• facebook
  • twitter
Saturday, 17 May, 2025

আরও ২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কিনছে ভারত, ফ্রান্সের সঙ্গে চুক্তি

পহেলগামের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত ভারত-পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্ক। এই আবহে ফ্রান্সের কাছ থেকে আরও ২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কিনছে ভারত।

পহেলগামের ঘটনাকে কেন্দ্র করে উত্তপ্ত হয়ে উঠছে ভারত ও পাকিস্তানের কূটনৈতিক সম্পর্ক। এই আবহে ফ্রান্সের কাছ থেকে আরও ২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কিনছে ভারত। বিষয়টি আগেই আলোচনার মাধ্যমে স্থির করা থাকলেও সোমবার পাকাপাকিভাবে চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে ভারত। নৌসেনাকে শক্তিশালী করতে এই ২৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান ৬৩ হাজার কোটি টাকা দিয়ে কিনতে চলেছে ভারত। কেনার পর এই অত্যাধুনিক বিমানগুলি তুলে দেওয়া হবে ভারতীয় নৌসেনার হাতে। এক সংবাদ সংস্থার তরফে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের আধিকারিকদের উল্লেখ করে একথা জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, নৌসেনার দুই যুদ্ধজাহাজ আইএনএস বিক্রান্ত এবং আইএনএস বিক্রমাদিত্য থেকে আকাশে উড়বে এই ২৬টি রাফাল।

ভারতীয় নৌসেনাকে শক্তিশালী করতে বড়সড় পদক্ষেপ করেছে কেন্দ্র। নৌবাহিনীকে ঢেলে সাজাতে একসঙ্গে ২৬টি মেরিন জেট কেনার উদ্যোগ এই প্রথম। এদিন এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে দিল্লির সাউথ ব্লকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সদর কার্যালয়ে। ভারতের তরফে প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের সচিব রাজেশ কুমার সিং এবং ভারতে ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত এই চুক্তি স্বাক্ষর করেন। দুই দেশের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভার্চুয়ালি এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

নৌবাহিনীর জন্য এই যুদ্ধবিমান কেনা অত্যন্ত জররি বলে জানা গিয়েছে। কারণ বর্তমানে মিগ-২৯ কে যুদ্ধবিমান হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। কিন্তু এই বিমানের রক্ষাবেক্ষণ নিয়ে সমস্যায় পড়েছে ভারত। এই পরিস্থিতিতে এক আসনের ২২টি এবং দুই আসনের ৪টি রাফাল যুদ্ধবিমান কেনা হচ্ছে। ফ্রান্সের অন্যতম গুরুত্বপুর্ণ প্রতিরক্ষা সংস্থা দাসু এভিয়েশনের কাছ থেকে রাফাল যুদ্ধবিমান কিনছে ভারত। এই ২৬টি বিমান হাতে পেলে ভারতের রাফাল যুদ্ধবিমানের মোট সংখ্যা দাঁড়াবে ৬২।

তিন সপ্তাহ আগে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে মন্ত্রিসভার নিরাপত্তা বিষয়ক কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে এই চুক্তিতে ছাড়পত্র দেয় কমিটি। শর্ত অনুযায়ী, চুক্তিতে স্বাক্ষরের পাঁচ বছরের মধ্যে যুদ্ধ বিমান সরবরাহ করতে হবে সরবরাহকারী সংস্থাকে। ২০২৩ সালের জুলাই মাসে রাফাল যুদ্ধবিমানের নাম নির্ণায়ক পরীক্ষায় সন্তুষ্ট প্রতিরক্ষামন্ত্রক এই চুক্তিতে সম্মতি জানিয়েছিল। তারপর চলতি মাসের শুরুতেই ৬৩ কোটি টাকার চুক্তিতে সিলমোহর দিয়েছে কেন্দ্র। সেনা সূত্রে খবর, চুক্তির মধ্যে রয়েছে রক্ষণাবেক্ষণ ও লজিস্টিক সাপোর্ট প্যাকেজ, নৌসেনাদের প্রশিক্ষণের মতো বিষয়গুলিও।

পহেলগাঁও কাণ্ড নিয়ে ভারত এবং পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবনতি হয়েই চলেছে। সিন্ধু জলবণ্টন চুক্তি স্থগিত করায় যুদ্ধের হুঁশিয়ারি দিয়ে চলেছে পাকিস্তান। এই পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর শক্তিবৃদ্ধিকে ইতিবাচক হিসাবেই দেখছেন বিশেষজ্ঞেরা।

ভারতের ভাঁড়ারে এই মুহূর্তে যুদ্ধবিমানের ঘাটতি রয়েছে। ভারতীয় বায়ুসেনার হাতে ৪২টি ফাইটার স্কোয়াড্রন থাকার কথা। কিন্তু তা এখন ৩২-এ নেমে এসেছে বলে প্রতিরক্ষা মন্ত্রক সূত্রের খবর। রাফাল হাতে পেলে এই যুদ্ধবিমানগুলিকেও ধীরে ধীরে বাতিল করবে দিল্লি।

ফ্রান্সের কাছ থেকে এর আগে ৩৬টি রাফাল যুদ্ধবিমান কিনেছিল ভারত। ২০১৬ সালের চুক্তিতে ভারতে আসা সেই যুদ্ধবিমানগুলি ব্যবহার করছে বায়ুসেনা।বর্তমানে সেগুলি রয়েছে আম্বালা এবং হাসিমারায়। পহেলগামের ঘটনার পর ইতিমধ্যেই শক্তি প্রদর্শন শুরু করেছে ভারতীয় নৌসেনা। রবিবারই তারা আরব সাগরে যুদ্ধজাহাজ থেকে পর পর ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণ করে মহড়া দিয়েছে। সমাজ মাধ্যমে নৌসেনার বার্তা, যে কোনও সময়ে যে কোনও ভাবে এবং যে কোনও পরিস্থিতিতে শত্রুপক্ষের মোকাবিলা করতে তারা প্রস্তুত। রাফাল যুদ্ধবিমান হাতে পেলে ভারতের নৌসেনার শক্তি আরও বৃদ্ধি পাবে। এই এয়ারক্রাফ্ট কেরিয়ার থেকে উড়তে এবং অবতরণও করতে পারবে।

চুক্তি স্বাক্ষরের সময়ে ভারতে থাকার কথা ছিল ফ্রান্সের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী সেবাস্টিয়ান লেকোরনু। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনি আসছেন না। সোমবারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে ভারতের প্রতিরক্ষা সচিব এবং রাফালে প্রস্তুতকারী ফরাসি সংস্থা দাসল্ট এভিয়েশনের মধ্যে। তবে সোমবার চুক্তি হলেও এখনই রাফালেগুলি ভারতের হাতে আসবে না। কয়েকদিন পরে ভারতে রাফালে পাঠানো শুরু হবে। ২০৩১ সালের মধ্যে ২৬টি রাফালে চলে আসবে ভারতে। জানা গিয়েছে, ‘বৃদ্ধ’ মিগ-২৯কে যুদ্ধবিমানগুলির পরিবর্তে ব্যবহৃত হবে নতুন রাফালেগুলি।

রাফালে এম’কে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত মেরিন যুদ্ধবিমানগুলির মধ্যে একটি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বর্তমানে ভারতের হাতে ৩৬টি রাফালে যুদ্ধবিমান রয়েছে। তবে নতুন ২৬টি রাফালে’তে একাধিক ভারতীয় মিসাইল প্রযুক্তি থাকবে বলেই সূত্রের খবর। উল্লেখ্য, পহেলগাঁও হামলার পর নিয়মিতভাবে যুদ্ধের মহড়া করছে ভারতের তিন বাহিনী। সীমান্তে মিসাইল ছুড়ে নিজেদের প্রস্তুত রেখেছে নৌসেনাও। তার মধ্যেই রাফালে চুক্তি স্বাক্ষর নিঃসন্দেহে নৌসেনার মনোবল বাড়াবে। সেই সঙ্গে কাঁপুনি ধরাবে শত্রু চিন-পাকিস্তানের শিরদাঁড়াতেও।