• facebook
  • twitter
Thursday, 14 August, 2025

পাকিস্তানকে সতর্কবার্তা জেনারেল চৌহানের

‘সহ্যের লাল সীমারেখা অপারেশন সিঁদুর’

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লাল লক্ষণরেখা টেনে দিয়েছে ভারত। ভারতের আশা, প্রতিবেশী দেশ পাকিস্তান এর থেকে শিক্ষা নিশ্চয়ই শিক্ষা নেবে। শনিবার সিঙ্গাপুরে গিয়ে মার্কিন সংবাদমাধ্যমকে সাক্ষাৎকারে এমনটাই বলেছেন দেশের সেনা সর্বাধিনায়ক বা চিফ অফ ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহান। সাংগ্রি-লা বৈঠকে যোগ দিতে ওই দেশে গিয়েছেন তিনি। সেখানেই মার্কিন সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে ভারত-পাকিস্তান সংঘর্ষ, জঙ্গি দমন, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের নীতির মতো একাধিক বিষয় নিয়ে খোলামেলা কথা বলেছেন তিনি। সাংগ্রি-লা বৈঠকে ছিলেন পাকিস্তানি সেনার শীর্ষকর্তা জেনারেল শাহিদ সমশাদ মির্জাও। উভয়ের ভাষণেই উঠে এসেছে ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক সংঘাত এবং সেই সংক্রান্ত বিতর্ক। এই বৈঠকে উভয়েই একে অপরকে সতর্কবার্তা দিয়েছেন। জেনারেল চৌহান জানিয়েছেন, ভারতের ‘অপারেশন সিঁদুর’ পাকিস্তানকে ‘রেড লাইন’-এর হুঁশিয়ারি দিয়েছে। এর থেকে পাকিস্তান আগামী দিনে শিক্ষা নেবে বলেও আশা প্রকাশ করেছেন তিনি। পাক কর্তার ভাষণে কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে উদ্বেগ শোনা গিয়েছে।

জেনারেল অনিল চৌহান সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের অসহিষ্ণুতার লাল রেখা সম্পর্কে উল্লেখ করে বলেছেন, ‘ভারত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে অসহিষ্ণুতার একটি নতুন লাল রেখা চিহ্নিত করে দিয়েছে।’ তাঁর কথায়, ‘এই অভিযান থেকে আমাদের প্রতিপক্ষ শিক্ষা নেবে এই আশা রাখি। তাদের এটা বোঝা উচিত যে, ভারতের সহ্যক্ষমতার একটা সীমা আছে।’ ভারতে পর পর সন্ত্রাসবাদী হামলা এবং সীমান্ত সন্ত্রাসের উল্লেখ করে জেনারেল চৌহান বলেন, ‘আমরা প্রায় দুই দশক বা তারও বেশি সময় ধরে ক্ষমতার জন্য এই সন্ত্রাসের যুদ্ধ দেখেছি এবং আমরা অনেক মানুষকে হারিয়েছি… আমরা এর অবসান ঘটাতে চাই।’

সাংগ্রি-লা বৈঠকে শনিবার ‘আঞ্চলিক সঙ্কট ব্যবস্থাপনা প্রক্রিয়া’ শীর্ষক আলোচনায় যোগ দিয়েছিলেন ভারত এবং পাকিস্তানের সেনাকর্তা। আঞ্চলিক সঙ্কট এবং ভারত-পাক কৌশলগত স্থিতিশীলতার প্রসঙ্গে জেনারেল চৌহান বলেছেন, ‘দুই হাত জোড়া লাগলে তবেই তালি বাজে। ‘

পাকিস্তানের সেনাকর্তা বলেছেন, যে কোনও সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান প্রয়োজন। কোনও সংঘর্ষের পরিস্থিতি তৈরি হলে তা সাময়িকভাবে ঠেকিয়ে রাখা যায় বা পিছিয়ে দেওয়া যায়। কিন্তু তা চূড়ান্ত সমাধানের পথ হতে পারে না। উদাহরণ হিসাবে কাশ্মীর সমস্যার কথা তুলে ধরে পাক কর্তা জেনারেল মির্জা দাবি করেন, এই সমস্যার দ্রুত সমাধান না-হলে আগামী দিনে মধ্যস্থতার সময়ও আর পাওয়া যাবে না। তাঁর কথায়, ‘ আগামীদিনে বিশ্বের সঙ্কটজনক পরিস্থিতি বিপজ্জনক মাত্রা থেকে কমিয়ে কৌশলগত স্থিতিশীলতায় পৌছনো উচিত। যদি পরের বার কোনও সংঘাত ঘটে এবং শহরগুলি প্রথম লক্ষ্য হয় এবং সীমানা যদি তখন অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়… হয়তো এমন সম্ভাবনা সৃষ্টি হতে পারে যে, সীমিত সময়ে আন্তর্জাতিক শক্তিগুলি সঙ্কটের সময়ে হস্তক্ষেপ করার আগেই, ক্ষতি বা ধ্বংস হয়ে যাবে।’

জেনারেল মির্জা এক সংবাদমাধ্যমে সাক্ষাত্কারে বলেছেন যে, পাকিস্তান তার ভূখণ্ডে সন্ত্রাসবাদের মোকাবিলা করছে এবং তালিবান শাসিত আফগানিস্তানের আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় কাজ করছে। সন্ত্রাসবাদের কারণে পাকিস্তানেও বহু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন তিনি। মির্জা বলেন, সন্ত্রাসবাদের জন্য তাঁর দেশের কোটি কোটি ডলার এবং হাজার হাজার মানুষের প্রাণহানি হয়েছে।

সিঙ্গাপুর থেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে জেনারেল চৌহান মেনে নেন, পাকিস্তানের হামলায় ভারতের যুদ্ধবিমান ধ্বংস হয়েছিল। যদিও তার সংখ্যা স্পষ্ট করেননি তিনি। জানিয়েছিলেন, ভারত তার কৌশলগত ভুল বুঝতে পেরেছিল এবং ত্রুটি শুধরে নিয়ে একই কৌশলে আবার হামলা চালিয়েছিল। তাতে সাফল্য এসেছে।জেনারেল চৌহান বলেন, ‘ভারত তার প্রতিরক্ষার প্রয়োজনের জন্য কোনও একটি দেশের উপর নির্ভর করে না।’ তিনি বলেন, ‘সেনার একাধিক ক্ষমতা একত্রিত হয়েছে এবং কার্যকরভাবে ব্যবহার করা হয়েছে।’

অন্যদিকে জেনারেল মির্জা তাঁর সাক্ষাৎকারে বলেন যে, তাঁর দেশে চিন এবং অন্যান্য অনেক জায়গার অস্ত্র রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমার কাছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম রয়েছে। আমার তুর্কির সামরিক সরঞ্জাম আছে। আমার ইতালির সামরিক প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম আছে। আমার যুক্তরাজ্যের সামরিক প্রতিরক্ষা আছে। আমাদের কাছে সব দেশের সামরিক প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে।’

News Hub