দেশেও রেমডেসিভির প্রয়োগের অনুমতি দিল ডাগ কন্ট্রোল

মে মাসের প্রথমে জরুরি অবস্থার ভিত্তিতে আমেরিকায় কোভিড রোগীদের রেমডেসিভির ওষুধ দেওয়ার অনুমতি দিয়েছিল মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)।

Written by SNS New Delhi | June 4, 2020 4:21 pm

প্রতিকি ছবি (Photo: iStock)

মে মাসের প্রথমে জরুরি অবস্থার ভিত্তিতে আমেরিকায় কোভিড রোগীদের রেমডেসিভির ওষুধ দেওয়ার অনুমতি দিয়েছিল মার্কিন ফুড অ্যান্ড ড্রাগ অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফডিএ)। ভারতে এতদিন রেমডেসিভিরের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ চালিয়েছে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর), যদিও কন্ট্রোলড ট্রায়াল চালানো হয়েছে। তবে সম্প্রতি গিলিয়েড সায়েন্সেসের রিপোর্টের উপর ভিত্তি করে দেশেও কোভিড চিকিৎসায় অ্যান্টিভাইরাল ওষুধ রেমডেসিভির প্রয়োগ করার অনুমতি দিল ড্রাগ কন্ট্রোল।

জরুরি অবস্থার ভিত্তিতে কোভিড রোগীদের রেমডেসিভির ওষুধ দেওয়া যেতে পারে বলে জানিয়েছে দেশের ড্রাগ কন্ট্রোলার জেনারেল ভিজি সোমানি। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রকের যুগ্ম সচিব লব আগরওয়াল বলেছেন, কোভিড সংক্রমণ কমাতে রেমডেসিভির ভাল কাজ করছে বলে জানিয়েছে।

এই ওষুধের নির্মাতা সংস্থা গিলিয়েড সায়েন্সেস ক্লিনিকাল ট্রায়ালে দেখা গেছে এখনও পর্যন্ত কোভিড রোগীদের উপরে এই ওষুধের প্রভাব সন্তোষজনক। দেশেও করোনা চিকিৎসায় জরুরি অবস্থার ভিত্তিতে এই ওযুদ প্রয়োগের অনুমতি দিয়েছে ড্রাগ কন্ট্রোল।

করোনার সংক্রমণ কমাতে সম্ভাবনাময় ওষুধগুলির তালিকায় শুরু থেকেই ছিল ইবোলার প্রতিষেধক রেমডেসিভির। এই ওষুধের প্রথম পর্যায়ের ট্রায়াল শুরু হওয়ার পরেই গিলিয়েড সায়েন্সেসের সিইও ঢানিয়েল ওডে’কে সঙ্গে নিয়ে ওষুধের সুফলের কথা ঘোষণা করেছিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইফেকশিয়াস ডিজিজের ডিরেক্টর ও হোয়াইট হাউসের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ডক্টর অ্যান্থনি ফৌসিও করোনা সারাতে রেমডেসিভিরের উপযোগিতার কথা বলেছিলেন। প্রথম পর্যায়ে এই ওষুধের কন্ট্রোলড ট্রায়াল করেছিল গিলিয়েড সায়েন্সেস।

সেই রিপোর্টে ভাল ফল মেলার পরেই ইউরোপ, আমেরিকা ও এশিয়ার নানা দেশে রেমডেসিভির ওষুধের পরীক্ষামূলক প্রয়োগ শুরু হয়। গিলিয়েড জানিয়েছিল রেমডেসিভির আসলে নিউক্লিওটাইড অ্যানালগ। এই ওষুধের কাজ হল আরএনএ ভাইরাসের প্রতিলিপি তৈরি করে সংখ্যায় বাড়ার ক্ষমতাকে নষ্ট করে দেওয়া।

ইবোলা সারাতে তেমন কার্যকরী প্রভাব দেখায়নি রেমডেসিভির। তবে সার্স ও মার্স ভাইরাস প্রতিরোধে এই ওষুধের অনেকটাই ভূমিকা ছিল। সার্সকভ-২ ভাইরাসের জেনেটিক মিউটেশন জিনের গঠনগত বদল আটকানোর ক্ষমতাও আছে রেমডেসিভিরের এমন সম্ভাবনার কথাও বলেছিল গিলিয়েড সায়েন্সেস।

সম্প্রতি রেমডেসিভিরেরে তৃতীয় পর্যায়ের ট্রায়াল চলছে গিলিয়েডে। সেই ট্রায়ালের প্রাথমিক রিপোর্ট সামনে এনেছে সংস্থা। বলা হয়েছে, কোভিড পজিটিভ রোগী যাঁদের শরীরে সংক্রমণ ছিল মাঝারি মানের, তাদের রেডেসিভির ইনজেক্ট করে ভাল ফল দেখা গেছে। পাঁচদিনের কোর্সে নির্দিষ্ট ডোজে ওষুধ দিয়ে দেখা গেছে সংক্রমণ কমতির দিকে।

এই রোগীদের মধ্যে যাঁদের নিউমোনিয়ার উপসর্গ ছিল, তাঁরা অনেকটাই সুস্থ। গিলিয়েড অবশ্য আগেই জানিয়েছিল, রেমডেসিভির ইজেক্ট করলে রোগীরা তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে উঠছে। পরীক্ষায় দেখা গেছে আগে যেখানে সুস্থ হওয়ার সময় ছিল ১১ দিনের বেশি, সেই সময়ই কমে ৮-১০ দিনে দাঁড়িয়েছে।

গিলিয়েড যদিও দাবি করেছে মাঝারি লক্ষণযুক্ত রোগী বা মাঝারি মানের উপসর্গ দেখা গেছে যাঁদের, ভেন্টিলেটর সাপোর্ট দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি, তাঁদের উপরেই ভাল ফল দেখিয়েছে রেমডেসিভির। অতি সঙ্কটাপন্ন রোগীদের শরীরে এই ওষুধের প্রভাব কতটা পড়বে সেটা এখনও গবেষণার স্তরেই আছে। ট্রায়ালের শেষেই সবিস্তারে সেই রিপোর্ট সামনে আনা হবে।

রেমডেসিভির ওষুধের ট্রায়াল চলছে শিকাগো হাসপাতালেও। শিকাগো ইউনিভার্সিটির সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ক্যাথলিন মুলানে বলেছেন, সুখবর হল হাসপাতালের বেশ কয়েকজন করোনা আক্রান্ত রোগীর উপরে প্রয়োগ করা হয়েছিল এই ড্রাগ। তাঁদের মধ্যে কয়েকজন সংক্রমণ সারিয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন। বাকিদের শারীরিক অবস্থাও অনেকটাই স্থিতিশীল।

ভারতে রেমডেসিভিরের ট্রায়াল প্রথম শুরু করে আইসিএমআর। কম সংখ্যক রোগীদের এই ওষুধ দিয়ে ট্রায়ালের প্রাথমিক রিপোর্টে আইসিএমআর জানায়, এই ওষুধ প্রায় ৬৮ শতাংশ রোগীর শ্বাসের সমস্যা কম করছে। গিলিয়েড সায়েন্সেসের তথ্যের উপর ভিত্তি করেই রেমডেসিভির ওষুধের মূল উপাদান বানানোর কাজ করছে কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ (সিএসআইআর)।

তাদের অধীনস্থ ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব কেমিক্যাল টেকনোলজির ল্যাবরেটরিতে এই ওষুধের উপকরণগুলি বানানোর কাজ চলছে। আইআইসিটি-র ডিরেক্টর ডক্টর শ্রীভারি চন্দ্রশেখর জানিয়েছেন, রেমডেসিভির ওষুধ তৈরির তিনরকম উপাদান পাইরন, ফিউরান ও ফসফেট সংশ্লেষ করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, ভারতেও রেমডেসিভির ওষুধ বানানোর জন্য তিন সংস্থার সঙ্গে চুক্তি করেছে মার্কিন ফার্মা জায়ান্ট গিলিয়েড সায়েন্সেস। সিপলা, হেটেরো ল্যাব ও জুবিল্যান্ট লাইফসায়েন্সেসকে এই ওষুধ তৈরির লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে।