• facebook
  • twitter
Wednesday, 20 August, 2025

ইরান-ইজরায়েল দ্বন্দ্বে সঙ্কটে ভারত

পারস্য উপসাগরীয় এলাকার অপরিশোধিত তেলের আমদানির উপর ভারতের ৮০ শতাংশ জ্বালানি নির্ভর করে।

ইরানের রাজধানী তেহরানে জ্বলছে আগুন।

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনার কেন্দ্রবিন্দুতে ইরান-ইজরায়েলের সংঘাত। দুই দেশই আত্মরক্ষার তাগিদে ভয়ঙ্কর আক্রমণের নিশানা করে আসছে একে অপরকে। যে সংঘাতের জেরে আশঙ্কার কালো মেঘ ঘনিয়ে আসছে ভারতের আকাশেও। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, তেল আভিভের সঙ্গে ইরানের সংঘাত যতই জোরালো হচ্ছে, ততই বিপদ বাড়ছে ভারতের। ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধ পরিস্থিতিতে শেয়ার বাজারে বিরাট ধস নেমেছে দেশে। মঙ্গলবার সকালে বাজার খুলতেই সেনসেক্সে ৪০০ পয়েন্ট, নিফটি প্রায় ২৪,৮৫০ পয়েন্টে এসে পৌঁছয়। মঙ্গলবার সকালে সেনসেক্স নামে ৪১৯.১৫ পয়েন্ট অথবা ০.৫১ শতাংশ। একদিনে ধসের পরিমাণ ৮১,৪৭১.৮৯। অন্যদিকে, নিফটি ১৩৬ পয়েন্ট পড়ে যায় যা ০.৫৪ শতাংশ।

ভারতের পাশাপাশি আশঙ্কা বাড়ে এশিয়ার বাজারেও। দক্ষিণ কোরিয়ার কোসপি, সাংহাইয়ের এসএসই কম্পোজিট এবং হংকংয়ের হাং সেং-এর বাজারেও লাল সতর্কতা দেখা এই সংঘর্ষ চলতে থাকলে বা পুরোপুরি যুদ্ধের দিকে গড়ালে দেশীয় বাণিজ্য, অর্থনীতি ও প্রযুক্তি ক্ষেত্রে যে ভয়ঙ্কর প্রভাব পড়তে পারে তার ইঙ্গিত মিলেছে এদিনের শেয়ার বাজার থেকে। ইরান ও ইজরায়েল দুই দেশই ভারতের বন্ধু। কিন্তু দুই দেশের সংঘাতের আঁচ পড়বে ভারতে। বিশেষত জ্বালানি তেল, বাসমতী তেল ও যোগাযোগ ব্যবস্থায় এর প্রভাব পড়ার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।

পারস্য উপসাগরীয় এলাকার অপরিশোধিত তেলের আমদানির উপর ভারতের ৮০ শতাংশ জ্বালানি নির্ভর করে। জানা গিয়েছে, ইরান হরমুজ প্রণালি বন্ধ করার কথা ভাবছে। বিশ্বের মোট তেলের প্রায় ২০ শতাংশ এই প্রণালি পথ দিয়ে পরিবাহিত হয়। প্রণালি বন্ধ হয়ে গেলে তেলের দাম ব্যারেল প্রতি ১০০ ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে।

সমস্যা দেখা দিতে পারে ভারতের বাসমতী চাল রপ্তানিতেও। বিশেষত পাঞ্জাব ও হরিয়ানার ব্যবসায়ীরা প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন। ভারতীয় বাসমতী চালের বৃহত্তম গ্রাহক ইরান। ২০২৪-২৫ সালে ইরান ভারত থেকে ৮.৫৫ লক্ষ টন বাসমতী চাল আমদানি করে, টাকার অঙ্কে যার পরিমাণ ৬ হাজার ৩৭৪ কোটি। ভারত থেকে ইরানে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ বাসমতী চাল রপ্তানি হয়।

ভারতের অন্যতম উদ্বেগের বিষয় হল ইরানের কাছে চাবাহার বন্দর। এই বন্দরের জন্য ভারত দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ করেছে। ওমানের উপসাগরীয় এলাকায় অবস্থিত চাবাহার বন্দর আফগানিস্তান ও মধ্য এশিয়ায় ঢোকার ভারতের গেটওয়ে। এতে পাকিস্তানের সাহায্য ছাড়াই ভারত ওই অঞ্চলে যোগাযোগ রাখতে পারে।

ভারতের উদ্বেগ রয়েছে ডিজিটাল যোগাযোগ ব্যবস্থা নিয়েও। কারণ, এই যুদ্ধ গড়াতে শুরু করলে তার ভয়ানক প্রভাব পড়বে সমুদ্রের তলা দিয়ে যাওয়া কেবল নেটওয়ার্কে। বিশ্বের ৯৫ শতাংশ ইন্টারনেট ও ডেটা চলাচল ঘটে সমুদ্রের তলা দিয়ে যাওয়া কেবলের উপর নির্ভর করে। ইউরোপ ইন্ডিয়া গেটওয়ে, ফাইবার-অপটিক লিঙ্ক অ্যারাউন্ড দ্য গ্লোব, এবং সাউথ ইস্ট এশিয়া-মিডল ইস্ট-ওয়েস্টার্ন ইউরোপ ৫- কেবল গিয়েছে ইজরায়েল-ইরান সংঘর্ষ এলাকা দিয়ে। ইরান-ইজরায়েলের নৌশক্তির লড়াইয়ে এই সমস্ত কেবল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে উত্তেজনা যত বাড়বে ভারতে ওষুধ থেকে শুরু করে পোশাক পণ্যের দাম ততই মাত্রা ছাড়াবে। মূলত মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি থেকে ওষুধ আমদানি করে ভারত। কাজেই, সেখানে পরিস্থিতি জটিল হলে ওষুধ থেকে শুরু করে পোশাক পণ্য পাঠানো বন্ধ করে দেবে দেশগুলি। যার প্রভাব একেবারে সরাসরি পড়বে ভারতীয় বাজারে।

আরও জানা যাচ্ছে, ভারতের একাধিক সংস্থা যেমন টাটার মালিকানাধীন টিসিএস, উইপ্রো, আদানি গ্রুপ,এসবিআই, সান ফার্মা ও ইনফোসিসের মতো একাধিক ভারতীয় বহুজাতিক সংস্থার অফিস রয়েছে ইজরায়েলে। কাজেই ইরানের সঙ্গে তেল আভিভের সংঘর্ষ ক্রমশ জটিল পর্যায়ে পৌঁছলে ইজরায়েলে থাকা ভারতীয় কোম্পানিগুলির ব্যবসার ভবিষ্যত অন্ধকারে।