আর মাত্র ৮ বছর, জনসংখ্যায় চিনকে পেছনে ফেলতে চলেছে ভারত

এখনও পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চিন। কিন্তু বেশিদিন এই তকমা আর তাদের দখলে থাকবে না।

Written by SNS New Delhi | June 20, 2019 10:53 am

প্রতীকী ছবি (Photo: iStock)

এখনও পর্যন্ত বিশ্বের সবচেয়ে জনবহুল দেশ চিন। কিন্তু বেশিদিন এই তকমা আর তাদের দখলে থাকবে না। ভারতে জনসংখ্যার হার যেভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে দ্রুত চিনকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাবে বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ ভারত।

রাষ্ট্রসংঘ প্রকাশিত একটি রিপাের্টে দাবি করা হয়েছে, আগামী আট বছরের মধ্যেই। জনসংখ্যার নিরিখে চিনকে পিছনে ফেলে দেবে ভারত। এখানেই শেষ নয়, একদিকে ভারতে যখন বাড়বে জনবিস্ফোরণ, তখনই অন্যদিকে ২০১৯ থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে প্রায় ২.২ শতাংশ কমবে চিনের জনসংখ্যো।

‘দ্য ওয়ার্ল্ড পপুলেশন প্রসপেক্ট ২০১৯: হাইলাইটস’ শিরােনামে যে রিপাের্ট প্রকাশিত হয়েছে, তাতে জানানাে হয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে বিশ্বের জনসংখ্যা ৭৭০ কোটি থেকে বেড়ি ৯৭০ কোটি হবে। এই বিপুল জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে বিশেষ অবদান থাকবে ভারত সহ আরও আটটি দেশের। সেই তালিকায় নাম রয়েছে নাইজেরিয়া, পাকিস্তান, কঙ্গো, ইথিওপিয়া, তানজানিয়া, ইন্দোনেশিয়া, মিশর এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের।

রিপাের্টে এও জানানাে হয়েছে, সারা বিশ্বে ফার্টালিটি রেট বা প্রজননের হার আগে থেকে অনেকটাই কমে গিয়েছে। ১৯৯০ সালে প্রতি মহিলা পিছু গড় সন্তান জন্মের সংখ্যা ছিল ৩.২। ২০১৯- এ তা নেমে গিয়েছে ২.৫-এ। ২০৫০ সালে তা আরও কমে দাঁড়ানাের সম্ভাবনা ২.১-এ।

২০৫০ সালে বিশ্বের মােট জনসংখ্যা ৯৭০ কোটিতে পৌঁছবে বলে জানিয়ে রাষ্ট্রসংঘের নতুন এই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ১৯৫০ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত পরিচালিত এক হাজার ৬৯০টি জাতীয় আদমসুমারির ফল ব্যবহার করে এই নতুন রিপাের্টটি তৈরি করা হয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের অর্থনৈতিক এবং সামাজিক বিষয়ক দফতরের জনসংখ্যা বিভাগ থেকে প্রকাশিত ‘দ্য ওয়ার্ল্ড পপুলেশন প্রসপেক্ট ২০১৯: হাইলাইটস’ শীর্ষক রিপাের্টে বিশ্বের জনবিস্তৃতির বিস্তারিত নিদর্শন এবং সম্ভাবনা তুলে ধরা হয়।

রিপাের্টের নতুন ধারণা অনুযায়ী, ২০৫০ সালের মধ্যে গােটা দেশে যে জনবিস্ফোরণ ঘটবে, তাতে মােট ন’টি দেশের অবদান ছাড়াও আরও কয়েকটি আর্থ-সামাজিক কারণ যুক্ত রয়েছে। বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ হিসেবে ২০২৭ সালে চিনকে ভারত ছাপিয়ে যাবে বলে মনে করছে এই রিপাের্টটি। আফ্রিকার সাব-সাহারা অঞ্চলের জনসংখ্যা ২০৫০ সাল নাগাদ দ্বিগুণ হবে (প্রায় ৯৯ শতাংশ বৃদ্ধি পাবে)।

রাষ্ট্রসংঘের রিপাের্টে বলা হয়েছে, গরিব দেশগুলির মানুষ আন্তর্জাতিক গড়ের তুলনায় সাত বছর কম বাঁচেন। ১৯৯০ সালের প্রত্যাশিত গড় আয়ু ৬৪.২ বছর থেকে বেড়ে ২০১৯ সালে ৭২.৬ বছর হয়েছে। তা ২০৫০ সালে আরও বেড়ে ৭৭.১ বছর হবে বলে মনে করা হচ্ছে। পাশাপাশি চিনে ২০১৯ থেকে ২০৫০-এর মধ্যে জনসংখ্যা ৩ কোটি ১৪ লক্ষ বা ২.২ শতাংশ কমবে বলে মনে করছে রিপাের্ট।

একদিকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি জনসংখ্যার দেশ হওয়ার পথে লাফিয়ে লাফিয়ে এগােচ্ছে ভারত, আর অন্যদিকে চিন সহ বেশ কয়েকটি দেশ জনসংখ্যা বৃদ্ধিতে রাশ টানতে সক্ষম হয়েছে। রাষ্ট্রসংঘের জনসংখ্যা বিষয়ক এই রিপোর্ট জানিয়েছে ২০১০ সাল থেকে অন্তত ২৭টি দেশ বা বৃহৎ অঞ্চল জনসংখ্যার হার কমাতে সক্ষম হয়েছে। অন্তত এক শতাংশ হারে জনবিস্ফোরণ ঠেকাতে পেরেছে এই দেশগুলি। রিপোর্টে বলা হয়েছে এই প্রবণতা বজায় থাকলে ২০১৯ সাল থেকে ২০৫০ সালের মধ্যে অন্তত ৫৫টি দেশে জনসংখ্যা এক শতাংশ হারে কমবে। তার মধ্যে ২৬টি দেশে জনসংখ্যা দশ শতাংশ হারে কমার সম্ভাবনাও রয়েছে বলে জানানাে হয়েছে ওই রিপাের্টে। এক শতাংশের বেশি হারে জনবিস্ফোরণ ঠেকানাের তালিকায় উল্লেখযােগ্য দেশ হল চিন।

শুধু জনসংখ্যাই নয়, জনঘনত্ব এবং জনবিন্যাস নিয়েও নির্দিষ্ট তথ্য দেওয়া হয়েছে রাষ্ট্রসংঘের রিপাের্টে। বলা হয়েছে, পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে বেশ কিছু সংখ্যক মানুষ স্থানত্যাগ করতে পারেন। এই দেশগুলির মধ্যে রয়েছে নেপাল, বাংলাদেশ এবং ফিলিপাইন্স। এছাড়া যুদ্ধবিগ্রহ, সংঘাত, সশস্ত্র অভূত্থানের কারণে মায়ানমার, সিরিয়া এবং ভেনেজুয়েলার মতো দেশ থেকে মানুষ অন্যত্র স্থানান্তরিত হবেন। একই সঙ্গে রিপাের্টে উল্লেখ করা হয়েছে, একাধিক দেশ থেকে আসা মানুষের কারণে জনসংখ্যা বাড়বে বেলারুস, এস্তোনিয়া, জার্মানি, হাঙ্গেরি, ইতালি, জাপান, রাশিয়া, সার্বিয়া এবং ইউক্রেনের মতাে দেশে।