ভারতের ধনকুবের তালিকায় যুক্ত হচ্ছে একের পর এক নতুন নাম। চলতি বছরে গড়ে প্রতি সপ্তাহে একজন করে নতুন ধনকুবের যুক্ত হয়েছেন দেশের ধনীদের তালিকায়। বুধবার প্রকাশিত এম৩এম-হুরুন ইন্ডিয়া রিচ লিস্ট ২০২৫ অনুযায়ী, বর্তমানে ভারতে ধনকুবেরের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩৫০-এ, যা ১৩ বছর আগে প্রকাশিত প্রথম তালিকার তুলনায় প্রায় ছ’গুণ বেশি।
হুরুনের প্রকাশিত ১৪তম সংস্করণে অন্তত ১,৬৮৭ জনের নাম উঠেছে, যাঁদের সম্পত্তির পরিমাণ ১,০০০ কোটিরও বেশি। এর মধ্যে ২৮৪ জন একেবারে নতুন নাম। গত বছরের তুলনায় এই সংখ্যা ১৪৮ জন বেশি। গত পাঁচ বছরে এই তালিকায় যুক্ত হয়েছেন প্রায় ৮৫৯ জন ধনকুবের।
Advertisement
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ বছরের তালিকাভুক্ত ধনীরা প্রতিদিন গড়ে ১,৯৯১ কোটি টাকা করে সম্পদ বাড়িয়েছেন। তাঁদের সম্মিলিত সম্পদ দাঁড়িয়েছে ১৬৭ লক্ষ কোটি টাকায়, যা গত বছরের তুলনায় ৫ শতাংশ বেশি। তুলনা করলে দেখা যায়, এই অঙ্ক স্পেনের মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) থেকেও বড় এবং ভারতের জিডিপির প্রায় অর্ধেকের সমান।
Advertisement
তবে গড় সম্পদের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। গত বছর যেখানে গড় সম্পত্তি ছিল ১০,৩২০ কোটি টাকা, সেখানে এ বছর তা নেমে এসেছে ৯,৮৫০ কোটিতে। হুরুন জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বাজারের শুল্কসংক্রান্ত টানাপোড়েন এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার জন্য ধনকুবেরদের গড় সম্পত্তির পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে।
আবার এই তালিকায় শীর্ষ ১০ জন ধনীর সম্পদ বেড়েছে আরও দ্রুত গতিতে। গত বছর যেখানে শীর্ষ দশে প্রবেশ করতে সম্পদ থাকতে হত ১.৬৩ লক্ষ কোটি টাকা, এ বছর সেই সীমা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১.৮৩ লক্ষ কোটি টাকায়। পাশাপাশি, এই শীর্ষ দশ ধনীর গড় বয়স কমে দাঁড়িয়েছে ৬৯ বছরে। আশ্চর্যজনকভাবে, শীর্ষ দশ জনের হাতে সম্পদের পরিমাণ তালিকার বাকি সবার মোট সম্পদের ২৮ শতাংশের সমান।
নতুন প্রজন্মের ধনীদের উত্থানে বড় ভূমিকা রেখেছে স্টার্টআপ। এ বছর তালিকায় ৯৭ জন স্টার্টআপ প্রতিষ্ঠাতার নাম উঠেছে, যাঁদের মধ্যে ৪৬ জন একেবারে নতুন মুখ। এঁদের মধ্যে ১২ জন আবার তালিকাভুক্ত সংস্থার উদ্যোক্তা। শুধু তাই নয়, এ বার নতুন অন্তর্ভুক্তদের মধ্যে প্রায় ৭৪ শতাংশই স্বনির্মিত শিল্পোদ্যোগী, যা ভারতের ঐতিহ্যবাহী শিল্পের বাইরে নতুন ধনকুবের তৈরির প্রবণতা স্পষ্ট করছে।
খাতভিত্তিক হিসেবে দেখা গিয়েছে, ওষুধশিল্পে সবচেয়ে বেশি ধনী তৈরি হয়েছে ১৩৭ জন। তার পরে রয়েছে শিল্পপণ্য (১৩২) এবং রাসায়নিক ও পেট্রোকেমিক্যাল খাত (১২৫)। শহরভিত্তিক পরিসংখ্যানে এখনও মুম্বই শীর্ষে। এখানকার ৪৫১ জনের নাম উঠেছে তালিকায়। দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে দিল্লি—২২৩ জন। তৃতীয় স্থানে বেঙ্গালুরু, ১১৬ জন ধনকুবের নিয়ে।
নারীরাও পিছিয়ে নেই। এ বছর ১০১ জন মহিলা স্থান পেয়েছেন এই তালিকায়, তাঁদের মধ্যে ২৬ জন ডলার কোটিপতি।
গড় বয়সের হিসাবে তালিকায় নাম থাকা পুরুষ ও মহিলাদের বয়স সমান, অর্থাৎ ৬৫ বছর। সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য বিষয়, নব্বইয়ের দশকে জন্ম নেওয়া ২০ জন তরুণ উদ্যোক্তাও জায়গা করে নিয়েছেন ভারতের এলিট কোটিপতি ক্লাবে।
Advertisement



