• facebook
  • twitter
Tuesday, 29 July, 2025

ভারতীয় বিচার ব্যবস্থার মেরামত প্রয়োজন: বিআর গাবাই

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের মন স্বচ্ছ রাখতে হবে, উন্নত করতে হবে এবং এজন্য আমাদের অবশ্যই সঠিক শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।'

ভারতের বিচার ব্যবস্থা এমন এক চ্যালেঞ্জের সামনে দাঁড়িয়ে যার সমাধান করা দরকার। শনিবার হায়দরাবাদের নালসার বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশ নেন ভারতের প্রধান বিচারপতি বিআর গাবাই। সেখানে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিচারব্যবস্থা সংস্কারের প্রয়োজন রয়েছে। আমি আশা রাখি, দেশের মানুষ এবং আমাদের তরুণ মেধা এই সংকট মোকাবিলায় সামনে এগিয়ে আসবে।’

ভারতীয় বিচারব্যবস্থার বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে গাবাই বলেন, ‘আমাদের দেশে বিচারের প্রক্রিয়া অনেক ক্ষেত্রে কয়েক দশক ধরে চলতে থাকে। আমরা এমন ঘটনা দেখেছি, যেখানে বিচারাধীন হিসেবে কেউ বহু বছর কারাগারে কাটানোর পর নির্দোষ প্রমাণিত হয়েছেন।’ প্রধান বিচারপতি বলেছেন, ‘এমন পরিস্থিতি একবিংশ শতকে মেনে নেওয়া যায় না।’ তবে তাঁর আশা,  দেশের সেরা প্রতিভা, যাঁরা বিচারের ক্ষেত্রে এই ধরনের সমস্যাগুলির মুখোমুখি হচ্ছেন তাঁরা এক্ষেত্রে সাহায্যে এগিয়ে আসবেন।

হায়দরাবাদের জাস্টিস সিটিতে ন্যাশনাল অ্যাকাডেমি অফ লিগ্যাল স্টাডিজ অ্যান্ড রিসার্চ (নালসার) ইউনিভার্সিটি অফ ল-এর ২২তম বার্ষিক সমাবর্তন অনুষ্ঠানে তরুণ আইনজীবীদের এদিন বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন দেশের প্রধান বিচারপতি বিআর গাবাই। প্রধান বিচারপতি বলেন, স্বচ্ছতা এবং নির্ভুল অন্তর্দৃষ্টির সঙ্গে মৌলিক ধারণা স্পষ্ট হতে হবে। তিনি বলেছেন, ‘আইনি পেশা মহৎ, গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু কখনওই সহজ নয় বা কোনও সরল পথ ধরে চলবে এমন নিশ্চয়তা নেই। এই পেশায় ক্রমাগত নিজেকে প্রমাণ করতে হবে আদালতে, আপনার মক্কেলদের কাছে, আপনার সহকর্মীদের কাছে এবং নিজের কাছে। মনে রাখবেন, আইন জানার কোনও শর্টকাট নেই। মৌলিক বিষয়গুলি জানারও কোনও বিকল্প নেই।’ তাঁর মতে, দ্বিতীয় বিষয় হল মেন্টরশিপ, অন্যের অভিজ্ঞতা থেকে শেখা। তরুণ আইনজীবীদের উদ্দেশে তাঁর অনুরোধ, ‘মেন্টর খোঁজো ক্ষমতা দেখে নয়, সততা দেখে। সততাই তোমার আসল দিশা।’

প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, ‘শুধুমাত্র একটি বিদেশি ডিগ্রি আপনার যোগ্যতার ছাপ নয়। আপনার সহকর্মীদের চাপে কোনও সিদ্ধান্ত নেবেন না। বছরের পর বছর ধরে ঋণ, উদ্বেগ, পরিবারের আর্থিক চাপের মধ্যে ক্যারিয়ারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।’ একই সঙ্গে তিনি বলেন, বিদেশে পড়াশোনা করা অনেকেই নতুন আবেগ এবং নতুন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে ফিরে আসেন, কিন্তু যখন তাঁরা ফিরে আসেন, তখন তাঁরা প্রায়শই আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলিকে অবাঞ্ছিত মনে করেন।

প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমাদের মন স্বচ্ছ রাখতে হবে, উন্নত করতে হবে এবং এজন্য আমাদের অবশ্যই সঠিক শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে। সুযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা রাখতে হবে এবং যোগ্যতা-ভিত্তিক সুযোগ দিতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, ভারতের বিচার ব্যবস্থার গবেষণা ও প্রশিক্ষণের মর্যাদা ও উদ্দেশ্য পুনরুদ্ধার করতে হবে।’

তাঁর পরামর্শ, ‘দেশকে কেবল প্রতিষ্ঠানগুলিতে বিনিয়োগ করলে হবে না— নতুন কল্পনা, মেন্টরশিপ প্রোগ্রাম, রিসার্চ ফেলোশিপ, পলিসি ল্যাব এবং কর্মক্ষেত্রে নৈতিকতা গড়ে তুলতে হবে। তবেই আমরা মন থেকে আমাদের সেরাটা দিতে পারব। কারণ আমাদের দেশ এবং আমাদের বিচার ব্যবস্থা এক বিশেষ পরিস্থিতির মুখোমুখি।’

সম্প্রতি দেশের প্রধান বিচারপতি বিআর গাভাই এও স্পষ্ট করে দিয়েছেন যে, সুপ্রিম কোর্টের কাজকর্ম প্রধান বিচারপতিকেন্দ্রিক নয়। বম্বে বার অ্যাসোসিয়েশনের এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্ট প্রধান বিচারপতিকেন্দ্রিক, আমরা এই ধারণা বদলানোর চেষ্টা করছি।’ দেশের সর্বোচ্চ আদালতে নিয়োগের ক্ষেত্রে আরও স্বচ্ছতা বজায় রাখার চেষ্টা হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

এদিনের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে অংশ নেন তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী এ রেভন্ত রেড্ডি এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি পি এস নরসিংহও। তেলেঙ্গানা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সুজয় পল সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন।

প্রসঙ্গত, বিচারপতি গাভাই ১৪ মে ভারতের ৫২তম প্রধান বিচারপতি হিসাবে শপথ গ্রহণ করেন। বিচারপতি গাভাই হলেন দ্বিতীয় দলিত যিনি ভারতের প্রধান বিচারপতি হয়েছেন। তাঁর আগে, প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি কে জি বালাকৃষ্ণন ২০০৭ সালে প্রথম দলিত প্রধান বিচারপতি হন। বালাকৃষ্ণন তিন বছর দায়িত্ব পালন করেছিলেন।