• facebook
  • twitter
Monday, 12 May, 2025

‘অপারেশন সিঁদুর’-এ নিহত ৫ জঙ্গির পরিচয় প্রকাশ্যে

দাবি সরকারি সংবাদ মাধ্যমের

ফাইল চিত্র

ভারতীয় সেনাবাহিনীর ‘অপারেশন সিঁদুর’-এর নিখুঁত অভিযানের উদ্দেশ্য যে সফল হয়েছে, তা এবার আন্তর্জাতিক মঞ্চে স্পষ্ট হয়ে গেল। এই অভিযানে নিহত পাঁচ জঙ্গির পরিচয় প্রকাশ্যে এলো। এই পাঁচজনের মধ্যে দুই জন ছিল লশকর-এ-তৈবা এবং বাকি তিনজন জইশ-ই-মহম্মদ জঙ্গিগোষ্ঠীর সদস্য। লশকর-এ-তৈবার দুই জঙ্গি মুদস্‌সর খাদিয়ান খাস ওরফে মুদস্‌সর ওরফে আবু জুন্দল ও খালিদ ওরফে আবু আকাশা। জইশ-ই-মহম্মদের তিন নিহত জঙ্গি হাফিজ় মুহম্মদ জ়ামিল, মুহম্মদ ইউসুফ আজ়হার, মহম্মদ হাসান খান।

এই তালিকায় রয়েছে কুখ্যাত জইশ জঙ্গিনেতা মৌলানা মাসুদ আজ়হারের দুই আত্মীয়। তার মধ্যে একজন কন্দহার বিমান অপহরণকাণ্ডে ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকায় থাকা মাসুদ আজহারের ভাই আব্দুল রউফ আজহারও। সূত্রকে উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা এএনআই এবং সরকারি সংবাদমাধ্যম ডিডি নিউজ় পাঁচ জঙ্গির নাম প্রকাশ করেছে, যারা ‘অপারেশন সিঁদুরে’ নিহত হয়েছে।

ওই সূত্রের দাবি, খালিদ ওরফে আবু আকাশা নামে এক লশকর জঙ্গি নিহত হয়েছে ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ। তার বিরুদ্ধে একাধিক নাশকতামূলক অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। সূত্রের দাবি, খালিদ জম্মু ও কাশ্মীরে একাধিক জঙ্গিহানায় যুক্ত ছিল। এমনকি আফগানিস্তান থেকে অস্ত্রপাচারেও তার যোগ ছিল। ওই জঙ্গির শেষকৃত্য হয় পাকিস্তানের ফয়সলাবাদে। সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন পাক সেনা আধিকারিকরা। শুধু তাই নয়, ফয়সলাবাদের ডেপুটি কমিশনারও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। এমনটাই ওই সূত্রের দাবি।

এই অভিযানে লশকর-এ-তৈবার জঙ্গি মুদস্‌সর খাদিয়ান খাস ওরফে মুদস্‌সর ওরফে আবু জুন্দলের মৃত্যু হয়েছে। সে মুরিদকে অঞ্চলে মারকজ় ত্যায়বার দায়িত্বে ছিল। চাঞ্চল্যকর খবর হল, তার শেষকৃত্যের প্রার্থনা হয়েছে পাকিস্তানের এক সরকারি স্কুলে। সেই শেষকৃত্যের অনুষ্ঠানে পাকিস্তানি জঙ্গিগোষ্ঠী জামাত-উদ্‌-দাওয়া (জিইউডি)-র নেতা স্বয়ং হাফিজ় আবদুল রউফ উপস্থিত ছিলেন। ডিডি নিউজ়ের সমাজমাধ্যমের পাতায় জানানো হয়েছে, পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশের এক পুলিশকর্তা ও পাক সেনার এক কর্তব্যরত লেফটেন্যান্ট জেনারেলও উপস্থিত ছিলেন ওই শেষকৃত্যের প্রার্থনায়। নিহত ওই জঙ্গিকে সেখানে পাক সেনার তরফে ‘গার্ড অফ অনার’ও দেওয়া হয়েছে।

এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা প্রয়োজন, ২৬/১১ মুম্বই হামলাতেও আবু জুন্দল নামে এক জঙ্গির নাম উঠে এসেছিল। সে-ও লশকরের জঙ্গি। যদিও ‘অপারেশন সিঁদুর’-এ নিহত এই জঙ্গি সেই আবু জুন্দল নয় বলে পরে জানা গিয়েছে। ২৬/১১ হামলায় অভিযুক্ত জঙ্গির নাম ছিল জ়াবিউদ্দিন আনসারি ওরফে আবু জুন্দল। ২০১২ সালে সৌদি আরব থেকে তাকে ভারতে প্রত্যর্পণ করা হয়েছিল। ২০০৬ সালের ঔরঙ্গাবাদ অস্ত্র উদ্ধার মামলাতেও অভিযুক্ত ছিল সে। ২০১৬ সালে ওই মামলায় জুন্দলকে দোষী সাব্যস্ত করে মহারাষ্ট্রের আদালত এবং বর্তমানে সে ভারতীয় জেলে বন্দি।

এদিকে জইশ-ই-মহম্মদের তিন নিহত জঙ্গির নামপরিচয়ও প্রকাশ্যে এসেছে। তাদের মধ্যে রয়েছে জঙ্গিনেতা মৌলানা মাসুদ আজ়হারের আত্মীয় হাফিজ় মুহম্মদ জ়ামিল। জইশের হয়ে এই জঙ্গি অর্থসংগ্রহ ও যুব সমাজের মধ্যে কট্টরপন্থী ভাবধারা বিস্তারের দায়িত্বে ছিল। সে মারকজ় সুভান আল্লাহ-র দায়িত্বে ছিল। এই অভিযানে মাসুদ আজ়হারের অপর এক আত্মীয় মুহম্মদ ইউসুফ আজ়হারেরও মৃত্যু হয়েছে। এই জঙ্গিনেতার দায়িত্ব ছিল জইশ জঙ্গিদের অস্ত্র প্রশিক্ষণ দেওয়া। জম্মু ও কাশ্মীরে একাধিক জঙ্গি হানায় তার নাম জড়িয়েছে। এই জইশ নেতা আইসি-৮১৪ অপহরণ কাণ্ডেও জড়িত ছিল। এছাড়া ভারতীয় সশস্ত্র বাহিনীর অভিযানে মৃত্যু হয়েছে জইশ জঙ্গি মহম্মদ হাসান খানের। সে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জইশ জঙ্গিগোষ্ঠীর অন্যতম কমান্ডার মুফতি আসগর খান কাশ্মীরির ছেলে। এই জঙ্গির বিরুদ্ধে কাশ্মীরে বেশ কিছু জঙ্গিহানা পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে।

প্রসঙ্গত পহেলগাম হত্যাকাণ্ডের ১৫দিন পর ‘অপারেশন সিঁদুর’ অভিযান চালায় ভারতীয় সেনাবাহিনী। সেই অভিযানে স্যাটেলাইট প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে পাকিস্তান ও পাক অধিকৃত কাশ্মীরের জঙ্গি ঘাঁটিগুলি চিহ্নিত করে ভারতের প্রতিরক্ষা বিভাগ। সেই মতো গত মঙ্গলবার গভীর রাতে ৯টি জঙ্গি ঘাঁটি কার্যত গুঁড়িয়ে দেয় ভারত। সেই নিশানা যে অতি সূক্ষ্ম ও নিখুঁত ছিল, এখন আর তা বলার অপেক্ষা রাখে না। ভারত সরকার গত বুধবার সাংবাদিক বৈঠক করে জানিয়েছিল, নির্দিষ্ট ভাবে জঙ্গিঘাঁটি লক্ষ্য করেই হামলা চালানো হয়েছিল। যদিও নিহত জঙ্গিদের নাম-পরিচয় সরকারি ভাবে কিছু ঘোষণা করা হয়নি। কিন্তু তা সত্ত্বেও পাকিস্তান সেই সত্যটা স্বীকার করতে রাজি ছিল না। বরং তারা রাষ্ট্রপুঞ্জ সহ একাধিক আন্তর্জাতিক মঞ্চে দাবি করে আসছিল, এই হামলায় সাধারণ নিরীহ মানুষের মৃত্যু হয়েছে। কয়েকজন শিশু ও মহিলার মৃত্যুর মতো স্পর্শকাতর অভিযোগও করা হয় ভারতের বিরুদ্ধে।