পাশাপাশি এই সিদ্ধান্তের পিছনে আমেরিকার কূটনৈতিক চাপও রয়েছে। অন্যদিকে, আমেরিকা থেকে তেল আমদানি বাড়িয়েছে ভারত। গত বছরের তুলনায় চলতি বছর এখনও পর্যন্ত ৫১ শতাংশ বেড়েছে আমেরিকা থেকে তেল আমদানি। এর জন্য দিল্লির প্রায় দ্বিগুণ খরচ হয়েছে। চলতি বছরের এপ্রিল মাস থেকে সবথেকে বেশি বেড়েছে আমেরিকা থেকে তেল আমদানির পরিমাণ।
ভারতের উপর শুল্ক ও জরিমানা ঘোষণার পর সম্প্রতি মার্কিন প্রেসিডেন্ট দাবি করেছেন, রাশিয়া থেকে তেল না কেনার যে সিদ্ধান্ত ভারত নিয়েছে তাকে তিনি স্বাগত জানাচ্ছেন। যদিও ভারত স্পষ্ট করে দিয়েছে, এমন কোনও পদক্ষেপ ভারত নেয়নি। বিদেশ মন্ত্রকের মুখপাত্র রনধীর জয়সওয়াল জানিয়েছেন, বাজারে কে কী দাম নিচ্ছে এবং সার্বিক বিশ্ব পরিস্থিতির উপর নজর রেখে জ্বালানির চাহিদা পূরণ করে ভারত।
Advertisement