দেশজুড়ে বন্যা পরিস্থিতি জটিল

মরশুমি বর্ষায় জেরবার তামাম ভারত-পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ, টানা কয়েকদিন ধরে চলা ভারি বর্ষণে কয়েকটি রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে।

Written by SNS Bengaluru | August 11, 2019 3:11 pm

Kerela flood (IANS)

মরশুমি বর্ষায় জেরবার তামাম ভারত-পূর্ব থেকে পশ্চিম, উত্তর থেকে দক্ষিণ, টানা কয়েকদিন ধরে চলা ভারি বর্ষণে কয়েকটি রাজ্যে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে, যা বেশিরভাগ রাজ্যে ভয়ানক চেহারা নিয়েছে। জলাধার ও নদীর জলস্তর বিপদসীমার ওপর দিয়ে বইছে। 

কর্ণাটক প্রশাসনের তরফে বন্যাজনিত কারণে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ জানানাে হয়েছে, শস্য ও সরকারি সম্পত্তির মােট ক্ষতির পরিমাণ ৬০০০ কোটি টাকা। মুখ্যমন্ত্রী ইয়েদুরাপ্পা রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতিকে ‘ভয়ঙ্কর বিপর্যয়’ বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, ৪৫ বছরে বন্যা পরিস্থিতি এত ভয়ঙ্কর রূপ ধারণ করেনি। রাজ্য প্রশাসনের তরফে কেন্দ্রের থেকে ৩০০০ কোটি টাকা ত্রাণ সাহায্য চাওয়া হয়েছে। 

তিনি বলেন, ‘প্রশাসনের তরফে ভারি বর্ষণে ভেঙে পড়া বাড়িগুলি পুনর্নির্মাণ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। বেশ কয়েকটা গ্রাম বন্যায় ভেসে গেছে, সেগুলি নতুন করে গড়ে তুলতে হবে বর্ষণজনিক একাধিক কারণে এখনও পর্যন্ত ২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে’। সেনাবাহিনী ও জাতীয় বিপর্যয় মােকাবিলা বাহিনীর সদস্যরা ত্রাণ ও উদ্ধার কাজ চালাচ্ছে। 

এদিকে, পশ্চিম মহারাষ্ট্রের কোলাপুর ও সাঙ্গলি জেলার বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। বন্যার জল ধীরে ধীরে নামতে শুরু করেছে। প্রশাসনের তরফে জানানাে হয়েছে, বৃষ্টি হয়নি। পুরাে জল নামতে আরও দু’তিন দিন সময় লাগবে। তবে মােটের ওপর পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে। বন্যা দুর্গতদের উদ্ধার করে তাদের নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার কাজ চলছে। ত্রাণ শিবিরগুলােয় ভিড় চোখে পড়ার মতাে, প্রশাসনের তরফে ত্রাণসামগ্রী পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। 

কোলাপুরের পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, সামগ্রিকভাবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। জলমগ্ন এলাকাগুলাে থেকে জল নামতে শুরু করেছে। কোলাপুর বন্যার জলস্তরের সীমা ৫২ ফুট, বিপদসীমার (৪৭ ফুট) ওপর দিয়ে বইছে। বন্যার সময় জলস্তর ৫৭ ফুট পর্যন্ত উঠে গেছিল। পুরাে জল নামতে আরও কয়েকটা দিন লাগবে। 

তিনি বলেন, ‘শিরােল ও কুরুনওয়াড় তেহসিল থেকে বন্যা দুর্গতদের সরানাের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। সাঙ্গলী জেলাতেও একই চিত্র। জলমগ্ন এলাকাগুলাে থেকে জল নামতে শুরু করেছে। স্থানীয় জেলা প্রশাসনের তরফে জানানাে হয়েছে, জল নামছে। বন্যার জলস্তর ৫৬.৭ ফুটে দাড়িয়ে রয়েছে। 

পালুস তেহসিলের ব্রহ্মানাল গ্রামের নিকটবর্তী নদীতে ডুবে যাওয়া নৌকা থেকে একটি মেয়ে সহ তিনটি দেহ উদ্ধার করা হয়েছে। ন’জন ডুবে গেছে। বাকিরা এখনও নিখোঁজ। সাঙ্গলী জেলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাড়িয়েছে ১২। 

কোলাপুর ও সাঙ্গলী জেলায় ১১০ জন নৌসেনা ২৬টি নৌকা নিয়ে উদ্ধার চালাচ্ছে। প্রতিরক্ষা মন্ত্রকের তরফে জানানাে হয়েছে, বন্যার জল না নেমে যাওয়া পর্যন্ত নৌবাহিনী মােতায়েন থাকবে। নৌবাহিনীর ১৫টি টিমকে ওখানে পাঠানাে হচ্ছে। দ্রুত উদ্ধার চালানাের লক্ষ্যে অতিরিক্ত বাহিনী পাঠানাে হচ্ছে। বন্যাদুর্গতদের উদ্ধারের লক্ষ্যে কোলাপুরে নৌবাহিনীর ১৪টি দল ও সাঙ্গলীতে ১২টি দল মােতায়েন রাখা হয়েছে। 

কোলাপুর, সাঙ্গলী, সাতারা, পুণে শােলাপুর জেলা থেকে ২.৮৫ লাখ মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে। দক্ষিণ ভারতের গুরুত্বপূর্ণ কৃষ্ণা নদীর ওপর আলমাত্তি বাঁধ থেকে ৫০০,০০০ কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। ফলে নদীর উচ্চপ্রবাহে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

লাগাতার ভারি বর্ষণে কেরলে বন্যা পরিস্থিতি জটিল আকার ধারণ করেছে। প্রশাসনের তরফে জানানাে হয়েছে, ভারিবর্ষণের কারণে ধস নেমে ও জলে ডুবে ৪২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এক লাখ মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কোঝিকোড় ও মালাঙ্গুরমে ২০ জনের মৃত্যু হয়েছে। ওয়ানাড়ে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। রাজ্যের মােট ৯৮৮টি ত্রাণ শিবিরে ১,০৭,৬৯৯ মানুষকে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। 

সবথেকে ক্ষতির পরিমাণ বেশি ওয়ানাড়ে। সেখান থেকে ২৪,৯৯০ মানুষকে ত্রাণ শিবিরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ওয়ানাড়ের মহকুমা শাসক এন এস কে উমেশ জানিয়েছেন, ১০০০ মানুষকে উদ্ধার করে নিরাপদ জায়গায় সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ প্রচুর। ১৫ জন নিখোঁজ। সেনা ও বিপর্যয় মােকাবিলা বাহিনী বন্যা কবলিত এলাকায় তল্লাশি চালাচ্ছে।