উন্নাওর বিজেপি বিধায়কের বিরুদ্ধে এফআইআর

উন্নাওয়ে নির্যাতিতার গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কারণে বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গারের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করলাে উত্তরপ্রদেশে পুলিশ।

Written by SNS New Delhi | July 30, 2019 5:36 pm

(Photo: IANS)

উন্নাওয়ে নির্যাতিতার গাড়ি দুর্ঘটনায় মৃত্যুর কারণে বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গারের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করলাে উত্তরপ্রদেশে পুলিশ। বাকি ৯ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

নির্যাতিতার পরিবার ঘটনাটি নিছক দুর্ঘটনা বলে মনে করছেন না। তাঁদের অভিযােগ, চক্রান্ত করে দুর্ঘটনাটি ঘটানাে হয়েছে। পুরােটাই সেঙ্গারের মদতে হয়েছে বলে পুলিশের কাছে অভিযােগ করেছেন নির্যাতিতার মা। তাঁর অভিযােগের ওপর ভিত্তি করে বিজেপি বিধায়ক সহ বাকি ৯ জনের বিরুদ্ধে খুনের অভিযােগ এনেছে পুলিশ।

বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গারের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধি ৩০২ (খুন), ৩০৭ (খুনের ষড়যন্ত্র) এবং ৫০৬ (ভীতি প্রদর্শন) ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। বর্তমানে বিজেপি বিধায়কের ঠাই সীতাপুর জেলা কারাবাসে।

নির্যাতিতার পরিবারকে ভয় দেখিয়ে আদালতে মামলা প্রত্যাহারের জন্য চাপ তৈরির অপরাধে সেঙ্গারের ৯ জন সাঙ্গপাঙ্গর বিরুদ্ধেও অভিযােগ দায়ের করেছে পুলিশ।

গতকাল গাড়ি দুর্ঘটনায় জখম ১৫ বছরের ওই নির্যাতিতা তরুণী হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা কষছেন এই মুহুর্তে। লখনউয়ে কিংস জর্জ’স মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে ট্রমা সেন্টারে রয়েছেন ওই তরুণী। ওই হাসপাতালেই চিকিৎসা চলছে তাঁর আইনজীবীর।

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘ওই তরুণীর ফুসফুসে আঘাত লেগেছে। সবচেয়ে বেশি চোট লেগেছে দেহের ডান দিকে। কলার বােন, হাত ও উরুর হাড় ভেঙে গেছে। ওকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে’।

রবিবার নির্যাতিতা তরুণী পরিবারের সদস্য এবং আইনজীবীর সঙ্গে রায়বরেলি সংশােধনাগারে তাঁর কাকার সঙ্গে দেখা করতে যাচ্ছিলেন। সেই সময় রাস্তায় উল্টোদিক থেকে আসা একটি ট্রাক তাঁদের গাড়িতে ধাক্কা মারে। এতে তাঁর দুই আত্মীয়র মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে রয়েছেন উন্নাও গণধর্ষণ মামলার একজন সাক্ষীও।

ওই তরুণীর মায়ের অভিযােগ, ‘তাঁদের খুন করতেই দুর্ঘটনাটি ঘটানাে হয়েছে। মামলায় এক অভিযুক্তের ছেলে, শাহি সিং এবং গ্রামের কয়েকজন যুবক তাঁদের ভয় দেখাচ্ছে। বিষয়টি আপসে মিটিয়ে নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। জেলে বসেই কলকাঠি নাড়ছেন কুলদীপ সেঙ্গার’।

দুর্ঘটনার তদন্তভার সিবিআইয়ের হাতে দেওয়া হয়েছে। সােমবার দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে সিবিআইয়ের একটি প্রতিনিধি দল। অন্য একটি দল হাসপাতালে ওই তরুণীকে দেখতে যান। আজ সাংবাদিক বৈঠক করে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ জানিয়েছে, ঘাতক ট্রাকের চালক ধরা পড়েছে। ট্রাকের চালক জানিয়েছে, ট্রাক কেনার জন্য যে ঋণ নিয়েছিলেন শােধ করতে না পারার জন্য নম্বর প্লেটে কালাে রঙ লাগিয়েছেন। যাতে ধরা না পড়ে।

লখনউয়ের ডিজিপি সাংবাদিকদের জানান, ‘নির্যাতিতার জন্য একজন বন্দুকধারী সহ ৯ জন রক্ষীকে নিয়ােগ করা হয়েছিল। তবে গাড়িতে জায়গা না থাকায় ওরা ওই তরুণীর জন্য নিযুক্ত বন্দুকধারী রক্ষীকে জানিয়েছিলেন গাড়িতে ৫ জন রয়েছে চিন্তার কারণ নেই’।

উন্নাও ঘটনার জেরে সােমবার ঝড় ওঠে সংসদে। নির্যাতিতাকে খুনের চক্রান্ত করা হয়েছিল বলে রাজ্যসভায় ‘জিরাে আওয়ার’-এ অভিযােগ তােলেন সমাজবাদী পার্টি সাংসদ রামগােপাল যাদব। তাঁকে সমর্থন জানান বিএসপি, কংগ্রেস ও আম আদমি পার্টির সাংসদরা। ঘটনাটি খতিয়ে দেখতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানান রাজ্যসভার চেয়ারম্যান বেঙ্কাইয়া নাইডু। এরপরই অধিবেশন মুলতুবি হয়ে যায়।

জাতীয় মহিলা কমিশনের তরফ থেকেও খবর নেওয়া হচ্ছে। উত্তরপ্রদেশের পুলিশের সঙ্গে দেখা করবেন বলে জানিয়েছে জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্যরা। 

উন্নাওয়ের নির্যাতিতা তরুণীর গাড়ি দুর্ঘটনায় সমালােচনা শুরু হয়েছে বিরােধী মহলে। কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধি নরেন্দ্র মােদি সরকারকে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। সমাজে নারী সুরক্ষায় মােদির ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’ কর্মসূচীকে টেনে এনে রাহুল গান্ধি টুইটে লেখেন ‘বেটি বাঁচাও, বেটি পড়াও’।

ভারতীয় মহিলাদের জন্য নতুন শিক্ষামূলক বুলেটিন এটা। বিজেপি নেতা আপনাকে ধর্ষণে অভিযুক্ত হলেও কোনও প্রশ্ন তুলবেন না। সেই সঙ্গে রবিবারের ঘটনার মিডিয়া রিপাের্টও তিনি টুইটে। ট্যাগ করেছেন রাহুল।

কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক প্রিয়াঙ্কা গান্ধিও টুইটে ঘটনার তীব্র সমালােচনা করেছেন। টুইটে প্রিয়াঙ্কা গান্ধি প্রশ্ন তুলেছেন, ‘বিজেপির এক বিধায়কের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযােগ উঠেছে। তাদের কাছে ন্যায়বিচার পাওয়া যাবে কী? উন্নাওয়ের ধর্ষিতার গাড়ি দুর্ঘটনায় আহত হওয়ার ঘটনাটি মর্মান্তিক এই মামলায় সিবিআই তদন্ত কত দূর এগিয়েছে? অভিযুক্ত বিধায়ক কেন এখনও বিজেপিতে? নির্যাতিতা ও সাক্ষীদের নিরাপত্তায় গাফিলতির কেন? এই প্রশ্নগুলির উত্তর না পেলে বিজেপি সরকারের কাছে কোনও ন্যয়বিচার আশা করা যায়?

বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও উন্নাওর ঘটনার প্রতিবাদ জানিয়েছেন। উন্নাওর ধর্ষিতার নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার ব্যর্থ বলে অভিযোগ তুলেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গড়ে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

কেন্দ্র সরকারকে বিধে মুখ্যমন্ত্রী সােমবার এক অনুষ্ঠানে জানান, প্রতিদিনই গণপিটুনির মতাে ঘটনা ঘটছে। দেশে ফ্যাসবাদী শাসন চলছে। প্রধানমন্ত্রী দেশের দিকে নজর দিন। উন্নাও গণধর্ষণ ঘটনা প্রকাশ্যে আসে ২০১৮ সালে। চাকরি দেওয়ার নাম করে ২০১৭ সালে জুন মাসে চাকরি দেওয়ার নাম করে ওই তরুণীকে নিজের বাড়িতে ডেকে ধর্ষণ করে উন্নাওর বাঙ্গারমাওয়ের বিজেপি বিধায়ক কুলদীপ সিং সেঙ্গার।

থানায় অভিযােগ জানিয়েও কোনও প্রতিকার হয়নি। ওই তরুণীর বাবাকে থানায় তুলে নিয়ে গিয়ে যায়। উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যােগী আদিত্যনাথের বাড়ির সামনে গায়ে আগুন দিয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন নির্যাতিতা। তারপরেই রহস্যজনকভাবে থানার মধ্যে মৃত্যু হয় নির্যাতিতার বাবা।

অভিযােগ ওঠে কুলদীপের ভাই বিধায়ক অতুল সিং থানার মধ্যে ওই তরুণীর বাবাকে থানায় পিটিয়ে খুন করেন। দেশ জুড়ে প্রতিবাদের চাপে উত্তরপ্রদেশের পুলিশ কুলদীপ সেঙ্গার, অতুল সেঙ্গার এবং তার সহযােগীদের গ্রেফতার করে।

সিবিআই তদন্তের পর ধর্ষণ ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মামলা রুজু করে। তবে কয়েকদিন পর বয়স জনিত ভুয়াে নথিপত্র জমা দেওয়ার অভিযােগে নির্যাতিতা ও তাঁর পরিবারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ।