আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের জয়, মৃত্যুদণ্ড স্থগিত কুলভূষণ যাদবের

আন্তর্জাতিক আদালতে শেষ পর্যন্ত ভারতেরই জয় হল। বুধবার কুলভূষণ যাদবের মৃত্যুদণ্ড পুনর্বিবেচনায় ভারতের আর্জি মেনে পর্যবেক্ষণ দিল আন্তর্জাতিক আদালত।

Written by SNS New Delhi | July 18, 2019 1:40 pm

কুলভূষণ যাদবের মা ও স্ত্রী। (File Photo: IANS)

আন্তর্জাতিক আদালতে শেষ পর্যন্ত ভারতেরই জয় হল। বুধবার কুলভূষণ যাদবের মৃত্যুদণ্ড পুনর্বিবেচনায় ভারতের আর্জি মেনে পর্যবেক্ষণ দিল আন্তর্জাতিক আদালত। পাকিস্তানকে নির্দেশ দিল কুলভূষণের মৃত্যুদণ্ড আপাতত স্থগিত রাখতে। সেইসঙ্গে কুলভূষণ যাদবকে দূতাবাস সুরক্ষা দেওয়ারও নির্দেশ দিল আদালত।

এই রায়ের পক্ষে ছিলেন পনেরাে জন। রায়ের বিরুদ্ধতা করেন একমাত্র পাকিন্তানের বিচারপতি। আন্তর্জাতিক আদালতের দশ সদস্যের প্যানেলের বিচারপতিরা এদিন অভিযােগ করেন দূতাবাস সুরক্ষা না দিয়ে পাকিস্তান ভিয়েনা চুক্তি ভঙ্গ করেছে। কুলভূষণের বিচার হয়েছিল পাকিস্তানের সামরিক আদালতে। এদিন আন্তর্জাতিক আদালতের রায় ছিল, কুলভূষণের বিচার হওয়া উচিত ফৌজদারী আদালতে।

দূতাবাস সম্পর্কিত ভিয়েনা কনভেনশনে বলা হয়েছে, কোনও দেশের নাগরিক অন্য দেশে গিয়ে গ্রেফতার হলে তাঁর নিজের দেশের দূতাবাসের আধিকারিকদের বন্দির সঙ্গে দেখা করতে হবে। কিন্তু কুলভূষণের ক্ষেত্রে পাকিস্তান সেই অনুমতি দেয়নি। ফলে ভিয়েনা চুক্তি লঙ্ঘন করা হয়েছে বলে আন্তর্জাতিক আদালত।

২০১৬ সালের ৩ মার্চ, ইরান থেকে পাকিস্তানে গিয়ে গ্রেফতার হন ভারতীয় নৌবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত অফিসার কুলভূষণ। কিন্তু পাকিস্তান তাঁর বিরুদ্ধে গুপ্তচরবৃত্তি ও সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের অভিযােগ আনে। ২০১৭ সালে পাকিস্তানের মিলিটারি আদালত মামলাতে মৃত্যুদণ্ডের নির্দেশ দেন। সেই নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করেই আন্তর্জাতিক আদালতে যায় ভারত। কুলভূষণের মৃত্যুদণ্ড মুকুবের আর্জি জানিয়ে।

ওই সময় ভারতের তরফে জানানাে হয়েছিল, নৌ বাহিনী থেকে অবসর নেওয়ার পর ইরানে ব্যবসায়িক কারণে গিয়েছিলেন কুলভূষণ। সেখান থেকে তাঁকে গ্রেফতার করা হয়। আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের আরও অভিযােগ ছিল, ৪৯ বছর বয়সী অবসরপ্রাপ্ত নৌসেনা অফিসার কুলভূষণের সঙ্গে ভারতীয় হাইকমিশনের সদস্যদের দেখা করতে (কনস্যুলার অ্যাকসেস) দেওয়া হচ্ছে না। কুলভূষণকে কনস্যুলার অ্যাকসেস দিলেও পাকিস্তান ২০১৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর ইসলামাবাদে তার স্ত্রী ও মায়ের সঙ্গে ওই অবসরপ্রাপ্ত নৌসেনা অফিসারের দেখা করার সুযােগ করে দেয়। পরে যদিও ভারতের তরফে অভিযােগ করা হয়, কুলভূষণকে ‘গুপ্তচর’ প্রমাণ করানাের জন্যই পাকিস্তানের সেটা একটা কৌশল ছিল।

ভারতের তরফে অভিযােগ ছিল, প্রকৃতপক্ষে ভিয়েনা চুক্তি লঙ্ঘন করেছে পাকিস্তান। পাক সামরিক আদালতের ওই রায়কে বিচারের নামে ‘প্রহসন’ বলে আন্তর্জাতিক আদালতে অভিযােগ করে ভারত। পাকিস্তান ভারতের সেই অভিযোগ অস্বীকার করে। তাদের যুক্তি ছিল, কুলভূষণের মতাে গুপ্তচরকে দিয়েই ভারত পাকিস্তানের গােপন খবরাখবর সংগ্রহের চেষ্টা করছিল।

ভারতের পক্ষে আইনজীবী হরিশ সালভে পাকিস্তানের সামরিক আদালতের কার্যকলাপ নিয়েও আন্তর্জাতিক আদালতে প্রশ্ন তােলেন। তারই পরিপ্রেক্ষিতে কুলভূষণকে দেওয়া মৃত্যু দণ্ডাদেশ খারিজ করার জন্য আন্তর্জাতিক আদালতে আর্জি জানানাে হয়। অন্য দিকে পাকিস্তানের আইনজীবী খায়র কুরেশি আন্তর্জাতিক আদালতকে ভারতের এই দাবি প্রত্যাখ্যান করার জন্য অনুরােধ জানিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আন্তর্জাতিক আদালতের রায় ভারতের পক্ষেই যায়।