বেনারসের সম্ভ্রান্ত হোটেলে ব্রেকফাস্টের টেবিলে বসে ভদ্রলোক বিস্ফারিত চক্ষে টেলিভিশনের দিকে তাকিয়ে ছিলেন। এক মহিলা নির্বাচনী আধিকারিক নিয়ে খবর থেকে চোখ সরছিল না ওঁর।
কালো স্লিভলেস টি শার্ট আর প্যান্ট পরা মহিলাকে দেখে উনি পাশের টিকিধারী, স্যুটবুট পরা ভদ্রলোককে যা বললেন, তা লেখা যায় না রীনা দ্বিবেদী।
Advertisement
ইতিমধ্যেই ইন্টারনেটে ঝড় তুলে দেওয়া উত্তরপ্রদেশের এই মহিলা ভোটকর্মী আসলে কাজ করেন রাজ্য সরকারের পূর্ত দফতরে।
Advertisement
২০১৯ সালের নির্বাচনের সময় রীনার ছবি ভাইরাল হয়েছিল হলুদ শাড়ি পরে নির্বাচনে কাজ করতে যাওয়ার সময়। এবারে আবার রীনা খবরের শিরোনামে তাঁর পোষাকের কারণে।
রীনার শিরোনাম হওয়ার কারণ আসলে গোবলয়ের পুরুষতন্ত্রকে বোঝায়, যে পুরুষতন্ত্র ভারতীয় সংসদে মহিলা বিল পাশ হতে দেয় না। উত্তরপ্রদেশের এবারের নির্বাচনে পশ্চিম থেকে পূর্বে চক্কর মারতে মারতে বারবার এই পুরুষতন্ত্রের সগর্ব উপস্থিতিটা টের পাচ্ছি।
এই পুরুষতন্ত্রকে কোনও না কোনও ভাবে সব দলই প্রশ্রয় দেয়, যাকে চ্যালেঞ্জ করে প্রিয়াঙ্কা গান্ধির ‘লেড়কি হু, লড় সকতি হু’ স্লোগান।
এটা যেমন ঠিক যে এবারের উত্তরপ্রদেশ নির্বাচনে কংগ্রেস মুখ্য চরিত্রে নেই, তেমনই এটাও সত্যি যে প্রিয়াঙ্কা গান্ধির জন্যই মহিলাদের অধিকার নির্বাচনী ইস্যু হিসাবে সামনে চলে এসেছে।
এবং এটাও গান্ধিদের জন্য স্লাঘার বিষয় হতে পারে যে সোনিয়া গান্ধির নির্বাচনী ক্ষেত্র রায়বেরিলিতেই গ্রামে কিংবা মহল্লায় ঘুরলে সবচেয়ে বেশি জোরদার মহিলা কন্ঠ শোনা যায়।
এমনকি সেই মহিলারা নিজেদের রোজগার নিজেদের পিছনে খরচ করার মতো সাহসী ঘোষণা করতেও দ্বিধা করেন না।
রায়বেরিলির স্বপ্ন দেখতে চাওয়া মহিলাদের সঙ্গে হয়তো একই বিন্দুতে রয়েছেন রীনা দ্বিবেদী, একজন স্বাধীনচেতা মহিলা, যিনি নিজের ইচ্ছেমতো পোশাক পরে ভোটের ডিউটি করার সাহস দেখিয়েছেন। সেইজন্যই এত ঝড় কিংবা নেটমাধ্যমে ভেসে আসে এত তির্যক মন্তব্য?
নারীকে আপন ভাগ্য জয় করিবার কেন নাহি দিবে অধিকার, শুধুই কি তাহলে বইয়ের পাতায় রয়ে যাবে? গোবলয়ে মহিলা বলতে কি তাহলে শুধুই ঘোমটাপরা চেহারার স্টিরিওটাইপ?
সেই স্টিরিওটাইপকে যাঁরা ভাঙতে চাইছেন সেই সবাইকেই কি রীনা দ্বিবেদীর মতো কটাক্ষের মুখে পড়তে হবে? নেটমাধ্যমে তাঁকে এবং তাঁর পোশাক নিয়ে যে তুমুল আলোড়ন, সাহসী রীনা দ্বিবেদী তার চমৎকার উত্তর দিয়েছেন।
বলেছেন যে সোশ্যাল মিডিয়ায় তাঁর ছবি ভাইরাল হওয়ার পরে যখন ছেলের স্কুলে এই নিয়ে আলোচনা হচ্ছিল, তখন ছেলে বন্ধুদের বলেছে, যাঁকে নিয়ে আলোচনা হচ্ছে, তিনি আমার মা কেউ চাইলে পরে ছেলে ফোন করে মায়ের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেবে।
রীনা এবং তাঁর ছেলের সাহসী ঘোষণা, প্রতিস্পর্ধী উচ্চারণই বলে দেয় অর্ধেক আকাশের জন্য লড়াইটা উত্তরভারতের এই হিন্দিবলয়েও শুরু হয়েছে।
হয়তো সময় লাগবে, কিন্তু এই লড়াই থামবে না। থামবে না বলেই তো রীনা ২০১৯-এ নেটমাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পরও ২০২২-এ আবার সাহসী অবতারে হাজির।
Advertisement



