• facebook
  • twitter
Friday, 5 December, 2025

জঙ্গিদের জন্য বোমা তৈরির অভিযোগে গ্রেপ্তার পরীক্ষার্থী

আজহার দানিশ গত বছর থেকেই রাঁচিতে থাকতে শুরু করেন। পরে এক পাকিস্তানি তাঁকে ভুল পথে নিয়ে যায়।

প্রতিনিধিত্বমূলক চিত্র

রাঁচির ইসলামনগর এলাকার এক নির্জন জায়গায় তাবারক লজ। বাইরে থেকে দেখলে মনে হবে একটি জরাজীর্ণ, ছোটখাটো, অপরিস্কার একটি হোটেল। ভিতরে প্রবেশ করলে চোখে পড়বে ছোট ছোট সংকীর্ণ ঘর, অন্ধকার করিডোর। ঘরগুলির চারপাশে জমাট বাঁধা অন্ধকার। করিডোরের দুপাশের ঘরগুলিতে সস্তা প্লাইউডের দরজা। দরজার সামনে রাখা সারিবদ্ধ জুতো ও চটি। এমনই একটি ছোট ঘরেই চলছিল ভয়ঙ্কর শক্তিশালী বোমা তৈরির কাজ। এক বড়সড় চক্রের পর্দা ফাঁস করেছে দিল্লি পুলিশ এবং ঝাড়খণ্ডের সন্ত্রাস দমন শাখা।

তাবারক লজের ১৫ নম্বর ঘর। দরজার উজ্জ্বল হলুদ রঙে কালো নোংরা ছোপ তার আসল রঙকে ঢেকে দিয়েছে। এই হলুদ দরজার অন্দরেই গত কয়েক মাস ধরে লুকিয়ে ছিল রহস্য।

Advertisement

পুলিশ সূত্রে খবর, সরকারি চাকরিতে নিয়োগের জন্য প্রতিযোগিতামূলক এসএসসি পরীক্ষার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল আজহার দানিশ নামে এক যুবক। রহস্য হল, পরীক্ষার প্রস্তুতি নয়, আসলে ভয়ঙ্কর আইএসআইএস সন্ত্রাসবাদী সংগঠনটির জন্য বোমা তৈরি করছিল ওই যুবক।

Advertisement

দিল্লি পুলিশ দিন কয়েক আগেই অন্য এক জঙ্গি আফতাব কুরেশিকে গ্রেপ্তার করেছিল। কুরেশিকে জিজ্ঞাসাবাদের পরই অন্যান্য রাজ্যে অভিযান চালায় পুলিশ। ফাঁস হয় রাঁচির এই গোপন ঘরের রহস্য।
অবশেষে আফতাবের কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দিল্লি পুলিশ এবং ঝাড়খণ্ডের সন্ত্রাস দমন শাখা যৌথভাবে অভিযান চালিয়ে আজহার দানিশ ও আরও ১২ জনকে গ্রেপ্তার করে। সূত্রের খবর, বোমা তৈরির সঙ্গে জড়িত ছিল একটি সন্ত্রাসবাদী চক্র, যেখানে বোমা তৈরির পাশাপাশি জঙ্গি সংগঠনের জন্য নতুন সদস্য সংগ্রহ করা হতো। জানা গিয়েছে, এই সংগঠনের প্রধান উদ্দেশ্য ছিল, ক্ষমতাসীন বিজেপি দলের প্রবীণ নেতাদের লক্ষ্যবস্তু করা।

দানিশের ঘর থেকে বারুদ ও বোমার পাশাপাশি প্রচুর পরিমাণে পটাসিয়াম নাইট্রেট এবং বাড়িতে তৈরি অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। বিস্ফোরকগুলি এই ঘরে তৈরি করা হয়েছিল এবং তারপরে সুবর্ণরেখা নদীর জলে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পরীক্ষাও করা হয়েছিল। এছাড়াও ঘর থেকে বিভিন্ন আকারের ও বিভিন্ন তীব্রতার বিস্ফোরক উদ্ধার করা হয়েছে।

তদন্তে আরও জানা গেছে, আজহার দানিশ গত বছর থেকেই রাঁচিতে থাকতে শুরু করেন। পরে এক পাকিস্তানি তাঁকে ভুল পথে নিয়ে যায়। তারপর আজহারও একইভাবে অন্যদের দলে টানতে শুরু করেন।
এই নিয়োগ বেশিরভাগই করা হত ‘সিগন্যাল’ মেসেজিং অ্যাপে, যেটি এন্ড-টু-এন্ড এনক্রিপশন দেয়। সেখানে সাধারণ নামের গ্রুপ বানানো হত, যেমন ‘ইন্টার্ন ইন্টারভিউ’ বা ‘বিজনেস আইডিয়া’, যাতে কোনওরকম সন্দেহ না হয়। তহবিল জোগাড় করে সেই টাকায় বোমা বানানোর সামগ্রী কেনা হত। ছুরি আর রাসায়নিক পদার্থ অনলাইন থেকে অর্ডার করা হত এবং আজহারের পাকিস্তানি হ্যান্ডলার তাকে বোমা তৈরি শেখাত।
এছাড়াও অ্যাসিটোন পারঅক্সাইড দিয়ে তৈরি আরও এক ধরনের বোমা বানানো হত, যাকে বলা হয় ‘মাদার অফ সাটান’বা শয়তানের মা। এই ঘরে সেই সব বোমা বানানো, পরীক্ষা এবং মজুত করা হত। তদন্তকারীরা বেশ কিছু অস্ত্রও উদ্ধার করেছে।

এই জঙ্গি চক্রের অন্যান্য সদস্যদের পরিচয়ও পাওয়া গিয়েছে। তারা হল- সুফিয়ান খান, মোহাম্মদ হুজাইফ ইয়ামান এবং কামরান কামরান কুরেশি। সূত্র জানিয়েছে, তারা ধর্মীয় স্থানে হামলার পরিকল্পনাও করেছিল।

Advertisement