দেশের নৌসেনার শক্তি ও ভবিষ্যতের সামুদ্রিক নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরও সুদৃঢ় করতে শুরু হল বহুল প্রতীক্ষিত ‘প্রোজেক্ট ১৮’। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের নির্দেশে মুম্বইয়ের মাজগাঁও জাহাজ নির্মাণ কারখানায় শুরু হয়েছে পরবর্তী প্রজন্মের ডেস্ট্রয়ার যুদ্ধজাহাজ তৈরির কাজ। ভারতের নৌসেনাকে সম্পূর্ণভাবে আত্মনির্ভর করে গড়ে তোলার যে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বহুদিন ধরে নেওয়া হয়েছিল, এই প্রকল্প সেই পথেই সবচেয়ে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।
মাজগাঁও ডক ইয়ার্ড ইতিমধ্যেই শত্রুপক্ষের রাডার নজরদারি এড়িয়ে চলতে সক্ষম অত্যাধুনিক ফ্রিগেট তৈরি করে আন্তর্জাতিক মানের পরিচয় দিয়েছে। সেই অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তিগত দক্ষতাকেই এবার কাজে লাগানো হচ্ছে এনজিডি বা পরবর্তী প্রজন্মের ডেস্ট্রয়ার তৈরির কাজে। এর আগে ‘প্রোজেক্ট ১৭’ কর্মসূচিতে তৈরি হয়েছিল বিশাখাপত্তনম শ্রেণির চারটি ডেস্ট্রয়ার। গত ডিসেম্বরে ওই সিরিজের শেষ ‘পি–১৫বি গাইডেড ক্ষেপণাস্ত্র ডেস্ট্রয়ার’ নৌসেনার বহরে যুক্ত হওয়ার পর এবার তার আরও উন্নত সংস্করণ তৈরির প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।
Advertisement
প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর, মোদী সরকারের লক্ষ্য ২০২৭ সালের মধ্যে নৌবাহিনীর হাতে থাকবে অন্তত দুইশো বিভিন্ন ধরনের রণতরী। এই বিপুল সংখ্যক জাহাজের বড় অংশই তৈরি হচ্ছে মুম্বই, কোচি ও কলকাতার বিভিন্ন ডক ইয়ার্ডে। এর মধ্যে শুধু মুম্বইয়ের মাজগাঁও এবং কলকাতার গার্ডেনরিচ কারখানাতেই বর্তমানে তৈরি হচ্ছে পঞ্চান্নটি যুদ্ধজাহাজ। গোটা কর্মসূচির জন্য ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকা।
Advertisement
একইসঙ্গে ‘মেক ইন ইন্ডিয়া’ উদ্যোগের আওতায় ইতিমধ্যেই অনুমোদন দেওয়া হয়েছে চাত্তরটি দেশীয় প্রযুক্তিতে ডুবোজাহাজ এবং যুদ্ধজাহাজ নির্মাণের। এই প্রকল্পের আনুমানিক ব্যয় প্রায় দুই লক্ষ পঁয়ত্রিশ হাজার কোটি টাকা। এর মাধ্যমে তৈরি করা হবে চারটি দশ হাজার টনের পরবর্তী প্রজন্মের ডেস্ট্রয়ার, সাতটি মাল্টি-রোল স্টেলথ ফ্রিগেট এবং নয়টি ডিজেল–ইলেকট্রিক সাবমেরিন।
প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, ‘প্রোজেক্ট ১৮’ শুধু নৌসেনার শক্তি বৃদ্ধি নয়, দেশের সামুদ্রিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় আত্মনির্ভরতার নতুন অধ্যায়ের সূচনা করবে। উন্নত প্রযুক্তি, রাষ্ট্রীয় শিল্পোন্নয়ন এবং সামরিক সক্ষমতার এক সমন্বিত প্রতীক হয়ে উঠতে চলেছে এই প্রকল্প।
Advertisement



